ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জানা-অজানা;###;শংকর লাল দাশ

এ্যান্টার্কটিকায় বরফের নিচে যা রয়েছে

প্রকাশিত: ০৭:৩২, ১৮ জানুয়ারি ২০১৯

এ্যান্টার্কটিকায় বরফের নিচে যা রয়েছে

এ্যান্টার্কটিকা। পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম মহাদেশ। এশিয়া, আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার পর ১,৪০,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার ক্ষেত্রফল বিশিষ্ট এ মহাদেশ আয়তনে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম। এক কথায় অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ থেকে এটি প্রায় দ্বিগুণ বড়। উনবিংশ শতাব্দীর আগ পর্যন্ত কোন মানুষ এ্যান্টার্কটিকা দেখেছেন বা গিয়েছেন, এমন কোন প্রমাণ কোথাও নেই। যদিও এ্যান্টার্কটিকার কথা বই-পুস্তকে এসেছে বহু আগে। আনুমানিক ৩৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এ্যারিস্টোটল তার ‘মেতেওরোলজিকা’ নামক গ্রন্থে এ্যান্টার্কটিকা অঞ্চল সম্বন্ধে লিখেছেন। দ্বিতীয় শতাব্দীতে তিরের মারিনোস তার বিশ্ব মানচিত্রে এ নামটি ব্যবহার করেছিলেন। গাইয়াস জুলিয়াস হাইগিনাস এবং এ্যাপুলেইয়াস নামক রোমের লেখকরা দক্ষিণ মেরু বোঝাতে পোলাস আন্তার্কতিকাস শব্দটি ব্যবহার করতেন। ১৩৯১ খ্রিস্টাব্দে জিওফ্রে চসার ইংরেজীতে পোল আন্টার্টিক শব্দটি ব্যবহার করেন। বিশ্বের শীতলতম ও শুষ্কতম মহাদেশ এ্যান্টার্কটিকা। মহাদেশটির শতকরা ৯৮ অংশ গড়ে ১ দশমিক ৯ কিলোমিটার পুরু বরফাবৃত। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২০০ মি.মি. হওয়ায় এ মহাদেশকে শীতল মরুভূমি হিসেবে গণ্য করা হয়। এ মহাদেশে কোন স্থায়ী বাসিন্দা নেই। তারপরেও সারা বছর অন্তত ৫ হাজার মানুষ এ মহাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন গবেষণা কেন্দ্রে অবস্থান করেন। এ মহাদেশ নিয়ে সারা পৃথিবীর মানুষের আগ্রহ প্রবল। তাই তো চরম বৈরী পরিবেশ-প্রকৃতিকে উপেক্ষা করে বিজ্ঞানী-গবেষকরা বছরের পর বছর এ্যান্টার্কটিকায় কাটিয়ে দেন। তারা একের পর এক আবিষ্কার করেন চমকপ্রদ সব তথ্য। যা বিশ্ববাসীকে শুধু তাকই লাগায় না। পৃথিবীর আগাম ভবিষ্যত গড়তে এসব তথ্য নানানভাবে কাজে লাগে। যেমন অতি সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে এ্যান্টার্কটিকায় বরফের নিচে পর্বতশ্রেণীর তথ্য। ব্রিটেনের একদল গবেষক সাম্প্রতিক আবিষ্কারের ভিত্তিতে জানিয়েছেন, পশ্চিম এ্যান্টার্কটিকার বিস্তীর্ণ বরফ স্তরের নিচে রয়েছে আস্ত একটা পর্বতশ্রেণী। তাদের মাঝে গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছে কয়েক শ’ মাইল ছড়ানো আরও তিনটি উপত্যকা। এ অনুসন্ধান নিয়ে ‘জিয়োফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার্স’ পত্রিকায় একটি প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। বরফের আস্তরণের নিচে কত দিন ধরে চলছে পর্বতশ্রেণীর লুকোচুরি? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তল্লাশি চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। কৃত্রিম উপগ্রহ প্রতিদিন ভূপৃষ্ঠের প্রচুর ছবি তুলে চলেছে। বরফের গভীরে কোথায় কী রয়েছে, তার ছবিও ধরা পড়ছে তাতে। কিন্তু সেগুলোর প্রায় সবই এমনভাবে পৃথিবীতে পাক খাচ্ছে যে, দক্ষিণ মেরুর ওই অংশ এত দিন ধরা পড়েনি কৃত্রিম উপগ্রহের ক্যামেরা বা রাডারে। তাই বরফ ভেদ করে দেখতে পায় এমন বিশেষ রাডারের সাহায্যে ওই মহাদেশের মানচিত্র নতুনভাবে তৈরি করতে চেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। আর তাতেই উঠল পর্দা। ‘পোলার গ্যাপ’ নামে গবেষকদের বিশেষ অনুসন্ধানে ধরা পড়েছে, পূর্ব-পশ্চিম এ্যান্টার্কটিকার বরফের আস্তরণ জুড়ে রেখেছে তিন উপত্যকা। আর এ উপত্যকার সমস্যাও আছে। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, বরফ ঢাকা পাহাড় ও উপত্যকার কারণে সমুদ্রতলের উচ্চতা বাড়তে পারে অচিরে। তারা জানাচ্ছেন, উষ্ণায়নে বিশ্বের সর্বত্র বরফ গলছে। ব্যতিক্রম নয়, এ্যান্টার্কটিকাও। বরফ গলে স্বাভাবিক নিয়মেই তা ছড়িয়ে পড়ার কথা। কিন্তু এখানে বাগড়া দিচ্ছে তলায় লুকিয়ে থাকা ওই পর্বতশ্রেণী আর উপত্যকা তিনটি। বরফ গলে দ্রুত এ্যান্টার্কটিকার মাঝের অংশ থেকে সরে যাচ্ছে কিনারার দিকে। আর এ কারণে আগামী দিনে সমুদ্রের জলের স্তর আরও আকস্মিকভাবে বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। এর ফলে গোটা পৃথিবী হতে পারে ক্ষতিগ্রস্ত। সূত্র : ইন্টারনেট
×