ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ওয়াশিংটনের কাছে বাণিজ্য সুবিধা চাইবে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ১৮ জানুয়ারি ২০১৯

ওয়াশিংটনের কাছে বাণিজ্য সুবিধা চাইবে বাংলাদেশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ উন্নয়নের গতি অব্যাহত রাখতে ওয়াশিংটনের কাছে ঢাকা আরও বাণিজ্য সুবিধা ও জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ চাইবে। আগামী ২২ জানুয়ারি ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এই সহযোগিতা চাইবে ঢাকা। বৈঠকে ঢাকার পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করবেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক এবং ওয়াশিংটনের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করবেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি ডেভিড হ্যালি। কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, সদ্য অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচ, রোহিঙ্গা সঙ্কট, বাণিজ্য, জ্বালানি, বিনিয়োগ, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল, প্রতিরক্ষাসহ একাধিক খাত নিয়ে আগামী বৈঠকে আলোচনা হতে পারে। ঢাকার কূটনীতিকরা বলছেন, এবারের বৈঠকে কোন ইস্যুর ওপর গুরুত্ব দেয়া হবে, তা নির্ভর করবে ওয়াশিংটনের ওপর। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব ইস্যুতেই আলোচনা করতে ঢাকার শতভাগ প্রস্তুতি রয়েছে। তবে ঢাকার পক্ষ থেকে বাণিজ্য ও জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের ওপর গুরুত্ব দেয়া হবে। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের ঢাকা কী কী সুবিধা দিচ্ছে, তা উপস্থাপন করে যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারী বিনিয়োগ আকর্ষণের চেষ্টা চালাবে ঢাকা। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রস্তুত করছে বাংলাদেশে। এরই মধ্যে ভারত, চীনসহ একাধিক দেশ এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলের সুবিধা নিচ্ছে। বৈঠকে সুযোগ পেলে ঢাকা ওয়াশিংটনকে এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের সুবিধা নেয়ার প্রস্তাব দেবে। পাশাপাশি জ্বালানি খাতে যুক্তরাষ্ট্রকে আরও বিনিয়োগের জন্য ঢাকার পক্ষ থেকে উৎসাহ দেয়া হবে। একাধিক কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, এবারের বৈঠকে সুশাসন, বিশেষ করে সদ্য অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচন এবং এই নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগের ওপর জোর দেবে ওয়াশিংটন। এর আগে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন, পোশাক খাতের সুশাসনসহ একাধিক বিষয়ে সরকারের সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছে ওয়াশিংটন। তাই এবারের বৈঠকে এসব বিষয় আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ঢাকার কূটনীতিকরা বলছেন, সুশাসন ও নির্বাচন বিষয়ে আলাপ করার জন্য যথাযথ প্রস্তুতি রয়েছে ঢাকার। বাংলাদেশের ইতিহাসে একাদশ সংসদ নির্বাচন একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে। কারণ এর আগের নির্বাচনে কখনও এত কম সহিংসতা হয়নি। এছাড়া এবারের নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণও ছিল। বৈঠকে নির্বাচনের এই তথ্যগুলো পরিসংখ্যানসহ ওয়াশিংটনকে জানাবে ঢাকা। অন্যদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনের নেয়া ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশলে (ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি) সমমনা দেশ বাংলাদেশ, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতকে সঙ্গে নিয়েই বাস্তবায়ন করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশও এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থন জানিয়ে এসেছে। যদিও এই ইস্যুতে এখনও দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক কোন রফা হয়নি। ঢাকার কূটনীতিকরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের নেয়া ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশলে বাংলাদেশ কীভাবে যুক্ত হতে পারে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য অনেক আগেই ওয়াশিংটনের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। তবে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে এখনও বিস্তারিত জানানো হয়নি। এর আগে গত অক্টোবরে ঢাকা সফরে এসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সিপাল উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিস ওয়েলস জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশলকে সমর্থন করায় এরই মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশকে ৪ কোটি ডলার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ওই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সিপাল উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিস ওয়েলস বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আন্তর্জাতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে নতুন একটি আইনের ঘোষণা দিয়েছে। এই আইনের অধীনে এই অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য ৬০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা দেয়া হবে। এসব কিছুই করা হচ্ছে এই অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য। আমরা সবাই মিলে এই কৌশলকে (ইন্দো-প্যাসিফিক) সফল করতে চাই। তার মানে এই নয় যে, এই কৌশল চীনের নেয়া উন্নয়ন কৌশলের (বেল্ট এ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ) পাল্টা জবাব। এই অঞ্চলের উন্নয়নে চীনের নেয়া ভূমিকা খুবই জটিল। আর ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল বাস্তবায়নের জন্য আগামী ১০ বছরে শুধু অবকাঠামো উন্নয়নের জন্যই ব্যয় করতে হবে ২৬ ট্রিলিয়ন ডলার, যা একক কোন দেশের পক্ষে সম্ভব নয়।’ ঢাকার কূটনীতিকরা বলছেন, ওয়াশিংটনের বিভিন্ন খাতে ঢাকার যেসব সুবিধা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে, তার শতভাগ আদায়ের চেষ্টা চালানো হবে। এই প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেন, ‘ওয়াশিংটনের বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব প্রতিনিধিত্ব করবেন।’ বৈঠকে সদ্য অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন নিয়েই বেশি আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও তিনি জানান।
×