ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাধারণের পাশে আস্থার প্রতীক- সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি

প্রকাশিত: ০৪:৪২, ১৯ জানুয়ারি ২০১৯

 সাধারণের পাশে আস্থার প্রতীক- সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি

বিকাশ দত্ত ॥ হত-দরিদ্র ও অসহায়দের আইনী সেবা দিতে নিরলসভাবে কাজ করছে সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি। সারা দেশে জাতীয় আইনগত সহায়তা কেন্দ্রের মধ্যে সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড সব চেয়ে বেশি আইনী পরামর্শ প্রদান করেছে বলে জানা যায়। এ ছাড়া বিচারের দীর্ঘসূত্রতা বা বিলম্বের জন্য যারা দীর্ঘ সময় ধরে কারাগারে আটক আছেন তাদের জন্যও সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি কাজ করছে। কারাগারে যারা দীর্ঘদিন ধরে আছে এমন আসামিদের বিষয়ে হাইকোর্টের নজরে আনলে হাইকোর্ট মামলা নিষ্পত্তিসহ বিভিন্ন ধরনের আদেশ প্রদান করেছে। এতে করে অনেকেই জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এর আগেও বিচারের দীর্ঘ সূত্রতার কারণে ১০ ও ৫ বছরের অধিক যারা কারাগারে আটক আছেন তাদেরও তালিকা চাওয়া হয়েছিল। এর প্রেক্ষিতে কারা কর্তৃপক্ষ ৪৬২ জনের তালিকা পাঠায়। তার মধ্যে ১০ বছরের অধিক যারা বিচারের দীর্ঘ সূত্রতার কারণে আটক আছে এমন ৫৮ জনের বিষয়ে আদালতের নজরে আনা হয়। এর মধ্যে ১৮ জনের জামিন দেয়া হয়। ৯ বছরের উর্ধে ১৯ জনের বিষয়ে আদালতের নজরে আনা হলে ২ জন জামিন পান। বাকিদের বিষয়ে আদালত বিভিন্ন বিচারিক আদেশ দিয়ে মামলা নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেয়। এ ছাড়া বিলম্বে বিচারের কারণে দীর্ঘ ৭ বছরের উর্ধে দেশের ৬৮টি কারাগারে ১৩৯ জন হাজতির বিচার নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। যাদের বিষয়ে আইনী সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে আবেদন কেউ করে না। তাদের অপরাধের মাত্রা বা কি অপরাধে আটক সেটি বিবেচনায় নিয়ে প্রচলিত আইনানুযায়ীই শাস্তি নিশ্চিত হয়। কিন্তু শাস্তি নিশ্চিত হওয়ার আগেই যদি দীর্ঘদিন যাবত বা এক যুগ/দেড় যুগ ধরে শাস্তি ভোগ করতে হয় তাহলে বিচার প্রক্রিয়ার আরেকটু সংস্কার দরকার বলে আইন বিশেষজ্ঞরা মতামত প্রদান করেছেন। কারণটা হলো, কোন অপরাধে কাউকে আটক করার পর বিচারিক আদালত বা ট্রায়াল কোর্টে বিচার কার্য পরিচালনা হয়। সাক্ষী চলমান থাকা বা সাক্ষী না আসার কারণেই মূলত বিচারিক আদালত মামলা নিষ্পত্তি করতে পারছে না। এক্ষেত্রে প্রসিকিউশন মূল ভূমিকা নিতে পারে। কারণ মামলা সুষ্ঠুভাবে নিষ্পত্তিতে সাক্ষীদের যথাসময়ে আদালতে হাজির করা প্রসিকিউশনের দায়িত্ব। সাক্ষী আসে না বা সাক্ষী না আসার কারণে ১০-১৭ বছর কারাগারে থাকা বাস্তবসম্মত নয়। দরিদ্র জনগণকে আইনগত সহায়তা দিতে সাংবিধানিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল বলেই আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০ পাস করে। এই আইন অনুযায়ী সরকারী আইন সহায়তা কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য ২০০০ সালের ৪ জুন ১৪৬ নং প্রজ্ঞাপন দ্বারা একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়। আইনগত সহায়তা বিষয়ক আইনটি পাস হওয়ার পর ২০০০ সাল থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত সরকারী আইন সহায়তা কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির পাশাপাশি সাধারণের পাশে আস্থার প্রতীক হিসেবে ধরা দিয়েছে। ২০০০ সাল