মধ্যবিত্ত তেলেগু পরিবারের মেয়েটির শৈশব-কৈশোরের অনেক বছর কেটেছে মধ্যপ্রাচ্যের সাতটি বিভিন্ন দেশে। বাবা চাকরি করতেন একটি এয়ারলাইন্সে। সেই সূত্রে পুরো পরিবারকে যেতে হয়েছে বিভিন্ন দেশে। স্কুল জীবন শেষ হতেই মেয়েটি পরিবারের সঙ্গে নিজ দেশ ভারতে ফিরে আসে। দিল্লী শহরে নতুন ঠিকানায় থিতু হয় তারা। সেই মেয়েটি এখন ত্রিশ বছরের তরুণী। তার নাম শ্রেয়া ধন্বন্তরি। মডেল হিসেবে সবাই তাকে দেখে এসেছেন ম্যালা এ্যাডে। প্রেস্টিজিয়াসে সব ব্র্যান্ডের জনপ্রিয় অনেক অ্যাডে তার চমৎকার উজ্জ্বল উপস্থিতি ঘরে ঘরে পরিচিত করেছে মেয়েটির নাম। চলতি সপ্তাহে বলিউডে তার অভিষেক হচ্ছে নায়িকা হিসেবে। সোশ্যাল কমেডি ধাঁচের হিন্দী সিনেমা হোয়াই চিট ইন্ডিয়া ছবিতে তাকে দেখা যাবে নায়ক ইমরান হাশমির বিপরীতে। বলিউডে পা রাখতে না রাখতেই ইমরান হাশমির নায়িকা হওয়ার সুযোগ লাভ নতুন নায়িকা শ্রেয়াকে আলোচনা, আগ্রহ, কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে। শ্রেয়া ধন্বন্তরিকে হোয়াই চিট ইন্ডিয়া ছবিতে প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেতে পঞ্চাশ জন মেয়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে আসতে হয়েছে। তবে এটা রুপালি পর্দায় শ্রেয়ার প্রথম উপস্থিতি নয়। ২০১০ সালে তেলেগু সিনেমা ¯েœহা গীতামে প্রথম অভিনয় করেন মডেলিং জগতের ব্যস্ত এই মুখ। শ্রেয়া ধন্বন্তরির বয়স বর্তমানে ৩০ হলেও তরতাজা সেই ভাবটি জনমনে এখনও অটুট রয়েছে। দর্শক তাকে দেখে অনেক প্রেস্টিজিয়াস .ব্যান্ডের পণ্যের এ্যাডে। মডেল হিসেবে নিজের অবস্থানকে ক্রমেই উঁচুর দিকে নিয়ে গেছেন তিনি আপন যোগ্যতায়। একজন গ্রাজুয়েট ইঞ্জিনিয়ার হয়েও গ্ল্যামার অঙ্গনে তার উজ্জ্বল পদচারণা চোখে পড়ছে।
আবার অনেক দিন পর ইমরান হাশমি অভিনীত নতুন কোন সিনেমা দর্শকদের সামনে আসছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় দুর্নীতি, অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, নৈতিকতার অবক্ষয় ইত্যাদি তুলে ধরা হয়েছে হোয়াই চিট ইন্ডিয়া ছবিতে। ইমরান হাশমি এক সময় যে ধরনের সিনেমায় অভিনয় করে আলাদা পরিচিতি এবং জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন এবারের হোয়াই চিট ইন্ডিয়া তার চেয়ে সম্পূর্ণ অন্য রকম। সামাজিক রাজনৈতিক বাস্তবতার আলোকে ছবিটির গল্প চিত্রনাট্য সাজানো হয়েছে। এক মধ্যবিত্ত তেলেগু পরিবারের মেয়ে শ্রেয়ার পারিবারিক ডাকনাম রিয়া। চার বছর বয়স থেকে শ্রেয়ার আগ্রহ অভিনয়কে ঘিরে। শুরু থেকে যদিও মঞ্চনাটক ভারতনাট্যম কথক, কুটিপুরি নাচের তালিম নেয়া শুরু করেছিলেন। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে স্কুলে লেখাপড়া শেষে ১৭ বছর কাটিয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের জন্য ভারত ফেরেন শ্রেয়া পরিবারসহ। দিল্লী শহরে বসবাস শুরু করেন তারা। ২০০৮ সালে প্যান্টালুন মিস ইন্ডিয়া সাউথ প্রতিযোগিতায় অডিশনে অংশগ্রহণ করেন তখন শ্রেয়া ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে থার্ড ইয়ারের ছাত্রী। সেই সুন্দরী প্রতিযোগিতায় প্রথম রানার্সআপ হয়েছিলেন তিনি। একই বছর মিস ইন্ডিয়া সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ফাইনালিস্ট হন। অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে তুলে ধরার আকাক্সক্ষা থেকে শ্রেয়া বিশ্বখ্যাত এলিট ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্মে যোগ দিয়েছিলেন। সেই সময় ভূমি পোডনাকারের সঙ্গে দেখা হলে শ্রেয়াকে মুম্বাই এসে ভাগ্য পরীক্ষার পরামর্শ দেন। দর্শক তাকে মডেল হিসেবে ম্যালা প্রেস্টিজিয়াস এ্যাডে দেখেছেন ইতোমধ্যে। স্যামসাং, ফাস্টট্যাক, এয়ারটেল, স্যান্টালুনস, সাফি, প্রোভোগ, জেগ আইওয়্যার, গীতাঞ্জলী, ডিডামাস, লিবাটি ফুটওয়্যার, ভারত মেট রিমনির জনপ্রিয় এ্যাডে মডেল হিসেবে শ্রেয়ার উজ্জ্বল প্রাণবন্ত, আকর্ষণীয় পর্দা উপস্থিত সবার নজর কেড়েছে অনেক আগেই। মডেলিংয়ে তুমুল ব্যস্ত হলেও ইলেক্ট্রনিক এ্যান্ড কমিউনিকেশন্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে গ্রাজুয়েশন করা সুন্দরী গ্ল্যামারস এই মডেল কন্যা একজন ভাল পড়ুয়া এবং লেখকও বটে। গত ২০১৬ সালে তার লেখা প্রথম উপন্যাস ফেড টু হোয়াইট প্রকাশিত হয়েছে। বড় পর্দায় ঝড় তোলার আগেই শ্রেয়া ধন্বন্তরি সাড়া জাগানো ওযেব সিরিজ দ্য রিইউনিয়নে দেবাংশে টেইলর চরিত্রে অভিনয়ের সুবাদে দর্শকদের কাছে রীতিমতো সেনসেশনে পরিণত হয়েছেন। লেডিস রুম ওয়েব সিরিজেও তাকে দেখা গেছে। আগামীতে দ্য ফ্যামিলি ওয়েব সিরিজে শ্রেয়াকে দেখা যাবে। ওয়েব সেনসেশন থেকে বলিউডে নতুন করে ঝড় তুলতে আসছেন শ্রেয়া ধন্বন্তরি। দেখা যাক, তার ভাগ্যে কী আছে।
