ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

সন্জীদা খাতুন সম্পাদিত গ্রন্থের প্রকাশনা

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ১৮ জানুয়ারি ২০১৯

সন্জীদা খাতুন সম্পাদিত গ্রন্থের প্রকাশনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সঙ্গীতে সমর্পিত এক অনন্য ব্যক্তিত্ব ছায়ানটের সভাপতি ড. সন্্জীদা খাতুন। সুরকে আশ্রয় করেই ঋদ্ধ হয়েছে তাঁর দীর্ঘ মননশীল জীবনচক্র। সঙ্গীতকে হাতিয়ার করে চালিয়ে যাচ্ছেন সমাজ বদলের লড়াই। সঙ্গীতচর্চা ছড়িয়ে দেয়ার সাধনার পাশাপাশি লিখেছেন অনেক সঙ্গীতসহ নানা বিষয়ের গ্রন্থ। এবার প্রকাশিত হলো তার সম্পাদিত রবীন্দ্রসঙ্গীতবিষয়ক গ্রন্থ ‘গীতবিতান : তথ্য ও ভাবসন্ধান’। গীতবিতানের ২ হাজার ৩০০ গানের মধ্য থেকে ১০০টির ভাবসম্পদ বিশ্লেষণ ও তথ্যসূত্র স্থান পেয়েছে গ্রন্থটির প্রথম খ-ে। বইটির গবেষণা করেছেন কামরুল হায়দার। ছায়ানট থেকে প্রকাশিত গ্রন্থটির গ্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবনের রমেশচন্দ্র দত্ত স্মৃতি মিলনায়তনে প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী অধ্যাপক রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। সম্পাদিত গ্রন্থটির বিষয়ে অনুভূতি ব্যক্ত করেন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী, গবেষক, লেখক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব সন্্জীদা খাতুন। আলোচনায় বক্তারা বলেন রবীন্দ্রনাথের গান পদ্মফুলের মতো। প্রতিবার গাইবার সময় সেই গানের ভাবসম্পদ ফুলের পাঁপড়ির মতো মেলতে থাকে। যতবার সেই গান গাওয়া হয় ততবার তার পাঁপড়ি প্রস্ফূটিত হয়। রবীন্দ্রনাথের গানের সুর ভাব ও বাণী এ তিনটি মিলে একটি ব্যঞ্জনা তৈরি হয়। এ তিনটির সমন্বয় হলেই একটি গান পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ পায়। রবীন্দ্রনাথের গানে বিশ^কবি আর সুরের কবির একটা মিল আছে। সেটা হলো একজন গান শোনাচ্ছেন আর অপরজন শুনছেন। এভাবে তার গানের সুর পেয়েছেন ভিন্ন মাত্রা। সেখানেই এর সার্থকতা। কেননা সাহিত্য অশেষ। তাই তার যাত্রাও অশেষ। শিল্পীদের রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে ক্রমাগত আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। বইটি রবীন্দ্রসঙ্গীতের অনুরাগীদের নতুন আলোয় উদ্ভাসিত করবে। গ্রন্থটি প্রসঙ্গে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, রবীন্দ্রসঙ্গীতের ভাবসম্পদের হৃদয়গ্রাহী ব্যাখ্যা প্রকাশ পেয়েছে বইটিতে। গীতবিতান তথ্য ও ভাবসন্ধান নামে যে বইটি সম্পাদনা করেছেন এটা দুজনের কাজ। সন্জীদা খাতুন ভাবের দিকটি লিখেছেন, কামরুল হায়দার তথ্য সংগ্রহ করেছেন। বইটি দেখে আমি আপ্লুত হয়েছি। রবীন্দ্রনাথের গান কখন কোথায় কি উপলক্ষে লিখেছিলেন সেটি নিয়ে প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় গুরুত্বপূর্ণ বই লিখেছিলেন। আজকের বইটি প্রভাত কুমারের সেই কাজকে ছাড়িয়ে গেছে। এ বইতে প্রভাত কুমারের কালানুক্রমিক সূচী গৃহীত হয়েছে। কোথাও কোথাও কামরুল হায়দার যুক্তি, প্রমাণ দিয়ে সেই কালকে ভিন্ন প্রমাণ করেছেন। সুতরাং বইটিতে তথ্যের অংশটি বিপুল। এজন্য কামরুল হায়দারকে অভিনন্দন জানাব। আর রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গানের ভাবসম্পদ নিয়ে যিনি এতকাল ভেবে এসেছেন সেই সন্জীদা খাতুন তিনি প্রতিটি গানের ভাবসম্পদ নিয়ে লিখেছেন। যা আমাদের নতুন আলোয় উদ্ভাসিত করবে। বইটির কোথাও কোথাও মতের ভিন্নতা থাকতে পারে। তবে বইটি রবীন্দ্রনাথের গানের শিল্পী ও অনুরাগী পাঠক উপকৃত হবেন। তবে বইটিতে সংকেত সূচী থাকলে ভালো হতো বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। অনুভূতি প্রকাশে সন্জীদা খাতুন বলেন, সুরের বিবরণ দেয়া কঠিন। সুরের ভাবপ্রকাশে ভাষার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। গানের ভাব নিয়ে আমি একটি কথা বলে দিলাম সেটা চরম কথা হতে পারে না। এর নানা দিক থাকতে পারে। গানে সুরে মানুষ নানামাত্রা পাবে। সেখানেই এর সার্থকতা। কেননা সাহিত্য অশেষ। তাই তার যাত্রাও অশেষ। তিনি আরও বলেন, এই বইটিতে আমার দুটো ভূমিকা। একটি হচ্ছে ওই একশত গানের ভাবসম্পদ ব্যাখ্যা করা এবং দ্বিতীয় হচ্ছে সম্পাদনা করা। বইটি রবীন্দ্রনাথের চর্চাকে উৎসাহিত করবে এ ভাবনা থেকে প্রকাশ করা হয়েছে। বইয়ের একটি ছোট সংস্করণ করা হয়েছিল পাঠক বইটিকে নেয় কিনা। সেটি পাঠক সমাদৃত হয়েছিল। যে কাজটি হয়েছে সেটি এককভাবে করেছেন কামরুল হায়দার। তাকে আমরা এর কৃতিত্ব পুরোপুরি দিতে পারি। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বলেন, রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে বইটিতে বিশদভাবে কাজ হয়েছে। পা-ুলিপি, স্বরলিপি, সুরতাল সবকিছু নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে এ বইটিতে। বইটিতে গবেষক অনেক বিস্তৃতভাবে তার গবেষণার তথ্য তুলে ধরেছেন। একটি গানের প্রায় সবরকম তথ্য তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে। সেইসঙ্গে খুব স্পষ্ট করে ভাবসূত্র মেলে ধরেছে যা শিল্পী, শিক্ষক ও রবীন্দ্র অনুরাগীদের আকৃষ্ট করবে। ভীষ্মদেব চৌধুরী বলেন, ছাত্র হিসেবে কবিতার মধ্যে ছড়িয়ে থাকে যে ধ্বনি সে সৌন্দর্য এর পাঠ সন্জীদা খাতুনের কাছ থেকে নেয়া। সেই শিক্ষাগুরুর কাছ থেকে পাওয়া এ গ্রন্থটি সাম্প্রতিক বাংলাদেশের উজ্জ্বলতম প্রকাশনা। বাংলাদেশে গানের বাণী নিয়ে কেউ খুব একটা কাজ করেনি। আর যতটুকু কাজ হয়েছে, সেটা করেছেন সন্্জীদা খাতুন। ছায়ানটের শিক্ষক ও শিল্পীদের কণ্ঠে ‘প্রথম যুগের উদয়দিগঙ্গনে’ শীর্ষক রবীন্দ্রসঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হয় প্রকাশনার আনুষ্ঠানিকতা। স্বাগত বক্তব্য দেন ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমেদ লিসা। ছায়ানটের শিল্পীদের কণ্ঠে পরিবেশিত হয় সমাপনী সঙ্গীত ‘কান্না-হাসির দোল দোলানো’। সকলের মিলিত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে শেষ হয় অনুষ্ঠান। বইটি প্রকাশ করেছে ছায়ানট। আর এর পরিবেশনা রয়েছে নবযুগ প্রকাশনী। বইটি সম্পাদনা করেছেন সন্জীদা খাতুন। প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এস। দাম রাখা হয়েছে ৪৫০ টাকা, বিদেশে ৩০ ডলার।
×