ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ১৮ জানুয়ারি ২০১৯

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

জনকণ্ঠ ফিচার ॥ অমর একুশে গ্রন্থমেলার কথাই আগে বলা যাক। হ্যাঁ, এখনও অনেকদিন বাকি। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে মাসব্যাপী আয়োজন। আয়োজক বাংলা একাডেমি যারপরনাই ব্যস্ত। নতুন মহাপরিচালক কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী ইতোমধ্যে চমৎকার কিছু পরিকল্পনা নিয়েছেন। এবারের মেলা পুরনো সেকেলে চেহারাটা থেকে বের হয়ে আসতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। দৃশ্যমান পরিবর্তন আসছে অমর একুশে গ্রন্থ মেলায়। কিন্তু বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তাটি নিয়ে। এই সড়কটি ধরেই মেলায় প্রবেশ করতে হয়। প্রধান সড়ক বলা চলে এটিকে। প্রশস্ত সড়কে এখন চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। রাস্তার মাঝখানটা ঘিরে নিয়ে মেট্রোরেলের কাজ করা হচ্ছে। এ কাজ কবে শেষ হবে? মেলা শুরুর আগে রাস্তাটি ফিরে পাওয়া হবে তো? দুশ্চিন্তায় পড়েছে একাডেমি। কারণ এ রাস্তা না পাওয়া গেলে সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। এর পাশাপাশি মেলা চলাকালীন সময় শাহবাগ থেকে বাংলা একাডেমি পর্যন্ত ফুটপাথ ব্যবহার করেন হাজার হাজার মানুষ। সেই ফুটপাথ এখন ব্যবহারের অনুপযোগী। এখানে-ওখানে গর্ত। ময়লা আবর্জনার স্তূপ। মলমূত্র বিসর্জন চলছেই। এ অবস্থায় কবে আর ঠিক করা হবে ফুটপাথ? অত্যন্ত জরুরী এ সংস্কার কাজ মেলা শুরুর আগে করা চাই। করতেই হবে। তা না হলে চরম দুর্ভোগে পড়তে হবে পথচারীদের। সময় থাকতে বিষয়গুলো নিয়ে ভাবার পরামর্শ দিয়েছেন বইপ্রেমীরা। শিশুপার্ক সংস্কার প্রসঙ্গ। ঢাকার সবচেয়ে পুরনো সরকারী বিনোদন কেন্দ্রটি আপাতত বন্ধ রয়েছে। ১৯৭৯ সালের ১১ জুলাই থেকে এটি চলছে। সম্প্রতি অনির্দিষ্টাকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কারণও আছে। পার্ক সংস্কার ও আধুনিকায়নের কাজ চলছে এখন। তারও আগে শিশুপার্ক স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার কথা জানায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতিবিজড়িত এ স্থানটি সংরক্ষণের স্বার্থে শিশুপার্ক সরানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। কিন্তু না সরিয়ে এটিকে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সঙ্গে একীভূত করার নতুন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। পার্কটির আধুনিকায়নে গ্রহণ করা হয়েছে ২৬৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকার প্রকল্প। ‘ঢাকাস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এ কাজ শেষ করা হবে। শিশুপার্কের আধুনিকায়নের দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। এজন্য সংস্থাটিকে মূল বরাদ্দ থেকে ৭৮ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। পুরনো স্থাপনা ও রাইড সরিয়ে সেখানে নতুন স্থাপনা গড়া হবে। যোগ করা হবে অত্যাধুনিক সব রাইড। ভূগর্ভস্থ গাড়ি পার্কি ফুটকোর্ডসহ নানা সুযোগ সুবিধা রাখা হবে। তার চেয়ে বড় কথা, স্থাপনাগুলো এমনভাবে করা হবে যাতে করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অবস্থিত গ্লাস টাওয়ারটি দেখা যায়। সব মিলিয়ে গোটা এলাকার চেহারাই বদলে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। উত্তর ঢাকার কথায় আসা যাক। সফল ও দারুণ উদ্যমী মেয়র আনিসুল হক ছিলেন এই অংশের মেয়র। কত যে স্বপ্নও দেখিয়েছিলেন তিনি! আশা জাগিয়ে ছিলেন বেশ। কিন্তু হায়, মৃত্যু এসে ছুঁ মেরেই যেন নিয়ে গেল তাকে। ২০১৭ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে মেয়র শূন্য উত্তর ঢাকা। হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ থাকায় নতুন নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি। এর ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকার নাগরিকদের নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় বুধবার ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে উপ-নির্বাচন ও সম্প্রসারিত অংশের কাউন্সিলর নির্বাচন নিয়ে রুল খারিজ করে দেয় হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। দুই সিটি কর্পোরেশনের সম্প্রসারিত ৩৬টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদের নির্বাচন নিয়েও আর কোন অনিশ্চয়তা নেই। বাধা কেটে যাওয়ায় ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র পদে পুনরায় ভোটগ্রহণ করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। আগামী মার্চে উপজেলা নির্বাচনের মধ্যেই এই নির্বাচন সম্পন্ন করা হতে পারে। সেভাবেই প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা। তার মানে আবারও ভোটের আলোচনা। উত্তাপ। উত্তেজনা। আগে থেকেই মাঠে ছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। এখন নতুন করে সরব হচ্ছেন। প্রার্থী পরিবর্তনের আলোচনাও শোনা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের নতুন মেয়র প্রার্থী হিসেবে নাম এসেছে জাহাঙ্গীর কবির নানক ও রুবানা হকসহ কয়েকজনের। ফাইনালি কি ঘটবে? একটা রহস্য ক্রমে সৃষ্টি হচ্ছে। অপরদিকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন তাবিথ এম আউয়াল। আনিসুল হকের সঙ্গে লড়ে জয়ী হতে না পারলেও ভাল ভোট পেয়েছিলেন আব্দুল আউয়াল মিন্টু পুত্র। এবার কী হবে? নির্বাচনে অংশ নেবে তার দল? অংশ নিলে কে হবেন দলের মেয়র প্রার্থী? আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। জাতীয় নির্বাচনে ভরাডুবির পর এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে কি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে বিএনপি? কৌতূহল বাড়ছে। সবঠিক থাকলে সহসাই নতুন নির্বাচন নিয়ে মেতে ওঠবেন ঢাকা উত্তরের ভোটারাও। শেষ করা যাক ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রের কথা বলে। রেইনবো ফিল্ম সোসাইটি আয়োজিত উৎসবের পর্দা নামছে আজ শুক্রবার। ‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’ স্লোগানে গত ১০ জানুয়ারি শুরু হয় উৎসব। উৎসবে ৭২ দেশের প্রায় ২শ’ ১৮টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়। ছবি দেখার জন্য প্রায় সবকটি ভেন্যুতে ভিড় লেগে ছিল। যারা সিনেমাপ্রেমী, পৃথিবীর কোন প্রান্তে কী ধরনের ছবি হচ্ছে যারা জানতে চান, নির্মাতাদের সঙ্গে ভাব বিনিময়ের সুযোগ কাজে লাগাতে চান যারা তারা ঠিক চলে এসেছেন। ব্যক্তিগত কাজ? ব্যস্ততা? কোনটাই তাদের রুখতে পারেনি। আর তারপর আজ ভাঙছে মিলনমেলা। বিকেলে আনুষ্ঠানিক সমাপনী ঘোষণা করা হবে। ১৭তম আসরের ব্যর্থতা থাকতেই পারে। তবে সাফল্যই বেশি। এ সাফল্য বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনকে ছুঁয়ে যাক। উদ্বুদ্ধ করুক। সকলের তাই প্রত্যাশা।
×