ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান খান

ভরসা শেখ হাসিনাতেই

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ১৮ জানুয়ারি ২০১৯

ভরসা শেখ হাসিনাতেই

৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ আবারও প্রমাণ করল ভরসা শেখ হাসিনাতেই। জাতীয় নির্বাচন ২০১৮ ঘিরে নানা ঘটনা ঘটেছে। হয়েছে জাতীয়-আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। প্রথমে নস্যাৎ করার অপচেষ্টা, পরে অংশগ্রহণমূলক করে প্রতিদিন নানা নাটকের অবতারণা, বিদেশী কূটনীতিকদের কাছে ধরনা। অবশেষে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তার সুপরিকল্পনা, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও কৌশল, দৃঢ়তার মধ্য দিয়ে দেশকে আরেকটি শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উপহার দিলেন। বিজয় হলো গণতন্ত্রের, বিজয় হলো শেখ হাসিনার, বিজয় হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার, বিজয় হলো উন্নয়নের, বিজয় হলো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির। এ নির্বাচনে দেশে অনেক নতুন ধারার সংযোজন হয়েছে। রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, পেশাজীবী সংগঠন, শিল্পী-সাহিত্যিক, কবিসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের প্রচারে অংশগ্রহণ ছিল চমক লাগানো। কারণ, সকল সচেতন, প্রগতিশীল মানুষ অনুভব করেছিল এ নির্বাচনী লড়াই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এ লড়াই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শক্তির সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির। সে কারণে এবার পরাজয় মেনে নেয়ার কোন সুযোগ নেই, সুযোগ নেই ন্যূনতম গাফিলতির, অসতর্কতার। আমরা পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ থেকেও দেশব্যাপী তৎপর ছিলাম সভা-সমাবেশ, জনসংযোগ, লিফলেট বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচী নিয়ে। আমরা দুটো স্লোগান নির্ধারণ করেছিলাম। ১. বিপুল উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং স্বাধীনতা বিরোধীমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে দেশরতœ শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থীকে ভোট দিন। ২. মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ভোট দিন, স্বাধীনতাবিরোধী ও সহযোগীদের বর্জন করুন। প্রচারের অংশ হিসেবে ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে জাতীয় শহীদ মিনারে আমরা পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের উদ্যোগে ‘বুদ্ধিজীবী পেশাজীবী সমাবেশ’ ডেকেছিলাম। সেদিন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, পেশাজীবী-নারী নেত্রী, তরুণ প্রজন্ম, মুক্তিযোদ্ধা সকলে উপস্থিত দিলেন। এসেছিলেন অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি অসুস্থ শরীর নিয়ে সময়ের প্রয়োজন অনুভব করে। সবাই এক সুরে আওয়াজ তুলেছিলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ভোট দিন, স্বাধীনতা বিরোধী ও সহযোগীদের বর্জন করুন।’ এ নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মূল শক্তি ছিল শেখ হাসিনার জাতীয়-আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি এবং বঙ্গবন্ধুর নৌকা। দেশের মানুষ এতেই অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে। জেগে উঠেছিল গোটা বাংলাদেশের মানুষ শেখ হাসিনার পক্ষে। তারা রায় দিয়েছে বাংলাদেশে চতুর্থ বারের মতো শেখ হাসিনার প্রতি তাদের আস্থা, বিশ্বাস আর নিরাপত্তার। শেখ হাসিনা ১৯৮১ থেকে নিরন্তর লড়াই-সংগ্রাম করে জনগণের আস্থা অর্জন করে ভোটের মাধ্যমে যতবার ক্ষমতায় এসেছেন ততবারই প্রমাণ করেছেন তিনি এবং তাঁর দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নয়ন হয়, কল্যাণ হয় দেশের মানুষের। এখন বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশের কোন আনাচে-কানাচে খোঁজ পাওয়া যাবে না মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে আছে। দেশের মানুষ আনন্দে, উৎসবে-পার্বণে পরিবার পরিজন নিয়ে ভাল আছে। শিশুরা নিরাপদে স্কুলে যাচ্ছে-পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে আনন্দে হৈ-হুল্লোড় করছে। বাংলাদেশ একটি মনোমুগ্ধকর দেশ যেমন