ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চালের বাজার স্থিতিশীল ॥ দাম কমেছে কেজিতে দুই/তিন টাকা

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১৮ জানুয়ারি ২০১৯

চালের বাজার স্থিতিশীল ॥ দাম কমেছে কেজিতে দুই/তিন টাকা

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুষ্টিয়া, ১৭ জানুয়ারি ॥ হঠাৎ চালের বাজারের অস্থিরতা অনেকটা কমেছে। জেলার খাজানগর মোকামে চালের দর কেজিপ্রতি দুই থেকে তিন টাকা কমেছে। গত এক সপ্তাহ ধরে চালের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে বলে মিলমালিক, চাতাল ব্যবসায়ী ও খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান। এদিকে চালের মোকাম পর্যবেক্ষণ ও বাজার দর উর্ধগতিরোধে জেলা প্রশসানের পক্ষ গঠিত ছয় সদস্যের মনিটরিং টিমের সদস্যরা বৃহস্পতিবার সকালে খাজানগর চালের মোকাম পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে ওই টিমের সদস্যরা রশিদ এগ্রো ফুড, দাদা এগ্রো ফুড, দেশ এগ্রো ফুড, ফ্রেশ এগ্রো ফুডসহ কিছু সংখ্যক অটো রাইস মিলের গুদামে রক্ষিত ধানের ক্রয়মূল্যসহ মজুদ, উৎপাদিত চালের পরিমাণ ও বিক্রি দর পর্যবেক্ষণ করেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর কুষ্টিয়ার মোকামে চালের দাম কেজিপ্রতি বৃদ্ধি পায় তিন থেকে পাঁচ টাকা। পরে চালের দাম বস্তাপ্রতি ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকা পর্যন্ত বেড়ে বাজার কিছুটা অস্থির হয়ে উঠে। চালের উৎপাদন ও সরবরাহ স্বাভাবিক থাকা সত্ত্বেও চালের দাম বাড়ার পেছনে বাজার নিয়ন্ত্রণকারী মোকামের বড় বড় মিল মালিকদের কারসাজি রয়েছে অভিযোগ উঠে। তবে এ মোকামের মিল মালিকরা সামান্য দাম বৃদ্ধির সঙ্গে ব্যবসায়ীদের কোন যোগসাজশ কিংবা কারসাজি নেই বলে দাবি করেন। তবে গত এক সপ্তাহের মধ্যে খাজানগর মোকামে চালের বাজারের উর্ধগতি কমেছে। বর্তমানে মিনিকেট চাল প্রকারভেদে কেজিপ্রতি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা দরে, কাজললতা ৪০ টাকা, নতুন সরু (৪৯ ধানের চাল) ৩৫ টাকা ও স্বর্ণা ২৭ থেকে ২৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মোকামে দর কমে যাওয়ার ফলে খুচরা দামও কমেছে। মোকামের ব্যবসায়ীরা জানান, নির্বাচনের আগে সাধারণ ভোক্তা ও দেশের বিভিন্ন এলাকার বড় বড় পাইকাররা মোকামের উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ চাল কিনে মজুদ গড়ে তুলেছিল। ফলে চালের বাজার দর সামান্য বৃদ্ধি পায়। কিন্তু বর্তমানে বাজার সম্পূর্ণ স্বাভাবিক রয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। এছাড়া খাজানগর মোকামে বর্তমানে পাইকারি বেচা-বিক্রি মারাত্মক হ্রাস পেয়েছে। অটো মেজর এ্যান্ড হাসকিং রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রশিদ জানান, চালের বাজার বর্তমানে নিম্নমুখী। খাজানগর মোকামে চাল উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক রয়েছে। তবে মোকামে চালের পাইকার ক্রেতা একবারে কম। এদিকে রাইস মিল ও ধান চাষীদের রক্ষা এবং ধান উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে উৎপাদন খরচ মিটিয়ে কৃষকদের নায্য দাম প্রদানের ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। কারণ, প্রতিমণ ধান উৎপাদনে খরচ হয় ৯০০ টাকা অথচ কৃষক বিক্রিত মূল্য পান প্রতিমণে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা। ফলে প্রকৃত দামের অভাবে আগামী ইরি-বোরো মৌসুমে ধান ও চাল উৎপাদন হ্রাস পেয়ে চালের বাজার অস্থির হতে পারে বলে রশিদ এগ্রো ফুডের সত্বাধিকারী আব্দুর রশিদ শঙ্কা প্রকাশ করেন। চালকল মালিক সমিতির কুষ্টিয়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জয়নুল আবেদীন জানান, বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে কারসাজি কিংবা সিন্ডিকেটের কোন স্থান নেই। এ মোকামে উৎপাদন ও চালের পাইকারি বাজার স্বাভাবিক রয়েছে এবং আসন্ন ইরি-বোরো মৌসুম পর্যন্ত চালের বর্তমান বাজার দর স্থিতিশীল থাকবে বলেও তিনি জানান। এদিকে চালের মোকাম পর্যবেক্ষণ ও বাজার দর উর্ধগতিরোধে জেলা প্রশসানের পক্ষ গঠিত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশসক (সার্বিক) তরফদার সোহেল রহমানের নেতৃত্বে মনিটরিং টিমের সদস্যরা বৃহস্পতিবার সকালে খাজানগর চালের মোকাম পরিদর্শন করেন। এ সময় টিমের সদস্যরা রশিদ এগ্রো ফুড, দাদা এগ্রো ফুড, দেশ এগ্রো ফুড, ফ্রেশ এগ্রো ফুডসহ কিছু সংখ্যক অটো রাইস মিলের গুদামে রক্ষিত ধানের ক্রয়মূল্যসহ মজুদ, উৎপাদিত চালের পরিমাণ ও বিক্রি দর পর্যবেক্ষণ করেন। তবে বড় ধরনের কোন অসঙ্গতি তারা খুঁজে পাননি। তবে মোকামে চালের উৎপাদন, বিপণন ও সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে টিম সদস্যরা মিল মালিকদের পরামর্শ ও নির্দেশনা দেন।
×