ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আয়েশা জেরিন খান প্রবাসী বাঙালী তরুণী

প্রকাশিত: ০৭:২৮, ১৮ জানুয়ারি ২০১৯

আয়েশা জেরিন খান প্রবাসী বাঙালী তরুণী

উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বাঙালীদের পড়াশোনা-কর্মজগত তৈরি করা, পারিবারিক সম্পর্কের ভিত্তি সম্প্রসারিত বিশ্ব সভায় স্থান পাওয়া সব মিলিয়ে বিদেশে বাংলাদেশীদের অবস্থান অত্যন্ত জোরালো এবং সময়োপযোগী। আধুনিক সময় এবং যুগের চাহিদাকে মেটাতে গিয়ে প্রবাসী বাঙালীরা যে মাত্রায় বিশ্ব পরিসরে তাদের অংশীদারিত্ব সুদৃঢ় করছে পাশাপাশি দেশের প্রতি তাদের গভীর মমত্ববোধকেও প্রতিনিয়তই লালন করে যাচ্ছে। আয়েশা জেরিন খান সিলেটি বংশোদ্ভূত এমন এক বাঙালী তরুণী যার জন্ম সুইডেনে। বেড়ে ওঠা এবং শিক্ষার্থীর জীবনের আবশ্যিক সময়ে লন্ডনে অতিবাহিত করে এই শহরেই নিজেকে গড়ে তুলছেন। সচেতন, স্বাধীনচেতা আয়েশার মাতৃভূমি বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম বোধে এক গভীর ভালবাসা ভেতর থেকে উদ্দীপ্ত হয়। এই প্রবাসী তরুণী আয়েশার সঙ্গে আলাপচারিতায়- নাজনীন বেগম ২৪ বছরের আয়েশা, প্রাণচঞ্চল, উচ্ছ্বল, আবেগাপ্লুত তারুণ্যের সম্ভাবনাময় দ্যুতি। অধিকার সচেতন এই যুবতী মনে করে স্বাধীনভাবে নিজের পায়ে স্বাবলম্বী হওয়া ছাড়া কর্মজীবনকে আনন্দময় করে তোলা যায় না। আর সেই কারণে কোন বৃহৎ সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে নিজেকে সম্পৃক্ত করার চাইতেও তাকে বেশি আগ্রহী এবং উদ্যোগী করে তোলে স্বাধীনভাবে কোন ব্যবসায়িক কার্যক্রমে পেশাগত জীবনকে চালিত করা। সেই লক্ষ্যে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্নাতক-শেষ পর্বের ছাত্রী সাময়িকভাবে তার শিক্ষা জীবনকে বিরতি দেয়। সামনে এগিয়ে যাবার স্বপ্ন দেখে ব্যবসাভিত্তিক লেখাপড়ায় নতুনভাবে যাত্রা শুরু করার। ব্যবসা শুধু অর্থ-বিত্তের জগত নয় মানুষের কল্যাণে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত তাদের কর্মপ্রক্রিয়াকে অব্যাহত গতিতে চালিত করে। জনহিতকর ব্যবসায়িক ক্ষেত্র তৈরি করা আয়েশার আকাক্সিক্ষত স্বপ্ন। সেটা শুধু লন্ডনেই নয়, মাতৃভূমি বাংলাদেশেও। সুবিধাবঞ্চিত, হতদরিদ্র মানুষের জন্য কিছু করতে গেলে আগে নিজেকে আর্থিকভাবে সচ্ছল এবং সফল করে তুলতে হবে। শুধু তাই নয়, নিজ দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, রাজনীতি তাকে ভাবায়। সেই অকৃত্রিম বোধে চৈতন্যের জগতও পরিশীলিত হয়। উন্নয়নশীল বাংলাদেশ আয়েশাকে মুগ্ধ করে। সেই মুগ্ধতায় প্রতি ২ বছর অন্তর দেশেও আসে। তার সুচিন্তিত প্রত্যয়ে স্পষ্ট হয় নিজের দেশকে সে খুব ভালবাসে, শুধু তাই নয় পিছিয়ে পড়া অসহায়, অবহেলিত মানুষদের জন্য সে কিছু করতেও চায়। নিশ্চয়ই একদিন তার সে ক্ষমতা হবে এবং স্বপ্নের আঙ্গিনায় প্রবেশ করে বঞ্চিত আর ব্যথিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে কোন বেগ পেতে হবে না। আয়েশা জেরিন খান ফারিহা। বাবা নুরুল ইসলাম খান। মা কামার সুলতানা শোভা। বাবা-মার দুই কন্যার মধ্যে ফারিহা বড়। বাবা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সমাজতত্ত্ব বিভাগে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর পর্ব সমাপ্ত করেন। পরবর্তীতে তিনি সুইডেনে গিয়ে সমাজকর্মের ওপর এমএস করেন ১৯৮৬ সালে। শেষ অবধি বাবা নিজের স্থায়ী নিবাস গড়ে তোলে লন্ডনে। ১৯৯০ সালে বিয়ে হয় কামার সুলতানা নোভার সঙ্গে। ফার্মেসির ছাত্রী নোভা বিয়ের পর লন্ডনে স্বামীর কাছে চলে আসে। তাদেরই প্রথম সন্তান ফারিহা। পুরো পরিবারটি সিলেটের। যারা এক সময় ইংল্যান্ডের লন্ডন শহরে নিজেদের আবাস গড়ে তোলে। ১৯৯৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর সুইডেনে জন্ম নেয়া ফারিহার শিক্ষা জীবন কাটে লন্ডনের সেন্ট্রাল ফাউন্ডেশন গার্লস হাই স্কুলে। সেখান থেকেই ও এবং এ লেভেল করে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে ভর্তি হয় স্নাতক কোর্সে। ৩ বছরের এই কোর্সে শেষ পর্ব বাকি থাকতে তার নজর এসে যায় ব্যবসার ওপর। তার অভিব্যক্তিতে স্পষ্ট হয় রাজনীতির বিষয় নির্ধারণ করার পেছনে বাংলাদেশের ইতিহাস জানারও এক বাসনা কাজ করে। কিন্তু নিজের ভবিষ্যত পরিকল্পনায় ব্যবসাকে নতুনভাবে চিন্তা করা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বলে তার মনে হয়। সুতরাং আবার ব্যবসায়িক বিষয়কে বিবেচনায় আনতে শিক্ষা জীবনকে নব উদ্যোমে গোছাতে হবে। তার জন্য আরও সময়ের প্রয়োজন। ইতোমধ্যে আরও এক স্বপ্নময় জীবন তাকে অবিচ্ছিন্ন সুতায় নির্মল সম্পর্কের বন্ধনে জড়িয়ে নেয়। বিবাহিত জীবনের শুভ সূচনা। সেখানেও এক ভিন্ন ধারার অন্য রকম যাত্রা। পছন্দের মানুষ এ্যাডাম প্রিস কাকের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। শ্লোভাকিয়ার এই যুবক ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়ে ফারিহাকে বিয়ে করে। আগে সে ক্যাথলিক ধর্মের অনুসারী ছিল। ২০১৮ সালের ১ জুলাই লন্ডনে তাদের বৈবাহিক নিয়মবিধি সম্পন্ন হয়। তবে ফারিহার ইচ্ছে অনুযায়ী বিবাহোত্তর অনুষ্ঠানটি হয় বাংলাদেশের ঢাকায়। দেশের প্রতি এমন স্বতঃস্ফূর্ত নিবেদন সত্যিই বিস্ময়কর। আধুনিক সময়ের প্রজন্ম বাংলাদেশের সমৃদ্ধি গতিময়তাকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে মূল্যায়ন করে শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও উদ্দীপ্ত তারুণ্যের জয়গানে দেশটি নিয়তই সিক্ত হচ্ছে। এটা শুধু অসাধারণ প্রাপ্তিই নয় সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ গড়তে এক অনন্য শুভসঙ্কেতও। আধুনিক প্রজন্মের দেশের প্রতি এমন আকর্ষণ আর মমতা ভবিষ্যত বাংলাদেশ গড়তে এক অনবদ্য মঙ্গল যোগ। যে নতুন প্রজন্মকে কা-ারির আসনে বসিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার অসমাপ্ত কাজের রূপরেখা নির্ধারণ করলেন সময়ের দুর্বার মিছিলে সেটা কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে তা এখন দেখার অপেক্ষায়। প্রবাসী সময়ের প্রজন্মও যদি আধুনিক বাংলাদেশ তৈরিতে তাদের যুগোপযোগী অংশীদারিত্ব প্রমাণ করতে পারে তাহলে দেশের অপ্রতিহত অগ্রগতিকে কেউই রুখতে পারবে না।
×