একদিকে, অন্যদিকে এর রাজনীতি জটিল এবং রক্তক্ষয়ী। এটিই সম্ভবত বিশ্বের একমাত্র দেশ যেটি দুবার স্বাধীন হয়েছে। আমাদের পূর্বসূরিরা তিনবার জাতীয়তা পেয়েছিলেন। দুবার স্বাধীন হওয়ার কারণে এ ভূ-খ-ের ধারাবাহিকতা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে, উলট-পালট হয়েছে সমাজ-অর্থনীতি-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য, ইতিহাস। আত্মত্যাগের হিসাব বিশ্বের অন্যতম। পাশাপাশি ভারত ৪৭-এ স্বাধীন হলেও তাদের দেশের অর্থনীতি, সামাজিক কাঠামো-ধারাবাহিকতা খুব একটা ব্যাহত হয়নি। ৪৭-এর পর এ ভূ-খ- আগের চেয়ে বেশি শোষিত-বঞ্চিত নির্যাতিত হয়েছে- সে কারণে স্বাধিকার এবং পরে স্বাধীনতার সংগ্রাম দানা বেঁধে ওঠে। মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত, দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমই শেষ নয়, স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। হত্যা করা হয়েছে জাতীয় চার নেতাকে, ঘটানো হয়েছে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, শেখ হাসিনাকে ১৯ বার হত্যা করার চেষ্টা, অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি, স্বাধীনতা বিরোধীদের পুনর্বাসন এবং ক্ষমতাগ্রহণ। জাতির পিতার শোক দিবসে পালিত হয় বিএনপি প্রধানের ভুয়া জন্মদিন। একটি স্বাধীন দেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটার কথা নয়, ভাববার কথা নয়। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বুকের ভেতর কষ্টের পাথর বেঁধে ১৯৮১-এর ১৭ মে থেকে জীবনের সকল ঝুঁকি নিয়ে জীবনের সকল চাওয়া-পাওয়া, বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে দেশটিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার জন্য, একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন করার জন্য নিরন্তর লড়াই করে চলেছেন। বার বার চেষ্টা করেছেন মুক্তিযুদ্ধের সকল শক্তিকে ঐকবদ্ধ করার জন্য, গণতন্ত্রের স্বার্থে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি বাদ দিয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করেছেন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনা করেছেন। ’৯১-এর নির্বাচনের অবিশ্বাস্য পরাজয়ের পরও বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করে সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছেন। ২০০০ সালে জাতীয় নির্বাচন কমিশন গঠন করার জন্য তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সরাসরি টেলিফোন করেছিলেন। ২০০১-এর পর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তিকে ঐকব্যদ্ধ করেছেন। ১/১১ এর পর জেলখানায় থেকেও বিএনপি প্রধানের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ২০০১-এর ১ অক্টোবরের নির্বাচনের পর থেকে বিএনপি-জামায়াত সরকার গোটা দেশে আওয়ামী লীগ কর্মীদের নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন করেছে ২০০৬ সাল পর্যন্ত। অন্যদিকে জাতির বৃহত্তর স্বার্থে ২০০৮ এর ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দিলেন কোন আনন্দ মিছিল করা যাবে না। এত নির্যাতনের পরও কোন প্রতিশোধ নেয়া যাবে না। বাংলাদেশে কোথাও কোন সংঘর্ষ হয়নি, হয়নি বিরোধী কর্মীদের ওপর কোন আক্রমণ। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সরাসরি টেলিফোনে আহ্বান জানালেন নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার জন্য- অশালীনভাবে প্রত্যাখ্যাত হলেন। বিরোধীদলীয় নেত্রীর ছোট সন্তান ইন্তেকাল করার পর সমবেদনা জানাতে গেলে অসম্মানিত হয়ে ফিরে এলেন বাড়ির ফটক দেখে। সর্বশেষ এবার জাতীয় নির্বাচনের আগে গণতন্ত্রের স্বার্থে সকল দলের সঙ্গে সংলাপ করলেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন- যার ফলেই বইতে শুরু করেছিল নির্বাচনী সুবাতাস। এ সংলাপে অসামান্য কৃতিত্ব দেখিয়েছেন শেখ হাসিনা। ’৭৫-এর পর জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য শেখ হাসিনা ব্যতীত আর কোন নেতার কোন উদ্যোগ গ্রহণের নজির নেই। অথচ নানা প্রতিকূলতায় দেশের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে এ ধরনের উদ্যোগ বার বার গ্রহণ করেছেন। রাজনীতিতে ঝড়-তুফান-মৃত্যুকূপ পেরিয়ে, তিনবার দেশ পরিচালনার মধ্যে শেখ হাসিনা এখন বিশে^র অন্যতম রাষ্ট্রনায়ক, প্রভাবশালী, অভিজ্ঞ মেধাবী নেত্রী। তার দেশপ্রেম, সততা, যোগ্যতা প্রশ্নাতীত। দিয়েছিলেন রূপকল্প ২০২১, দিয়েছেন উন্নত বাংলাদেশের পরিকল্পনা ২০৪১, ডেল্টা প্লান ২১০০। