ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আখাউড়ায় আইনমন্ত্রী

যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াফতের আইন চূড়ান্ত পর্যায়ে

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ১৮ জানুয়ারি ২০১৯

যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াফতের আইন চূড়ান্ত পর্যায়ে

বিডিনিউজ ॥ একাত্তরে যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াফত করার জন্য আইনী কাঠামো তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন-বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক। বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া রেলস্টেশনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারের সম্পদ বাজেয়াফত করার কাজ গত বছর থেকেই শুরু হয়েছে। এখন এটা চূড়ান্ত করার কাজ চলছে।’ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর উদ্যোগ নেয়া হলে তাদের সম্পদ বাজেয়াফত করারও দাবি ওঠে সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকে। তাতে সমর্থন দিয়ে সরকারের মন্ত্রীরা এ বিষয়ে আইন প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এলেও এখন পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি। একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করে জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দল। রাজাকার, আলবদর, আলশামস নামে বিভিন্ন দল গঠন করে তারা ধর্ষণ, অপহরণ, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, ধর্মান্তরে বাধ্য করার মতো যুদ্ধাপরাধ ঘটায় সারাদেশে। সে সময় সাধারণ মানুষের ধনসম্পদও লুট করা হয়। সে সব যুদ্ধাপরাধের দায়ে সর্বোচ্চ আদালতে এ পর্যন্ত জামায়াতের সাত শীর্ষ নেতা এবং বিএনপির একজনের সাজা হয়েছে, তাদের মধ্যে ছয়জনের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে। আরও অনেকের ফাঁসির রায় আপীল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াতের আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বলেছে, ‘সাধারণ জ্ঞান ও দালিলিক প্রমাণাদি থেকে এটা স্পষ্ট যে, জামায়াত ও এর অধীন সংগঠনের প্রায় সবাই সক্রিয়ভাবে বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছেন। গোলাম আযমের নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামী একটি ক্রিমিনাল দল হিসেবে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কাজ করেছে, বিশেষ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধকালে।’ যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ২০১৩ সালে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন গড়ে উঠলে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্তদের সম্পদ বাজেয়াফত করার দাবিও জোরালো হয়ে ওঠে। সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী আওয়ামী লীগ নেতা শাজাহান খানও ২০১৫ সালে এক অনুষ্ঠানে যুদ্ধাপরাধে দণ্ডপ্রাপ্তদের সম্পদ বাজেয়াফত করার দাবিতে সমর্থন দেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ওই বছরই আরেক অনুষ্ঠানে বলেন, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াফত করার জন্য কোন আইন নেই। সেজন্য সরকার আইন প্রণয়ন করবে। পরের বছর এপ্রিলে তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াফতের পাশাপাশি তাদের পরিবারের সদস্যদের সরকারী চাকরি করার এবং ভোটাধিকারও কেড়ে নেয়া হবে। এরপর ২০১৬ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধুর খুনী ও দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াফত করার একটি প্রস্তাব জাতীয় সংসদে তোলা হলে তা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সেদিন সংসদে বলেন, যাদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে, তাদের সম্পত্তি ওয়ারিশের হাতে চলে যাওয়ায় আইনের মাধ্যমে তাদের সম্পত্তি বাজেয়াফত করতে সময় লাগবে। তবে যারা পলাতক রয়েছে, তাদের সম্পত্তি বাজেয়াফত করতে ‘কোনও অসুবিধা নেই’। তবে এরপর প্রায় আড়াই বছর হয়ে গেলেও সেই আইন এখনও মন্ত্রিসভায় ওঠেনি। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জিতে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব আনিসুল হকের হাতেই রেখেছেন। কসবায় একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার ট্রেনে করে ঢাকা থেকে আখাউড়ায় আসেন তিনি। সেখান থেকে সড়ক পথে যান কসবায়। এ সময় সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীরা মন্ত্রীর হাতে কাগজের নৌকা তুলে দেয়। পাশাপাশি ফুল ছিটিয়ে তাকে বরণ করা হয়। বিএনপির শুভ বুদ্ধির উদয় হবে ॥ স্টাফ রিপোর্টার ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে জানান, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বিএনপির এখনও সংসদে যাওয়ার সময় আছে। তারা যে একেবারেই সংসদে যাবে না তা মনে করি না। আমার মনে হয় বিএনপির শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। এখনও যে সময় আছে সেই সময়ের মধ্যেই বিএনপি সংসদে যাবে। যদি না যায় তাহলে জনগণই দেখবে তাদের কি পরিণতি হয়। আমার এ বিষয়ে বলার কিছু নেই। বৃহস্পতিবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া রেলস্টেশন এলাকায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, আখাউড়া পৌরসভা মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল, উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীন, যুগ্ম-আহ্বায়ক আবুল কাশেম ভূইয়া, সেলিম ভূইয়া, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক আতাউর রহমান নাজিম, আব্দুল মমিন বাবুল, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি শাহবুদ্দিন বেগ শাপলু ও সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন নয়ন প্রমুখ।
×