হতে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সরকারী আইন সহায়তা কার্যক্রম শুধু আইন ও নীতিমালা প্রণয়নের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। মূলত ২০০৯ সালের পর থেকে সরকারী আইন সহায়তা কার্যক্রমের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। সম্প্রতি হাইকোর্ট বিচারের দীর্ঘ সূত্রতার বা বিলম্বের বিচারের কারণে দীর্ঘ ৭ বছরের উর্ধে দেশের ৬৮টি কারাগারে ১৩৯ জন হাজতির বিচার গত বছরের ৩১ আগস্টের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয়। সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইডের প্যানেল আইনজীবী কুমার দেবুল দে ১৩৯ কারাবন্দীর বিষয়টি নজরে আনলে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন। সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড দ্বিতীয় বিচারের দীর্ঘসূত্রতা বা বিলম্ব বিচারে সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে আটক ব্যক্তিদের তথ্য চেয়ে দেশের আটটি বিভাগের ৬৮টি কারাগারে গত বছরের ১৯ নবেম্বর চিঠি দেয় সুপ্রীমকোর্টের লিগ্যাল এইড। এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর কারা কর্তৃপক্ষ ২৫৬ জনের তালিকা পাঠায়। লিগ্যাল এইড থেকে পাওয়া তালিকা অনুযায়ী, ঢাকা বিভাগে সাত বছরের বেশি সময় ধরে কারাবন্দী ৪৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৩ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৬ জন, সিলেট বিভাগে ১২ জন, বরিশাল বিভাগে ১ জন, খুলনা বিভাগে ৫ জন, রংপুর বিভাগে ১০ জন ও ময়মনসিংহ বিভাগে ৮ জন। সে তালিকা থেকে যাচাই-বাছাইয়ের পর রবিবার ১৩৯ কারাবন্দীর বন্দীদশা নজরে আনে লিগ্যাল এইড। এর আগেও বিচারের দীর্ঘ সূত্রতার কারণে ১০ ও ৫ বছরের অধিক যারা কারাগারে আটক আছেন তাদের তালিকা চাওয়া হয়েছিল। এর প্রেক্ষিতে কারাকর্তৃপক্ষ ৪৬২ জনের তালিকা পাঠায়। তার মধ্যে ১০ বছরের অধিক যারা বিচারের দীর্ঘ সূত্রতার কারণে আটক আছে এমন ৫৮ জনের বিষয়ে আদালতের নজরে আনা হয়। এর মধ্যে ১৮ জনের জামিন দেয়া হয়। ৯ বছরের উর্ধে ১৯ জনের বিষয়ে আদালতের নজরে আনা হলে ২ জন জামিন পান। বাকিদের বিষয়ে আদালত বিভিন্ন বিচারিক আদেশ দিয়ে মামলা নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেন। যার মধ্যে সিপন রিপনসহ ৪ জনকে বিচারিক আদালত খালাস দিয়েছেন। ওই চিঠিতে বলা হয়, সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি দেশের উচ্চ আদালতে সরকারী আইনী সেবা নিশ্চিতকরণে কাজ করে চলছে। নিম্ন আদালতে বিচারে জন্য প্রস্তুত হওয়া মামলাসমূহ সাক্ষ্যগ্রহণসহ নানাবিধ কারণে দীর্ঘ সময় ধরে অনিষ্পত্তি অবস্থায় রয়েছে। ফলে কার্য্যত সাজা হওয়ার পূর্বেই আটক বন্দী দীর্ঘদিন যাবত কারাভোগ করছেন। সরকারী আইনী সেবা সুনিশ্চিত করার তাদের একটি পূর্ণাঙ্গ ও হালনাগাদ তালিকা প্রয়োজন। ৭ বছরের উর্ধে আটক থাকা হাজতিদের তালিকা সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইডে পাঠালে অসচ্ছল হাজতিদের আইনী সহায়তা দেয়া করা সম্ভব হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। দেশের স্বল্প আয়ের ও অসহায় নাগরিকদের আইনী সেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ২০০০ সালে ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন’ করা হয়। এ আইনের অধীনেই প্রতিষ্ঠা করা হয় জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা। সংস্থার অধীনে সুপ্রীমকোর্টসহ দেশের ৬৪ জেলায় লিগ্যাল এইড কমিটি বিনামূল্যে আইনী সেবা নিয়ে কাজ করছে।
×