ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দাদির ভিক্ষার টাকায় চলে দুই নাতির পড়াশোনা

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ১৯ জানুয়ারি ২০১৯

 দাদির ভিক্ষার টাকায় চলে দুই নাতির পড়াশোনা

বৃদ্ধা সালেহা বেগম (৭৭) বড়ই অসহায়। তার ভিক্ষার টাকায় চলে দুই নাতি সাজ্জাত হোসেন (১২) ও সাব্বির হোসেনের (৯) পড়াশোনা ও সংসারের যাবতীয় খরচ। দীর্ঘদিন থেকে ওই দুই শিশুর বাবার খবর নেই। তাদের (শিশু) মা মানসিক ভারসাম্যহীন। কয়েকদিন আগে রান্নার জন্য লাকড়ি সংগ্রহ করতে গিয়ে গাছ থেকে পরে সাজ্জাতের বাঁ হাত ভেঙ্গে গেছে। টাকার অভাবে তারও চিকিৎসা চলছে না। নেই তাদের বসতঘর। একখানা বসতঘরের অভাবে চার সদস্যের ওই পরিবারটি চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ঘটনাটি বরিশালের গৌরনদী উপজেলার দক্ষিণ গোবর্ধন গ্রামের। বৃদ্ধা সালেহা বেগম বলেন, মোর স্বামীর ভিটা খালি পরে থাকলেও সেখানে নেই বসতঘর। এ কারণে দক্ষিণ গোবর্ধন গ্রামের আব্দুল গনি মীরের পরিত্যক্ত একটি তুলার মিলে মানসিক ভারসাম্যহীন কন্যা রেখা বেগম (৩২) ও তার দুই পুত্র (সালেহা বেগমের নাতি) সাজ্জাত ও সাব্বিরকে নিয়ে চার বছর থেকে বসবাস করছি। সালেহা বেগম ভিক্ষা করলেও স্বপ্ন দেখেন তার দুই নাতিকে পড়াশোনা করিয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার। সাজ্জাত স্থানীয় একটি প্রাইমারী স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে ও সাব্বির তৃতীয় শ্রেণীতে পড়াশুনা করছে। সালেহা বেগম প্রতিদিন সকালে ভিক্ষার ঝুলি হাতে নিয়ে বের হন। দুপুরের পর পরই তাকে ফিরে আসতে হয়। কারণ রান্নার কাজ তাকেই করতে হয়। মানসিক ভারসাম্যহীন রেখার উৎপাত ঠেকাতে প্রায়ই তাকে মিলের খুঁটির সঙ্গে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। নানা রোগে আক্রান্ত সালেহা এখন বড়ই ক্লান্ত। জীবনের শেষ সময়ে তিনি স্বামীর ভিটায় ফিরতে চান। সূত্রমতে, উপজেলার দক্ষিণ গোবর্ধন গ্রামের জবেদ আলী মীরের কন্যা সালেহা বেগমের বিয়ে হয়েছিল পার্শ্ববর্তী আগৈলঝাড়া উপজেলার মুরিহার গ্রামের বেল্লাত আলী সরদারের সঙ্গে। কন্যা রেখা, সীমা ও স্ত্রীকে (সালেহা) রেখে ১৮ বছর আগে সালেহার স্বামী মারা যান। এ কারণে তার সংসারে নেমে আসে দীনতা। মেয়ে রেখার বিয়ে হয়েছিল গৌরনদীর বানিয়াশুরী গ্রামের ইয়াকুব আলী ঘরামির পুত্র কামাল ঘরামির সঙ্গে। ওই ঘরে জন্মগ্রহণ করে সাজ্জাত, সাব্বির ও কন্যা মিম। ছয় বছর আগে রেখার স্বামী গোপনে আরও একটি বিয়ে করে আত্মগোপন করে। এরপর থেকেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন রেখা। স্বামীর গৃহ থেকে বিতাড়িত হয়ে তিন সন্তানসহ রেখার আশ্রয় হয় বৃদ্ধ মা সালেহার কাছে। চরম আর্থিক দীনতার মধ্যে নিরুপায় হয়ে কন্যা মিমকে অন্যের কাছে দত্তক দেয়া হয়েছে। -খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল থেকে
×