ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সবুজে সাজবে বরেন্দ্র

পরিবেশ রক্ষায় রোপণ করা হচ্ছে তাল ও খেজুর গাছ

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ১৮ জানুয়ারি ২০১৯

পরিবেশ রক্ষায় রোপণ করা হচ্ছে তাল ও খেজুর গাছ

ডি.এম তালেবুন নবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ প্রচ- খরাপ্রবণ বৃহত্তম বরেন্দ্র অঞ্চলের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এবার আগাম কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। তাল ও খেজুর গাছ রোপণের জন্য ইতোমধ্যেই কাজ শুরু হয়ে গেছে। বিশেষ করে তানোর ও গোদাগাড়ীর বিভিন্ন এলাকায় ২ কোটি খেজুর বীজ ও ১৫০ হাজার তাল বীজ রোপণ করা হয়েছে। এই খরাপ্রবণ এলাকায় মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য এ অঞ্চলের দলমত নির্বিশেষে সবশ্রেণীর মানুষকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন ইউপি, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভাসহ জাতীয় সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। বরেন্দ্র অঞ্চলে ধীরে ধীরে বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ উজাড় হয়ে যাওয়ার কারণে প্রাকৃতিক ভারসাম্য হারিয়ে একদিকে বেড়ে গেছে বজ্রপাত অপরদিকে বৃষ্টি কমে গেছে। যার কারণে এবার আমন মৌসুমে বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির অভাব দেখা দেয়। যার কারণে বহু জমি পতিত থাকে। যারাও বিভিন্ন সেচের মাধ্যমে আবাদ করেছিল তারা খরার কারণে পৌঁছতে পারেনি আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রায়। তাই বরেন্দ্র অঞ্চলকে মরুকরণের হাত থেকে রক্ষার জন্য ১৯৯০ সাল থেকে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী হাতে নিয়ে সরকারী রাস্তা, পুকুর, খাড়ির দুই ধার ও আবাদী জমির আইলে এবং খাস জমিতে বিপুল পরিমাণ গাছ লাগিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। গত ২৫ বছরে তারা কয়েক কোটি গাছ লাগিয়ে বনায়নের চেষ্টা করে আসছে। ব্যাপক বন উন্নয়নের কারণে প্রচ- খরার হাত থকে রক্ষাসহ বৃহত্তম বরেন্দ্র অঞ্চলে একটি সুন্দর পরিবেশের সৃষ্টি হলেও বনোন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দুর্নীতির কারণে গাছ রক্ষণাবেক্ষণে বড় ধরনের অবহেলায় বহু গাছ নষ্ট হয়ে যায়। যা পরে খুবই কম মূল্যে বিক্রি করা হয়। গাছ রক্ষনাবেক্ষণের অভাবে বহু গাছ চুরি হয়ে যায়। শুধু গোদাগাড়ী অঞ্চলে ৫ লাখ বনজ গাছ নষ্ট হয়েছে। ফলে আবার বৃষ্টিপাত কমে ১৯৯০ সালের আগের বরেন্দ্র অঞ্চল সৃষ্টি হতে চলেছিল। অতীতে বরেন্দ্র ভূমিতে শুধু তাল ও খেজুর গাছ থাকায় তেমন বৃষ্টিপাত হয় না। সরকার বরেন্দ্র ভূমি রক্ষায় ১৯৮৫ সালের দিকে গভীর নলকূপ বসিয়ে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে জমিতে সেচ দেয়ার কারণে ব্যাপক হারে ফসল উৎপাদন শুরু হয়। বেশি বৃষ্টিপাতের আশায় বিএমডিএ রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলাই বরই, মেহগনি, কড়াই, পাকড়, তেঁতুল, শিশা, তাল ও খেজুরগাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ করা শুরু করে। কিন্তু গাছ রোপণের থেকে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ২০০১ সাল থেকে চুরি হওয়া শুরু হয়। পাশাপাশি বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় ব্যাপকভাবে ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহারে। ফলে ডিপে পানি কমে আসে। সরকার বিষয়টি অনুধাবন করে ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহারে কৃষকদের অনুৎসাহিত করতে থাকে। তার বদলে বিভিন্ন পুকুর, ক্যানেল ও নদীর পানি নানান বৈজ্ঞানিক ফর্মুলার মাধ্যমে ব্যবহার শুরু করে। ফলে চাষীরা অনেকাংশ ভূ-উপরস্থ পানির ব্যবহার বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু জটবাঁধে, বরেন্দ্রতে বেড়ে যায় বজ্রপাত। কৃষক বরেন্দ্র অঞ্চলে নামা প্রায় বন্ধ করে দিলে, সরকার এগিয়ে আসে। এবার শুরু হয় তাল ও খেজুর গাছ লাগানোর মহাপরিকল্পনা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিএমডিএ ৫ হাজার তাল গাছের বীজ রোপণ করেছে। এছাড়াও তিন জেলার প্রতি উপজেলা কর্তৃপক্ষ বরেন্দ্র অঞ্চলে পৃথক পৃথকভাবে ৫০ হাজার করে তালগাছের বীজ রোপণ করেছে। এই দায়িত্ব নিয়েছে উপজেলা কর্তৃপক্ষ। তাদের এসব কাজে বিভিন্ন জেলার হর্টিকালচার সেন্টার, আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণাগার, বিএডিসি সহযোগিতা করছে।
×