ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আজ সোহরাওয়ার্দীতে আওয়ামী লীগের বিজয় সমাবেশ

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ১৯ জানুয়ারি ২০১৯

আজ সোহরাওয়ার্দীতে আওয়ামী লীগের বিজয় সমাবেশ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় উপলক্ষে আজ শনিবার রাজধানীতে বিজয়োৎসবে মেতে উঠবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের মতো আজ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত শৈল্পিক ও নান্দনিক বিজয় সমাবেশেও গণজোয়ার নামাতে ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি শেষ করেছে দলটি। সুশৃঙ্খল ও বর্ণিল আয়োজনের এই সমাবেশ থেকে রেকর্ড টানা তৃতীয়বারের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে কৃতজ্ঞতা জানানোর পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা এবং দলের নেতাকর্মীদের দেবেন বিশেষ বার্তা। আয়োজকদের ধারণা, আজকের সমাবেশে কয়েক লাখ মানুষের সমাগমে স্মরণকালের বৃহত্তম জনসমাবেশে রূপ নেবে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ও দলের নির্বাচিত সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের গানে গানে বিজয় সমাবেশের মঞ্চে উপস্থিত হবেন টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর নির্বাচনে সাড়া জাগানো ‘জিতবে এবার নৌকা’ গানের শিল্পীদের পরিবেশনা শুনবেন। সঙ্গীত শিল্পীদের পরিবেশনা এবং দলের নেতাদের বক্তব্য শেষে জনগণসহ দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিজয় বার্তা দেবেন শেখ হাসিনা। সমাবেশস্থলকে নান্দনিক শৈল্পিকভাবে সাজানো হয়েছে। দলের হ্যাটট্রিক বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকার আদলে তৈরি করা হয়েছে বিশাল মঞ্চ। সমাবেশ মাঠে ছোট-বড় ৫০-এর অধিক নৌকা ও বৈঠাসহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গবন্ধু কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত ফেস্টুনে সুসজ্জিত করা হয়েছে। সমাবেশের বিশাল প্যান্ডেলে প্রায় ত্রিশ হাজার চেয়ার বসানো হয়েছে। চতুর্দিকে লাগানো হয়েছে বিশাল বিশাল ডিজিটাল স্ক্রিন। বিজয় সমাবেশটি মহাসমুদ্রে রূপ দিতে রাজধানীর পার্শ¦বর্তী জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ দলের সহযোগী সংগঠনসহ ঢাকা মহানগরের দলীয় নেতাকর্মীরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। এ লক্ষ্যে শুক্রবার সকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে বিজয় সমাবেশস্থল পরিদর্শন করেছেন আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতারা। ওবায়দুল কাদের সার্বিক কাজের অগ্রগতি পরিদর্শনে শেষে সাংবাদিকদের সামনে বিজয় সমাবেশে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেবেন বলে জানান। এছাড়াও সমাবেশ থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশেও বিশেষ বার্তা দেবেন শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, দুর্নীতি, মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের বিষয়ে নেতাকর্মীদের দূরে থাকতে আহ্বান জানাবেন দলের সভাপতি। বিশেষ করে মাদক নির্মূলে যে যুদ্ধ তাতে সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশনা আসবে এ সমাবেশ থেকে। ৩০ জানুয়ারি নির্বাচনে গণজোয়ারের মতো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও আজ গণজোয়ার সৃষ্টি হয়ে স্মরণকালের বিশাল সমাবেশে রূপ নিবে। এটা আওয়ামী লীগের ও শেখ হাসিনার সততার ফসল। সারাদেশ থেকে মানুষের ঢল নামবে। ৩০ ডিসেম্বর টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের রেকর্ড করলেও বিজয় মিছিল না করার ঘোষণা দেয় দলটি। কিন্তু বিজয় আনন্দ থেকে নেতাকর্মীদের বঞ্চিত করতে চায় না আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। তাই আজ শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিজয় সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়। বিজয় সমাবেশ থেকে দেশবাসীকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জানা গেছে, বিজয় সমাবেশকে বিজয় আনন্দে রূপ দিতে বরেণ্যে শিল্পীরা বিভিন্ন গান পরিবেশন করবেন। এ লক্ষ্যে মূল বিজয় মঞ্চের সামনে পৃথকভাবে আরেকটি মঞ্চ করা হয়েছে। মূল মঞ্চের ব্যাকগ্রাউন্ডে একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনী ইশতেহারের মলাটের রঙের আদলে সজ্জিত করা হয়েছে। সকাল ১১টার পর থেকে বিজয় সমাবেশে নেতাকর্মীরা প্রবেশ করতে শুরু করবে। দুপুর ১২টার পর সঙ্গীত শিল্পীরা বিভিন্ন গান পরিবেশন শুরু করবেন। দুপুর আড়াইটার পর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সমাবেশস্থলে আসবেন। আওয়ামী লীগ সভাপতির আগমনের সময় শিল্পী মমতাজ গান পরিবেশন করবেন এবং মঞ্চে আসন গ্রহণের পর ‘জিতবে এবার নৌকা’ গানের শিল্পীরা সমবেত কণ্ঠে গান পরিবেশন করবেন। বিজয় সমাবেশ গান পরিবেশন করবেন শিল্পী মমতাজ বেগম, আঁখি আলমগীর, রফিকুল আলম, ফাহমিদা নবী, কল্পনা মজুমদার, জলের গান এবং ‘জিতবে এবার নৌকা’ গানের শিল্পীরা। এরপর দলের নেতারা বক্তব্য রাখবেন। মূল অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন দলের প্রচার সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন। শুক্রবার প্রস্তুতির শেষ দিনে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের বিশেষ বর্ধিত সভায় তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সমাবেশ বর্ণিল কিন্তু সুশৃঙ্খল হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য শেষ হওয়া পর্যন্ত সবাইকে উপস্থিত থাকার নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি। এদিকে সমাবেশকে সামনে রেখে সমাবেশের মঞ্চ, সাজসজ্জা ও মাঠ পরিষ্কার করা হয়েছে। খাবারের পানি, পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থাসহ সকল প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। সমাবেশস্থলে কেউ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সমাবেশের শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য নেতাকর্মীদের মিছিলে বহন করে আনা ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে সমাবেশস্থলে প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছে। উদ্যানের ৬টি গেইটের মধ্যে শিখা চিরন্তন গেইট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জাতীয় নেতৃবৃন্দ, আর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের গেইট দিয়ে আমন্ত্রিত অতিথিরা প্রবেশ করবেন। তিন নেতার মাজার সংলগ্ন গেইট, বাংলা একাডেমির সামনের গেইট, টিএসসি গেইট ও চারুকলার সামনের গেইট দিয়ে দলয় নেতাকর্মীরা প্রবেশ করবেন। উল্লেখ্য, গত ৩০ জানুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবেই ২৫৭টি আসনে জয়লাভ করে। মহাজোটগতভাবে ২৮৮ আসনও রয়েছে আওয়ামী লীগের দখলে। ওই নির্বাচনে বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট পায় মাত্র সাতটি আসন। ৫২ হাজার লাল-সবুজের পতাকা উড়াবে যুবলীগ ॥ দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগের যে কোন সভা-সমাবেশে ভিন্নমাত্রা এনে দেয় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ। শনিবারের বিজয় উৎসবে ভিন্নমাত্রা দিতে লাল-সবুজের পতাকা ও লাল ফিতা হাতে নিয়ে মাঠে থাকবে সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী। এজন্য সব ধরনের প্রস্ততি শেষ করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্র্রাট জানিয়েছেন, শনিবারের আওয়ামী লীগের বিজয় সমাবেশকে বিশেষভাবে স্মরণীয় করে রাখতে ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। ২৫টি থানা ও ৭৫টি ওয়ার্ডের নেতাদের ডেকে একাধিক বর্ধিত সভা করে নেতাকর্মীকে উপস্থিত থাকতে প্রয়োজনীয় দিক-নিদের্শনা দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, প্রত্যেক ওয়ার্ড থেকে ৭শ’ নেতাকর্মী লাল-সবুজের গেঞ্জি পরিহিত হয়ে মিছিল নিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উপস্থিত হবেন। তাদের সবার হাতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা এবং লাল ফিতা থাকবে। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা যখন বক্তৃতা করবেন পতাকা নেড়ে তাঁকে স্বাগত জানানো হবে।
×