ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এবার চব্বিশ ঘণ্টাই ট্রাফিক নজরদারিতে ঢাকা

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ১৮ জানুয়ারি ২০১৯

এবার চব্বিশ ঘণ্টাই ট্রাফিক নজরদারিতে ঢাকা

গাফফার খান চৌধুরী ॥ এই প্রথমবারের মতো চব্বিশ ঘণ্টাই ট্রাফিক মনিটরিংয়ের মধ্যে এলো রাজধানী ঢাকা। ট্রাফিক পক্ষের তৃতীয় দিনে রাতের ঢাকারও ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। গভীর রাতে বেপরোয়া যানবাহন নিয়ন্ত্রণে এ ব্যবস্থা চালু হলো। সাধারণত গভীর রাতে বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চলাচল করায় প্রায়ই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনা কমিয়ে আনতেই উদ্যোগ নিল পুলিশ। সেই সঙ্গে গভীর রাতেও ট্রাফিক পুলিশ রাস্তায় অভিযান চালানো অব্যাহত রাখবে। সিদ্ধান্তে খুশি সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে যারা গভীর রাতে বাসায় ফেরেন এ ঘোষণায় তাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, গভীর রাতে যানবাহন সাধারণত বেপরোয়া গতিতে রাস্তায় চলাচল করে। এতে প্রায়ই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। সেদিক বিবেচনা করেই এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ট্রাফিক পুলিশ রাতে বেপরোয়া যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোসহ অন্য রুটিন কাজ করবে। তিনি জানান, সাধারণত ভোর সাড়ে ছয়টা থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত দুই শিফটে ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করত। প্রয়োজনে দ্বিতীয় শিফটের ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা রাত আড়াইটা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতেন। এরপর থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত শুধু ঢাকা নয় দেশের কোথাও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ওইভাবে চালু ছিল না। এ সুযোগে চালকরা আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাত। ফলে ফাঁকা সড়কে প্রায়ই দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটত। পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে ট্রাফিক বিভাগ রাত এগারোটা থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত নাইট শিফট চালু করেছে। ফলে এখন ২৪ ঘণ্টাই ট্রাফিক নজরদারির আওতায় থাকবে রাজধানী। সরেজমিনে দেখা গেছে, রাত দশটার পর থেকে সাধারণত ভোর ছয়টা পর্যন্ত রাজধানীর দু’একটি জায়গা ছাড়াও কোথাও ট্রাফিক পুলিশ দেখা যেত না। এতে করে ঢাকার মহাখালী, গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে প্রায়ই যানজট লেগে থাকত। এসব জায়গা ছাড়াও রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ২৫ সিগন্যাল ও মোড়ে রাতভর দায়িত্ব পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। যার মধ্যে ট্রাফিক উত্তর বিভাগের ৪, দক্ষিণ বিভাগের ১০, পূর্ব বিভাগের সাত এবং পশ্চিমে চারটি পয়েন্ট রয়েছে। ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি পয়েন্টে একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট ও দুজন কনস্টেবল দায়িত্ব পালন করবেন। তবে সিগন্যালের গুরুত্ব অনুযায়ী সদস্য বাড়ানো হবে। আর তাদের কাজের তদারকি ও খোঁজ-খবর রাখতে একজন সহকারী কমিশনার (এসি) ও একজন ট্রাফিক ইন্সপেক্টরও (টিআই) দায়িত্ব পালন করবেন। এ বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মীর রেজাউল আলম বলছেন, ট্রাফিক বিভাগে আগেও নাইট শিফট চালু ছিল। তবে তা সে অর্থে তেমন কার্যকর ছিল না। সম্প্রতি রাজধানীর কিছু গুরুত্ব¡পূর্ণ স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। সেসব জায়গায় চব্বিশ ঘণ্টাই ট্রাফিক ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন বলে মনে হয়েছে। এজন্যই এমন ব্যবস্থা। পুলিশ সূত্র বলছে, এসব পয়েন্টের মধ্যে রয়েছে উত্তরার শেষ মাথা আবদুল্লাহপুর মোড়। সাভারের আশুলিয়ার বাইপাইল মোড়। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের তিনমুখী সংযোগস্থল। গাজীপুর চৌরাস্তা। এসব পয়েন্টে গভীর রাতেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট লেগে থাকে। কারণ এসব মোড়ে গভীর রাতে ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি থাকে না। এসব জায়গায় টহল পুলিশ দায়িত্ব পালন করে। যা পরিমাণে একেবারেই কম। এছাড়া রাজধানীর বিমানবন্দর গোলচত্বর, উত্তরার হাউজ বিল্ডিং, কাকলি-বনানী সিগন্যাল, মহাখালী সিগন্যাল, সাতরাস্তা, বিজয় সরণি, সোনারগাঁও মোড়, কাকরাইল, শান্তিনগর, যাত্রাবাড়ীর সোনারগাঁও জনপথ মোড়, টিকাটুলী মোড়, ফার্মগেট, বাংলামোটর, মৎস্যভবনসহ বহু পয়েন্টে গভীর রাতেও যানজট লক্ষ্য করা গেছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, বাসগুলো আর আগের মতো দরজা খুলে যত্রতত্র দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করাচ্ছে না। ওভারব্রিজে ওঠার প্রবণতা তুলনামূলক কম লক্ষ্য করা গেছে। তবে যানবাহনের মধ্যে আগে যাওয়ার প্রবণতা একেবারেই কমে গেছে। ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ট্রাফিক পক্ষের দ্বিতীয় দিন বুধবার ট্রাফিক আইন অমান্য করায় ৬ হাজার ৭২২ মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় জরিমানা করা হয়েছে ৩১ লাখ টাকা। অভিযানে ৪০টি গাড়ি ডাম্পিং ও ৮৪৯ গাড়ি রেকার করা হয়েছে। যার মধ্যে উল্টোপথে গাড়ি চালানোর কারণে ১১শ’ ৩২ গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার করার দায়ে ১৩৯, হুটার ও বিকনলাইট ব্যবহার করার জন্য ৭টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা, মাইক্রোবাসে কালো কাঁচ ব্যবহারের কারণে ১৭ মামলা, ট্রাফিক আইন অমান্য করার কারণে ২৭০৪ মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে মামলা ও ১৩৪ মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে। গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহারের অপরাধে চালকের বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা দেয়া হয়েছে। যা আগের তুলনায় কিছুটা কম। এতে বুঝা যায়, ট্রাফিক পক্ষের সুফল আসছে। এ উপলক্ষে ৫৭ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে মনিটরিং চলছে। আর ১৩০ বাস স্টপেজ বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এসব স্টপেজ ছাড়া বাস থামালেই জরিমানার বিধান চালু করা হয়েছে।
×