ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জাপানে বাংলাদেশী অভিবাসন প্রত্যাশীর হাতে হাতকড়া ॥ অনলাইনে তোলপাড়

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ১৯ জানুয়ারি ২০১৯

 জাপানে বাংলাদেশী  অভিবাসন প্রত্যাশীর  হাতে হাতকড়া ॥  অনলাইনে  তোলপাড়

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ জাপানে অভিবাসন প্রত্যাশী এক বাংলাদেশীকে কোমরে দড়ি ও হাতকড়া পরিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ছবি প্রকাশের পর অনলাইনে তোলপাড় চলছে। আটক অভিবাসন প্রত্যাশীর সঙ্গে দুর্ধর্ষ অপরাধীর মতো আচরণ করাকে মেনে নিতে পারছেন না অনেকে। অভিবাসন প্রত্যাশীদের মানবাধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে জাপানী অভিবাসন কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দিয়েছেন কেউ কেউ। টোকিওর আঞ্চলিক অভিবাসন ব্যুরোর দাবি, পালিয়ে যাওয়া ঠেকাতে হাতকড়া পরানো ও দড়িবাঁধা জরুরী ছিল। জাপানের একটি হাসপাতালে গত বছরের অক্টোবরে তোলা একটি ছবি সম্প্রতি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। জাপান টাইমসে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, হাতকড়া পরানো অবস্থায় মারুফ আব্দুল্লাহ নামে এক বাংলাদেশী অভিবাসন প্রত্যাশীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে নিয়ে গেছেন অভিবাসন কর্মকর্তারা। তাদেরই একজন আবার মারুফের কোমরে বাঁধা দড়িটি ধরে রেখেছে। গত অক্টোবরে এক প্রত্যক্ষদর্শী হাসপাতালের ভেতরে ছবিটি তুলেছিলেন। পরে আশাহি ওডা নামে একজন ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন। আশাহি ওডা জাপানে অভিবাসন প্রত্যাশীদের আটকের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে থাকেন। জাপান টাইমস জানিয়েছে, এরই মধ্যে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ছবিটি নিয়ে তুমুল বিতর্ক ও আলোচনা চলছে। ছবির নিচে দেয়া কমেন্টে একজন লিখেছেন, এ ঘটনাকে আমার কাছে নিষ্ঠুর আচরণ মনে হলো। উনি তো চোর বা খুনী নন। এসওয়াইআই পিংকি ড্রাগন নামে এক টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন, জাপানের অভিবাসন কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ থেকে আসা এক অভিবাসন প্রত্যাশীকে কোমরে দড়িবাঁধা এবং হাতে হাতকড়া পরা অবস্থায় হাসপাতালে যেতে বাধ্য করেছে। এভাবে অপমান করা হয়েছে তাকে। অবশ্য এটি নতুন কোন ঘটনা নয়। অনেক অবৈধ অভিবাসী ও শরণার্থীকেই অভিবাসন কর্মকর্তাদের কাছে এভাবে অপদস্থ হতে হয়।’ পুকি টু নামের একজন পাঠক প্রতিবেদনটির নিচের কমেন্টে লিখেছেন, ওই ব্যক্তি ধর্ষক কিংবা খুনী হলে আমি কিছু বলতাম না। তবে তিনি একজন অভিবাসন প্রত্যাশী। তাকে একজন মাত্র অভিবাসন কর্মকর্তার জিম্মায় রাখা যেত না? ওই কর্মকর্তা সাদা পোশাকে থাকতে পারতেন না। দেখে মনে হচ্ছে যেন একটা পাগলা কুকুরকে শেকল পরিয়ে রেখেছেন তারা। খুবই নির্মম। জাপানে অভিবাসন প্রত্যাশীদের মানবাধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন সে দেশের চিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ল’ স্কুলের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনবিষয়ক অধ্যাপক ইয়াসুজো কিতামুরা। তিনি বলেন, যতটা সম্ভব অভিবাসন কেন্দ্রে আটক থাকাদের মানবাধিকারের সুরক্ষা দিতে হবে। আদালতে দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত কোন অভিযুক্ত ব্যক্তির যেমন সুরক্ষা দেয়া হয় তেমন কিংবা তারচেয়েও বেশি সুরক্ষা আটক অভিবাসন প্রত্যাশীদের দিতে হবে। বাংলাদেশের অভিবাসন প্রত্যাশীর হাতে হাতকড়া নিয়ে জাপান টাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি রিটুইট করেছেন জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) নীতিমালা উন্নয়ন ও মূল্যায়নবিষয়ক সাবেক প্রধান জেফ ক্রিস্প। জাপানে বৈধ ভিসাহীন অভিবাসন প্রত্যাশীদের অভিবাসন কেন্দ্রে আটক রাখা হয়। সেখানে রেখেই তাদের বিতাড়নের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কর্তৃপক্ষ। যারা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে পারে না এবং যারা অনেকবার অভিবাসনের জন্য আবেদন করে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের আটক করা হয়। জাপানের অভিবাসন ব্যুরোর দাবি, আইন মন্ত্রণালয়ের অধ্যাদেশ মেনেই আটকদের হাতকড়া ও দড়ি পরায় তারা। তবে এ হাতকড়া ও দড়ি পরানোর দৃশ্য যেন জনপরিসরের সামনে না আসে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকেন তারা। আইন মন্ত্রণালয়ের সংশোধন ব্যুরো বলছে, জনসমক্ষে যেন এমন ঘটনা না ঘটে তা নিশ্চিত করতে অভিবাসন কর্মকর্তাদের হাসপাতালে ইউনিফর্ম না পরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে। তাছাড়া আটক ব্যক্তিকে সাধারণত হাসপাতালের পেছন দিকের দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে বলা হয়। জাপান টাইমস জানিয়েছে, মারুফ আব্দুল্লাহর (৩৬) কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই ছবি ও নাম প্রকাশ করেছে তারা। মারুফ চান তার মতো মানুষদের সঙ্গে কেমন আচরণ করা হয় তা জনগণ জানুক। তিনি বলেন, আমি অপরাধী নই। হাতকড়া ও দড়ি পরানোকে অপমানজনক বলে উল্লেখ করেন তিনি। উল্লেখ্য, এর আগে ১৯৯৫ সালে এক আসামিকে হাতকড়া পরিয়ে হাসপাতালে নেয়ায় ওই বিবাদীকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিল ওসাকা ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট। বলা হয়েছিল, ওভাবে বেঁধে নিয়ে যাওয়ায় আসামির ব্যক্তিগত অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়েছে। পরে আদালতের ওই রুলটি বহাল রাখে সুপ্রীমকোর্ট।
×