ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ব্রেক্সিট ইস্যু

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ১৮ জানুয়ারি ২০১৯

ব্রেক্সিট ইস্যু

শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থা। ব্রেক্সিট ইস্যু অর্থাৎ ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা না থাকার প্রশ্নে একেবারে লেজেগোবরে অবস্থা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মের। সর্বশেষ সকল জল্পনা-কল্পনা, আলোচনা-সমালোচনা সর্বোপরি তর্ক-বিতর্ক ও ভোটাভুটির পর শেষ পর্যন্ত ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়নেই থেকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন ব্রেক্সিট গণভোটের প্রচারণায় অর্থ সহায়তাকারী ব্যক্তিবর্গ ও গোষ্ঠী। প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে ইইউ থেকে বেরিয়ে যেতে যে খসড়া চুক্তি করেছেন, সেটির ওপর মঙ্গলবার পার্লামেন্টে ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়। ফল ব্রিটেনের পার্লামেন্টে ২৩০ ভোটের বিশাল ব্যবধানে প্রধানমন্ত্রীর থেরেসা মের ব্রেক্সিট চুক্তি বাতিল হয়ে গেছে। অবশ্য অনাস্থা ভোটে তার সরকার টিকে গেছে। অতঃপর যে প্রশ্নটি ব্রিটেনবাসীসহ সমগ্র বিশ্ববাসী মনে করছে তা হলো, চুক্তিহীন ব্রেক্সিট হলে কী হবে? এই চুক্তিতে যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটি হলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে গেলে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে বসবাসরত ব্রিটিশ নাগরিকদের কী হবে? অনুরূপ ব্রিটেনে বসবাসকারী ইউরোপীয়দের! সেসব দেশে ব্রিটিশ ব্যবসায়ী ও কোম্পানিগুলো কি ধরনের সুবিধা পাবে, সেটিও একটি বিষয়। এর পাশাপাশি বের হয়ে যাওয়ার জন্য কত অর্থ ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে খোয়াতে হবে দেশটিকে? সেই পরিমাণ অর্থ ব্রিটেনের দেয়ার সামর্থ্য আছে কিনা, উপেক্ষণীয় নয় সেটিও। উল্লেখ্য, ১৯৭৩ সালে ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হয়েছিল। ২০১৬ সালের জুন মাসে ঐতিহাসিক একটি গণভোটে সে দেশের মানুষজন এই অঞ্চল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। অবশ্য গণভোটের ব্যবধান ছিল সামান্য। এরপর থেকেই ব্রিটেনের রাজনীতিবিদরা বিতর্ক করে চলেছেন ব্রেক্সিট কিভাবে হবে। ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে কি ধরনের বিচ্ছেদে যাবে? এখন আবার অনেকেই নতুন করে গণভোট চাইছেন। পরিবেশ-পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত ‘নো ডিল ব্রেক্সিটের’ পক্ষেই যাচ্ছে। অর্থাৎ ব্রিটেন শেষ পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নেই থেকে যাবে। সে ক্ষেত্রে ইইউর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের থেকে যাওয়া নিয়ে কিছু শর্ত থাকবে বৈকি। সব মিলিয়ে ব্রেক্সিট চুক্তির ভোটাভুটি নিয়ে বিরল এক রাজনৈতিক সঙ্কটে নিপতিত হয়েছে যুক্তরাজ্য। দেশটির পার্লামেন্টে কোন ভোটাভুটিকে কেন্দ্র করে রাজনীতিকদের এমন দৌড়ঝাঁপ ও উত্তেজনার ঘটনা নিকট অতীতে আর দেখা যায়নি। এর আগে ১৯৬৬ সালে লেবার পার্টি হেরেছিল ১৬৬ ভোটের বিশাল ব্যবধানে? যুক্তরাজ্যের সাধারণ মানুষের মধ্যে চুক্তিটি বেশ অপ্রিয় বলে মনে হয়েছে। গত নবেম্বরে চুক্তি সম্পাদনের পর ১১ বার এ বিষয়ে জনমত যাচাই করা হয়েছে। কোনবারই চুক্তির পক্ষে সমর্থন ২৭ শতাংশ অতিক্রম করেনি। অন্য একটি জরিপে প্রতি দশজনে মাত্র একজন এই চুক্তির সমর্থক বলে উঠে এসেছে। চুক্তি প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় পুনরায় নির্বাচন তথা গণভোট এবং জেরেমি করবিনের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মতো সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা। ব্রেক্সিট চুক্তি সম্পাদনে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ইইউ বেশ কৌশলী খেলা খেলেছে। এখন যুক্তরাজ্যের খেলার পালা। চুক্তি পাস না হওয়ায় চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদ এড়াতে ইইউ নতুন করে কোন ছাড় দেয় কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়। এর পাশাপাশি ব্রেক্সিটের অভিজ্ঞতা ও প্রভাব যে ইউরোপের অন্যান্য দেশেও অনিবার্য পড়বে তাতে কোন সন্দেহ নেই। বিশেষ করে গ্রীস, ইতালি, স্পেন ও অন্যত্র তথাকথিত পপুলিস্ট বা জনতুষ্টিবাদী সরকারের যে প্রবল বাতাস বিরাজমান, তারা এ থেকে শিক্ষা নিতে পারে। কেননা, ঐক্যের সুফলের তুলনায় ভাঙ্গনের কুফল সর্বদাই তিক্ত এমনকি বিদ্বেষপূর্ণ হতে পারে।
×