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল কেন সেটা দেশবাসী এবং বিশ^বাসী জেনে গেছে। সাম্প্রতিককালে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে ১১ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে অনুষ্ঠিত বিশ^ব্যাংক এবং আইএমএফের যৌথ বার্ষিক সভার প্রতিবেদনে ঘোষণা করা হয়েছে অর্থনৈতিক সূচক, মানব উন্নয়ন সূচক এবং সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ এখন পাকিস্তান এবং ভারতের চেয়ে এগিয়ে। ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮ এর ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বৈশি^ক জেন্ডার সমতা প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে- চার ক্ষেত্রে বিশে^ সবার সেরা বাংলাদেশ। ৯ জানুয়ারি ২০১৯ বুধবার যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিট প্রকাশ করেছে গণতন্ত্রের সূচকে চার ধাপ অগ্রগতি বাংলাদেশের। আমরা বার বার বলি, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য, বাংলাদেশকে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিমুক্ত করার জন্য, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার জন্য, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন করার জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নেই। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যেমন একদিকে বিপুল বিজয় হয়েছে অন্যদিকে মানুষের প্রত্যাশা বেড়েছে বহুগুণে। এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য দেশের মানুষ ভরসা রেখেছে শেখ হাসিনার ওপর। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক মহল বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে নির্বাচনে জয়যুক্ত হওয়ার জন্য শুভেচ্ছা ও সমর্থন জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য বাংলাদেশ এখন স্বস্তিকর, আকর্ষণীয় দেশ। বৈশি^ক ভূ-রাজনীতিতে বাংলাদেশ সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ দেশ। শেখ হাসিনা দক্ষিণ এশীয়, এশীয়, দ্বিপাক্ষিক এবং বৈশি^ক কূটনীতিতে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছেন নিজের দেশের স্বার্থ সমুন্নত রেখে। অতীতে সব ইশতেহারের প্রায় অধিকাংশ বাস্তবায়ন করেছে আওয়ামী লীগ সরকার, এই ধারাবাহিকতায় বর্তমান আরেক স্বপ্নের ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ ইশতেহারে আস্থা রেখেছে দেশের মানুষ। এমনি এক পরিস্থিতিতে আগামী দিনের জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। সকল প্রত্যাশা পূরণে তাঁকেই নিতে হবে উদ্যোগ, গ্রহণ করতে হবে সময়োচিত পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের পথ। ১. জাতীয় ঐক্য- যে কোন পরিস্থিতিতেই রাজনীতি এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বকে উর্ধে তুলে ধরে রাখতে হবে। রাজনৈতিক দল এবং নেতৃত্ব নিয়ে অনেক সমালোচনা থাকতে পারে, তারপরেও এ ভূ-খ-ে যা কিছু অর্জন সবই রাজনীতির ফসল। ষাট দশক এ ভূ-খ-ের সকল ক্ষেত্রের বিকাশের দশক। বাঙালী জাতীয়তাবাদকে বুকে ধারণ করে আইয়ুব-ইয়াহিয়া শাহীর বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ফুল ফুটেছে সকল ক্ষেত্রেÑ ছাত্র রাজনীতি, জাতীয় রাজনীতি, শিক্ষা, শিল্প-সাহিত্য-কবিতা, সংস্কৃতি-সামাজিক জীবনযাপন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এবং সমন্বয়ে সকল প্রগতিশীল শক্তি যুগপৎভাবে কাজ করেছেন সকল ক্ষেত্রে। সুদৃঢ় সমন্বয় ছিল রাজনীতি-শিক্ষা-সংস্কৃতি-সমাজ ব্যবস্থার সঙ্গে। তারই ফলশ্রুতিতে ধাপে ধাপে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা। এখন মুক্তিযুদ্ধের মতো সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার দায় পড়েছে তাঁরই কন্যা শেখ হাসিনার ওপর। মুক্তিযুদ্ধের সময় যে রকম সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ঐক্যবদ্ধ ছিল- ছিল না কেবল কিছু দালাল রাজাকার, সেরকম স্বাধীনতাবিরোধী চক্র বাদে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করা এখন সময়ের দাবি। তরুণ প্রজন্ম