ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বৈঠকে যায়নি বিএনপি

ভাঙ্গনের মুখে ঐক্যফ্রন্ট

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ১৮ জানুয়ারি ২০১৯

ভাঙ্গনের মুখে ঐক্যফ্রন্ট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক বর্জন করেছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের মতিঝিল চেম্বারে তার সভাপতিত্বে জোটের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও তাতে যোগ না দিয়ে জোটের অনৈক্যের বিষয়টি জানান দিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জোট গঠনের পর এই প্রথম বিএনপির কোন প্রতিনিধি বৈঠকে যাননি। এ অবস্থার অবসান না হলে জোট ভাঙ্গার সম্ভাবনা রয়েছে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছে। এদিকে ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে ৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে জাতীয় সংলাপ করার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংলাপ করবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ৩০ ডিসেম্বর যে নির্বাচন হয়েছে তাতে জনগণের অংশগ্রহণ ছিল না। এই নির্বাচন বাতিলের দাবিতে ঐক্যফ্রন্ট আন্দোলন চালিয়ে যাবে। আন্দোলনে সব মানুষের অংশগ্রহণের অংশ হিসেবে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, অবস্থান কর্মসূচী পালনের কথাও ভাবছে ঐক্যফ্রন্ট। এছাড়া নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলার প্রক্রিয়াও চলছে। এ সময় গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, সংলাপে ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে যেসব দল অংশ নিয়েছে তাদের সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। তবে জামায়াতকে আমন্ত্রণ জানানো হবে না। জানা যায়, বিএনপির দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী জামায়াত নিয়ে ড. কামাল হোসেনের নেতিবাচক বক্তব্যের পর এতদিন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অনৈক্যের বিষয়টি চাপা থাকলেও বৃহস্পতিবার বিএনপির বৈঠক বর্জনের মধ্য দিয়ে এ অনৈক্যের বিষয়টি প্রকাশ্য রূপ পায়। এ পরিস্থিতিতে যে কোন দিন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে ভাঙ্গন হতে পারে বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে জল্পনাকল্পনা শুরু হয়েছে। বুধবার বিকেল ৪টায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিএনপির কেউ এ বৈঠকে যাওয়ার বিষয়ে সম্মতি না দেয়ায় ওইদিন বৈঠকটি স্থগিত করা হয়। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় আবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক ডাকা হয়। বিকেল ৪টায় জোটের স্টিয়ারিং কমিটির নেতারা ড. কামাল হোসেনের মতিঝিল চেম্বারে গেলেও বিএনপির জন্য অপেক্ষা করে বৈঠক শুরু করা হয় বিকেল ৫টায়। প্রায় একঘণ্টা পর বৈঠক শেষ হয়। বৈঠকে অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হলেও বিএনপির না যাওয়া প্রসঙ্গটিই বেশি প্রাধান্য পায় বলে জানা যায়। বৈঠকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর কর্মকৌশল নির্ধারণ এবং জাতীয় সংলাপের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, নির্বাহী সভাপতি এ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ঐক্যফ্রন্টের নেতা সুলতান মোহাম্মাদ মুনসুর, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ জাফরউল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ। বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকীও অংশ নেননি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ভরাডুবির পর বিভিন্ন মহল থেকে মন্তব্য করা হয়, এ জোটে জামায়াত থাকায় তাদের শোচনীয় পরাজয় হয়েছে। জামায়াতকে জড়িয়ে ড. কামাল হোসেনেরও সমালোচনা করে কোন কোন মহল। এমন পরিস্থিতিতে ১২ জানুয়ারি রাজধানীর মতিঝিলে গণফোরামের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জামায়াতের সঙ্গে ঐক্য করে ভুল হয়েছে বলে মন্তব্য করে। এ দলের সঙ্গে আর রাজনীতি করবেন না বলে জানান গণফোরাম সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, জামায়াতের সঙ্গে কখনও রাজনীতি করিনি, ভবিষ্যতেও করব না। এক প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল বলেন, আমি যখন ঐক্যে সম্মতি দিয়েছি তখন জামায়াতের কথা আমার জানা ছিল না। এটা ঐক্যফ্রন্ট গঠনে ভুল ছিল। এছাড়া তড়িঘড়ি ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে যেসব ভুলত্রুটি হয়েছে তা সংশোধন করা হবে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, জামায়াতের ২২ প্রার্থীকে ধানের শীষ প্রতীক দেয়ার বিষয়টি আমি জানতাম না। দেয়ার পর বিএনপির কাছে আমি ব্যাখ্যা চেয়েছিলাম। তারা বলেছেন, সবাই ধানের শীষের প্রার্থী এখানে জামায়াতের কেউ নেই। বিএনপিকে জামায়াত ছেড়ে আসতে চাপ সৃষ্টি করা হবে কিনা সে বিষয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, আমি তো মনে করি, জামায়াত ছেড়ে আসতে বিএনপিকে চাপ দেয়া যেতে পারে। বিএনপির সঙ্গে জামায়াত থাকলে ভবিষ্যতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থাকবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, জামায়াত নিয়ে কোন রাজনীতি নয়, অবিলম্বে এ বিষয়ে সুরাহা চাই। সংবাদ সম্মেলন করে জোটে জামায়াত থাকা প্রসঙ্গে ড. কামাল হোসেনের বক্তব্যের পর জামায়াত নেতারা বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। এর ফলে ড. কামাল হোসেনের বক্তব্যকে সহজভাবে নিতে পারেনি বিএনপি হাইকমান্ডও। তাই বিএনপি নেতারাও ড. কামাল হোসেনের ওপর ক্ষুব্ধ হয়। এ পরিস্থিতিতে কয়েকদিন ধরে উভয়ের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করলেও বৃহস্পতিবার ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক বর্জন করে তাদের দলীয় অবস্থান পরিষ্কার করে বিএনপি। জানা যায়, প্রকাশ্যে সংবাদ সম্মেলন করে দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী জামায়াত সম্পর্কে ড. কামাল হোসেনের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার বিষয়টিকে সহজভাবে নিতে পারেনি বিএনপি। এ জন্যই ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে দলের সিনিয়র নেতাদের মনোমালিন্য হয়। এর প্রতিফলন ঘটায় বৃহস্পতিবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক বর্জনের মধ্য দিয়ে।
×