ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রয়োজন ১৭৫ বিলিয়ন ডলার

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ১৯ জানুয়ারি ২০১৯

  বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রয়োজন ১৭৫ বিলিয়ন ডলার

রশিদ মামুন ॥ বিদ্যুত উৎপাদনের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ অর্থ সংগ্রহ করা। সংশোধিত উৎপাদন-সঞ্চালন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ২০৪১ সাল মেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ১৭৫ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। এরমধ্যে উৎপাদনখাতে প্রয়োজন ১৫০ বিলিয়ন ডলার আর বাকি ২৫ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন সঞ্চালনে। তবে বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন অন্তর্ভুক্ত করলে এই বিনিয়োগের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে। বিদ্যুত জ¦ালানি খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলছেন, বিশাল এই অর্থ সংগ্রহ সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তবে বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীরা এখন বাংলাদেশের বিদ্যুতখাতে সম্ভাবনা দেখছেন। ফলে অর্থায়ন সংগ্রহ করা কঠিন হবে না বলেও তিনি মনে করেন। গত ১০ বছরে দেশের বিদ্যুতখাতের অগ্রগতি দেখে বিশে^র বড় বড় কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করছে। একই সঙ্গে বিনিয়োগকারী হিসেবে বিশে^র বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও বাংলাদেশে আসছেন। সরাসরি ব্যাংকগুলো বিদ্যুত বিভাগে নিজেদের আগ্রহ প্রস্তাব জমা দিচ্ছে। পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান বলছে ২০৪১ সালে বাংলাদেশের প্রয়োজন হবে ৮২ হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্র। এই সময়ের মধ্যে প্রতিবছরই একটু একটু করে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। এভাবে ২০৪১ এ গিয়ে মোট ৭৫ হাজার ৫০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুত চাহিদা তৈরি হবে। প্রতিবছরের হিসেবে দেখা যায় ২০২০ তে ৯০৪ মেগাওয়াট, ২০২১ এ ৯২৪ মেগাওয়াট, ২০২২ এ ২ হাজার ৮৪০ মেগাওয়াট, ২০২৪ এ ৪ হাজার ২৮ মেগাওয়াট, ২০২৫ এ ২ হাজার ৬৩৪ মেগাওয়াট, ২০২৬ এ ৪ হাজার ১৮ মেগাওয়াট, ২০২৭ এ ও ৪ হাজার ১৮ মেগাওয়াট, ২০২৮ এ ৪ হাজার ৪৩৮ মেগাওয়াট, ২০২৯ এ ৩ হাজার ১৬৪ মেগাওয়াট, ২০৩০ এ ৪ হাজার ৩৪৩ মেগাওয়াট, ২০৩১ এ ৩ হাজার ৪০৮ মেগাওয়াট, ২০৩২ এ ২ হাজার ১২০ মেগাওয়াট, ২০৩৩ এ ২ হাজার ৮১৬ মেগাওয়াট, ২০৩৪ এ ২ হাজার ৪৪৬ মেগাওয়াট, ২০৩৫ এ ৫ হাজার ৩২ মেগাওয়াট, ২০৩৬ এ ৫ হাজার ২২০ মেগাওয়াট, ২০৩৭ এ ২ হাজার ৮৬৬ মেগাওয়াট, ২০৩৮ এ ৫ হাজার ৮৬ মেগাওয়াট, ২০৩৯ এ ৩ হাজার ৫৫০ মেগাওয়াট, ২০৪০ এ ৫ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট, ২০৪১ এ ২ হাজার ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনে আসবে। বিদ্যুতখাতে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য চার ধাপে ১৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। এরমধ্যে ২০১৭ থেকে ২০২৫ এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে ৫৬ বিলিয়ন ডলার। এরপরের ধাপ ২০২৬ থেকে ২০৩০ এ প্রয়োজন পড়বে ৩৮ বিলিয়ন ডলার, ২০৩১ থেকে ২০৩৫ এর মধ্যে প্রয়োজন হবে ২৭ বিলিয়ন ডলার আর বাকি ২০ বিলিয়ন ডলার খরচ করতে হবে শেষ ধাপ ২০৩৬ থেকে ২০৪১ এর মধ্যে। উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সরকার জ¦ালানির বহুমুখী ব্যবহারের কথা চিন্তা করছে। বিদ্যুত উৎপাদনে সব ধরনের প্রচলিত জ¦ালানি ব্যবহারের সঙ্গে নবায়নযোগ্যখাত থেকে বিদ্যুত উৎপাদনে জোর দেয়া হচ্ছে। এরমধ্যে কয়লাভিত্তিক বড় বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। কাজ চলছে পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্রের। এর বাইরেও এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে সরকার। বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের পাশাপাশি সরকারী কোম্পানি নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি খুলনার রূপসা এবং পায়রাতে বড় এলএনজি ভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। দেশের দক্ষিণ পশ্চিম অংশের পাশাপাশি দক্ষিণের চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারের মহেশখালীতে এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করতে কয়েকটি বিদেশী কোম্পানি প্রস্তাব দিয়েছে। মহাপরিকল্পনায় ২০৪১ সালে জ¦ালানি মিশ্রণের পরিমাণ দেখানো হয়েছে তাতে বলা হচ্ছে গ্যাস এবং এলএনজি তে সব থেকে বেশি ৪৩ ভাগ বিদ্যুত আসবে। এরপরেই কয়লা থেকে ৩২ ভাগ, আমদানি থেকে ১৫ ভাগ, পরমাণু থেকে ৬ ভাগ, জল থেকে এক ভাগ এবং তরল জ¦ালানি থেকে ২ ভাগ বিদ্যুত আসবে। যদিও দক্ষিণ এশিয়ার বিদ্যুত বাণিজ্যে ভারত তার ভূখ- ব্যবহারের ছাড় দেয়ায় আমদানির পরিমাণ বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ভারতে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হলেও তার ভূখ- ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে গত ডিসেম্বরে নীতি প্রণয়ন করেছে। এতে করে বাংলাদেশ নেপাল এবং ভুটান থেকে আরও বেশি বিদ্যুত আমদানি করতে পারবে। ভারতের নিজেদের বাজার থেকেও বাংলাদেশ চাইলে বেশি বিদ্যুত আনতে পারবে। ফলে ভবিষ্যতে বিদ্যুত আমদানির পরিমাণ আরও বাড়বে। সঞ্চালনের ক্ষেত্রে মহাপরিকল্পনায় ২৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা বলা হচ্ছে। এরমধ্যে ২০১৭ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার, ২০২৬ থেকে ২০৩০ এ ৪ বিলিয়ন, ২০৩১ থেকে ২০৩৫ এ আরও ৪ বিলিয়ন এবং শেষ ৬ বছরে ২০৩৬ থেকে ২০৪১ পর্যন্ত আরও ৪ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন বিদ্যুত শুধু উৎপাদন করলেই হবে না। বিদ্যুত মানুষের কাছে পৌছেও দিতে হবে। সঙ্গত কারণে সঞ্চালনেও বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। এতেও বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ প্রয়োজন হয়।
×