স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর স্বাধীন বাংলাদেশে স্বাধীনতা বিরোধীদের রাজনীতি করার, সংগঠন করার অধিকার দেখতে চায় না। ত্রিশ লাখ শহীদের বাংলাদেশে রাজনীতি হতে হবে কেবল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে। এ জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে বর্তমান দেশের প্রেক্ষাপটে কেবল বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। ২. দেশপ্রেম উদ্বুদ্ধকরণ : বর্তমান বিশ্বের ডামাডোলে তরুণ প্রজন্ম স্বাভাবিকভাবেই আধুনিক আন্তর্জাতিক ডিজিটাল জীবন যাপনে অভ্যস্ত হবে এটাই স্বাভাবিক। এর মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম, সামাজিক-সাংস্কৃতিক কার্যক্রম এবং রাজনৈতিক কার্যক্রমের প্রতিটি পর্যায়ে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধুকরণের বিশেষ কর্মসূচী থাকতে হবে। নতুন প্রজন্ম যে দেশের বিষয়ে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আগ্রহী গণজাগরণ মঞ্চসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা তার স্বাক্ষর রেখেছে। ৩. সুশাসন প্রতিষ্ঠা : আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য চাই দক্ষ জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা এবং প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে গড়ে তুলতে হবে সৎ, দেশপ্রেমিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পাশাপাশি দক্ষ, সেবামুখী ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন থাকতে হবে। দেশের সকল ক্ষেত্রে নিবিড় পর্যবেক্ষণের দুর্বলতা কাটিয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সুশাসন প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত হলেই সকল ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত পরিবেশ সৃষ্টি হবে। ৪. দুর্নীতি দমন : শেখ হাসিনা সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। নিরপেক্ষতার সঙ্গে দুর্নীতির বিরুদ্ধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সামাজিক জীবন অনেক সুস্থ হয়ে উঠবে। ৫. স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করণ : কোন দেশেই স্থানীয় সরকার শক্তিশালী না করে উন্নত হয়নি। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসন করে বাস্তব সময়োপযোগী পরিকল্পনা গ্রহণ করে সকল স্থানীয় সরকার কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়ন করা জরুরী। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২১টি অঙ্গীকারসহ ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শিরোনামে যে ইশতেহার ঘোষণা করেছে জনগণ ভোটের মাধ্যমে তাতে সমর্থন জানিয়েছে। আমাদের বিশ^াস শেখ হাসিনার সরকার তা বাস্তবায়নে আন্তরিক এবং সচেষ্ট হবেন- পূর্বের ইতিহাস তাই বলে। দেশে যোগ্য, দক্ষ, সৎ লোকের অভাব নেই। সুবিধাবাদীদের সরিয়ে তাদের ব্যবহারেরও সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। ঐতিহাসিকভাবেই পেশাজীবী সামাজিক- সাংস্কৃতিক সংগঠনের রয়েছে দেশ গঠনে, মুক্তিযুদ্ধে- গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ২০০৫ সালের ৩০ এপ্রিল শেখ হসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের সকল রাজনৈতিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রচেষ্টা উল্লেখযোগ্য। এখন সময় শেখ হাসিনার। এখন সময় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের। এখন সময় উন্নয়নের। এখন সময় দেশ গড়ার। এখন সময় তারুণ্যের, এখন সময় জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার। সকল ক্ষেত্রে সৎ, দেশপ্রেমিক, মেধাবী, যোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয় ঘটিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে চূড়ান্ত লড়াই শুরু করবেন- শেখ হসিনার প্রতি রয়েছে দেশের মানুষের সেই আস্থা এবং ভরসা। যুগে যুগে, দেশে দেশে, একজন নেতা বিপ্লবে সফল নেতৃত্ব দিয়েছেন, দেশকে উন্নয়নের শিখরে নিয়ে গেছেন। বাংলাদেশে এখন শেখ হাসিনা হচ্ছেন সেই নেতা। তাঁকে সকলের সহযোগিতা করা উচিত, প্রয়োজনে গঠনমূলক সমালোচনা করা উচিত। ঐক্যবদ্ধ বাঙালী জাতিকে কেউ দাবাইয়া রাখতে পারেনি, পারবে না। লেখক : সাবেক উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
×