একটা সময় বিয়ে উৎসব শুধু দুটো পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। অর্থাৎ দুই পরিবারের নিকটাত্মীয় ছাড়া বিয়ে আয়োজনে তেমন কেউ শামিল হতো না। কেনাকাটা থেকে শুরু করে বউ ভাত পর্যন্ত যত আয়োজন সবই করত কাছের এ মানুষগুলো, ‘এখন সে ধারণা অনেকটাই অতীত। বিয়ের যত আয়োজন কিংবা ঝক্কি ঝামেলা সবই চলে গেছে তৃতীয় পক্ষের কাছে। অর্থাৎ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির হাতে। আগে যেমন দু’পক্ষ আলাদা আলাদা আয়োজন করত এখন দু’পক্ষ এক হয়ে পুরো দায়িত্ব তুলে দেয় অনুষ্ঠান আয়োজকদের হাতে। এতে করে নিজেদের সময় এবং শ্রম দুটোই বেঁচে যায়। তবে আবেগের জায়গাটা হয়ত সে ভাবে কাজ করে না। এ জন্য মানুষ দিন দিন ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। তাই ইচ্ছা থাকলেও উপায় নেই। অগত্যা তৃতীয় পক্ষের কাছেই বিয়ের আয়োজন সম্পন করতে হয়, তবে এতে সুবিধাও আছে অনেক, দারুণ সব কনসেপ্টে তারা আয়োজন করে থাকে অনুষ্ঠানগুলো, এতে করে উৎসবের আকাশ আরও রঙিন হয়ে ওঠে।
দিন-মাস যতই গড়িয়েছে ততই পরিবর্তন হয়েছে রুচি ও চাহিদার। বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে বিয়ের পোশাকে এবং গয়নায়, একটা সময় ছিল স্বর্ণের অলঙ্কর কিংবা বেনারসি শাড়ি ছাড়া বিয়ে আয়োজন কল্পনাই করা যেত না, কিন্তু এখন সে সব যেন বাধ্যতামূলক নয়, স্বর্ণের অলঙ্কারের পাশাপাশি বিয়ে পোশাকের সঙ্গে যে সব গয়না মানানসই মনে হয় তার সবই বিয়েতে ব্যবহার করা হয়। হোক সেটা এ্যান্টিক স্টোন, রুপা কিংবা ইমিটেশন। কালার ম্যাচিংটাই এখানে প্রাধান্য পায়। এভাবেই বিভিন্ন ভাবে পরিবর্তন এসেছে বিয়ে উৎসবের।
পান চিনি
বিয়ে উৎসবের প্রথম পর্বটাই হচ্ছে পান-চিনি বা আকদ। দু’পক্ষের কথা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছালেই তারিখ নির্ধারিত হয় পান-চিনির। এ দিনটায় বর এসে কনেকে আংটি পরিয়ে যায় এবং বিয়ের দিন ধার্য করা হয়। একটা সময় খুব সাদামাটা করে পান-চিনি অনুষ্ঠান সেরে ফেলা হলেও এখন বেশ ঘটা করেই পালিত হয়। বর পক্ষ এবং বর অনেকটা বিয়ের সাজেই এসে এখন হাজির হয় এবং কনেও নিজেকে পরিপূর্ণ সাজে সজ্জিত করে, যে কারণে পান-চিনি বা আকদে বরের পছন্দ শেরওয়ানি কিংবা পাথর খচিত পাঞ্জাবি। অনেক সময় সোনালি সুতায় কাজ করা পাঞ্জাবি সিলেক্ট করে থাকে। সেই সঙ্গে যোগ হয় পাগড়ি তবে পরিবর্তন এসেছে পাগড়িতেও কাপড়ের প্যাঁচ দেয়া পাগড়ি এখন সবার পছন্দ। কনের শাড়ি কিংবা লেহাঙ্গা কমফোর্ট ফিল করে থাকে। তবে পছন্দ একান্তই কনের নিজের। এ সময়ে বেশিরভাগই হাল্কা স্টোন বেজ শাড়ি লেহাঙ্গাই পছন্দের হয়ে থাকে, খুব বেশি গর্জিয়াস কিছু এ অনুষ্ঠানে থাকে। পোশাকের সঙ্গে সাজের ধরনটাও থার্কে তেমন।
গায়ে হলুদ
একটা সময় দেখা যেত গায়ে হলুদে ছেলে কিংবা মেয়ে উভয়ই হলুদ শাড়ি বা পাঞ্জাবিতে সজ্জিত হতো। সে ধ্যান-ধারণা এখন আর নেই। গায়ে হলুদে এখন চোখে পড়ে নানা রঙের পোশাক। অনেকে আবার নিদিষ্ট রং বাছাই করে সে রঙের শাড়ি পাঞ্জাবিতে সাজিয়ে তালে। পোশাকের কালালের সঙ্গে সাজ ও গয়নার কনসেপ্ট তৈরি হয়। অর্থাৎ পোশাকের রঙের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা রেখে সিলেক্ট করা হয় গয়না। আর সেভাবেই চলে রূপসজ্জা।
বিয়ে, বউ ভাত কিংবা রিসেপশন
বর্তমানে অনেকেই বিয়ে এবং বউ ভাত এক সঙ্গে করে থাকেন। এর সাজ এবং শুধু বিয়ের সাজসজ্জায় রয়েছে বেশ কিছু পার্থক্য। যেমন বিয়ের আসরে বর গর্জিয়াস শেরওয়ানি এবং সঙ্গে পাগড়ি পরে আসে। অনেক সময় বর-কনে নিজেকে শাড়ি, লেহাঙ্গা এবং পাঞ্জাবি কালার ম্যাচ করে কিনে থাকেন। তবে এখন শেরওয়ানির চেয়ে বেলভেট কাপড়ের পাঞ্জাবি দারুণ চলছে। বিয়ের আসরে কনের ক্ষেত্রে শাড়ি কিংবা লেহাঙ্গা দুটোই প্রাধান্য পায়। বিশেষ করে কনের যেটা পছন্দ রঙের ক্ষেত্রে লাল, গোলাপি, হাল্কা গোলাপি কিংবা ম্যাজেন্টা এখনও শীর্ষে।
আর বউ ভাত কিংবা রিসেপশন এ মেয়েদের এখন প্রথম পছন্দ লেহাঙ্গা তবে শাড়িও রয়েছে। ছেলেদের ক্ষেত্রে প্রিন্স কোট, কপ্লিট স্যুট কিংবা নিউ সেপ সাফারি এখন বেশ চলছে, জুতার ক্ষেত্রেও স্যুটের সঙ্গে ম্যাচ করে কখনও কালো কখনও বা চকোলেট কালার, আর রূপসজ্জায় এখন ছেলেমেয়ে উভয়ই শরণাপন্ন হয় পার্লারের, হেয়ার স্টাইল, কাটিং ফেসিয়াল, মেকআপÑ সবকিছুই বিভিন্ন অনুষ্ঠান পর্বের ধরনের ওপর নির্ভর করে।
বিয়ের আয়োজনের মেহেদীপর্ব থেকে শুরু করে রিসেপশন পর্যন্ত সব কিছুই এখন হাতের কাছেই মেলে, সুযোগ রয়েছে অনলাইনে অর্ডার করার। তাই ছবি তোলা থেকে শুরু করে বিয়ের শেষ আনুষ্ঠানিকতা পর্যন্ত সব কিছুর সহজ সমাধান এখন এক ক্লিকেই অপেক্ষা শুধু বিয়ের লগনের।
ছবি : তুষার আহমেদ
মডেল : রুবেল, আফসানা, সুজিত, রুমানা, শ্রাবণ, প্রীতি, আদর, লিয়াদ ও লিপি
মেকআপ : তানিয়া আফরিন (ওমেন্সডল)
ড্রেস ও স্টাইলিং : ফিটন খান