ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সমাপ্তি

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ১৯ জানুয়ারি ২০১৯

 আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের  সমাপ্তি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কেটে গেল সিনেমাপ্রেমীদের সুন্দরতম কয়েকটি দিন। দেখা হলো দেশ-বিদেশের বিবিধ বিষয়ের চলচ্চিত্র। জানা হলো নিজ সংস্কৃতির সঙ্গে ভিনদেশী সংস্কৃতির চালচ্চিত্র। দেখা হয়েছে নানা দেশের তথ্যচিত্র থেকে স্বল্পদৈর্ঘ্য কিংবা পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। সিনেমার বিষয় কিংবা গল্পের গভীরতায় ছবিপ্রেমীরা খুঁজে পেয়েছেন ভাললাগার অনুভব। সেই ভাললাগার রেশ ধরে শেষ হলো সপ্তদশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। ৭২টি দেশের ২১৮টি সিনেমায় সজ্জিত এ উৎসবের শেষ দিন ছিল শুক্রবার। সমাপনী আয়োজনে মেলানো হয়েছে নতুন প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির সমীকরণ। নয় দিনের চলচ্চিত্র পরিভ্রমণ শেষে জুরিদের মাধ্যমে এসেছে ভাল ছবির মূল্যায়ন। পুরস্কার অর্জনের মাধ্যমে উৎসবের ছয় বিভাগের সেরা নির্মাতারা পেয়েছেন ভাল ছবি নির্মাণের স্বীকৃতি। জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে উৎসবের যবনিকা টানা হয়। বিকেলে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন তথ্য সচিব আবদুল মালেক। স্বাগত বক্তব্য দেন উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল। সভাপতিত্ব করেন উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। এছাড়া দেশ-বিদেশের চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট আমন্ত্রিত অতিথি ও বিচারকদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন উৎসব কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য ম. হামিদ, কবি ও স্থপতি রবিউল হুসাইন, বিচারকমন্ডলীর সদস্য ইলিয়াস কাঞ্চন প্রমুখ। উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ উইমেন্স ফিল্ম মেকারস বিভাগে রাইজিং সাইলেন্স শীর্ষক তথ্যচিত্রের মাধ্যমে সেরা তথ্যচিত্র নির্মাতার পুরস্কার অর্জন করেন লীসা গাজী। এই নির্মাতার পুরস্কারের স্মারক গ্রহণের পর্বটি ছুঁয়ে উপস্থিত দর্শকদের হৃদয়। বীরাঙ্গনাদের নিয়ে নির্মিত ডকুমেন্টারির নির্মাতা লীসা গাজী মঞ্চে ডেকে নেন দুই বীরাঙ্গনা রিজিয়া বেগম ও নূরজাহান বেগমকে। এ সময় মিলনায়তন পরিপূর্ণ চলচ্চিত্রানুরাগীরা দাঁড়িয়ে সম্মান জানান বীরাঙ্গনাদ্বয়কে। অনুভূতি প্রকাশে লীসা গাজী বলেন, আমার ছবির টিম মেম্বারদের অসাধারণ সহযোগিতার কারণেই বীরাঙ্গনাদের জীবনীভিত্তিক তথ্যচিত্রটি নির্মাণ সম্ভব হয়েছে। এই ছবিতে উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধে তাদের ত্যাগী জীবনের গল্প। আর এই গল্পের মূল ভিত্তি ন্যায়বিচার। এমন অবিচার যেন পৃথিবীর আর কোথাও না হয়। সারা বিশ্ব যেন এদেশের বীরাঙ্গনাদের জীবনের সেই ত্যাগের স্বীকৃতি দেয়। উইমেন্স ফিল্ম মেকারস বিভাগে শ্রেষ্ঠ ফিচার ফিল্মের পুরস্কার অর্জন করেছে ফিলিপাইনের নির্মাতা ডেনিস ওহারা নির্মিত চলচ্চিত্র ‘মামাং’। এই বিভাগে বিশেষ পুরস্কার পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, বুলগেরিয়া ও ইতালির যৌথ প্রযোজনায় লারা লি নির্মিত ছবি ‘বার্কিনেব বাউন্টি’। এ বিভাগে শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের স্বীকৃতি পেয়েছে যুক্তরাজ্যের ফাতেমি আহমাদী নির্মিত ছবি ‘বিটার সি’। উৎসবের বাংলাদেশ প্যানোরমা বিভাগে সনাতন গল্প শীর্ষক চলচ্চিত্রের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ সমালোচক ফিপ্রেসি জুরি পুরস্কার পেয়েছেন মাসুম আজিজ। আবেগাপ্লুত এই নির্মাতা বলেন, আমার ছবির গল্পটা অনেক সংগ্রামের। এই ছবি নির্মাণের মাঝেও মিশেছিল অনেক সংগ্রাম। ছবির কলাকুশলীদের অনেকেই বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করেছেন এই ছবিতে। ২১ বছর সময় লেগেছে চলচ্চিত্রটি সম্পন্ন করতে। ঘাটে ঘাটে বাধা পেরুতে হয়েছে। আজকের এই পুরস্কার ভুলিয়ে দিয়েছে সব কষ্ট। এশিয়ান ফিল্ম কম্পিটিশন বিভাগে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের মর্যাদা পেয়েছে কাজাখস্তানের আজবেক ডায়ারবেকভ নির্মিত ছবি ‘দ্য সং অব দ্য ট্রি’। এ বিভাগে ‘রোডি ভেরা’ শীর্ষক ছবির জন্য সেরা চিত্রনাট্যের পুরস্কার পেয়েছেন ফিলিপাইনের নির্মাতা চিতো রোনো। এ বিভাগে ‘ডিপ ওয়েল’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ সিনেমাটোগ্রাফির পুরস্কার পেয়েছেন কাজাখস্তানের নির্মাতা জানাবেক জেটিরোভ। একই বিভাগে তুরস্কের উমিত উনাল নির্মিত ‘সিরিয়াল কুকু’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন দিমেত এভগার। তুরস্কের টায়লান মিন্টাস নির্মিত ‘ব্রাদারস অব সাইলেন্স’ ছবির জন্য একই বিভাগে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন ইজিত এজ ইয়াজার। এ বিভাগে ‘ড্রেসেজ’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ নির্মাতার পুরস্কার পেয়েছেন ইরানের পয়া বাদকোবেহ। দর্শকের মূল্যায়নে বেস্ট অডিয়েন্স এ্যাওয়ার্ড পেয়েছে ভারতের সৃজিত মুখার্জি নির্মিত ছবি ‘এক যে ছিল রাজা’। শ্রেষ্ঠ শিশু চলচ্চিত্র হিসেবে লিটল প্রিন্স অব আওয়ার সিটি ছবির মাধ্যমে বাদল রহমান পুরস্কার পেয়েছেন কাজাখস্তানের নির্মাতা তালগাত তেমেনোভ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে কে এম খালিদ বলেন, আমরা জানি এ ধরনের চলচ্চিত্র উৎসবের জন্য একটি উপযুক্ত ভেন্যুর প্রয়োজন রয়েছে। যেখানে শব্দ ব্যবস্থাপনা, স্বচ্ছ পর্দাসহ থাকবে আধুনিক মিলনায়তনে। এ বিষয়টি ভাবনায় নিয়ে আমরা জাতীয় জাদুঘর এবং জাতীয় গণগ্রন্থাগারে দুটি অডিটরিয়াম নির্মাণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করব। আমরা এই শহরে ছবি দেখার জন্য নির্দিষ্ট মিলনায়তন প্রতিষ্ঠায় যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করব। সভাপতির বক্তব্যে শাহরিয়ার আলম বলেন, এই উৎসবের মাধ্যমে চমৎকার একটি সপ্তাহ কেটে গেল সিনেমাপ্রেমীদের। সারা বছর আমরা এমন একটি সপ্তাহটির অপেক্ষায় থাকি। ২০২০ সালের ১১ থেকে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে অষ্টাদশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। আগামীতে আরো ভাল ছবি দেখার প্রত্যাশায় আসন্ন সেই উৎসবটির অপেক্ষায় থাকলাম। আশায় থাকব, পরবর্তী ১২ মাসে নির্মাতরা আবারও ভাল ছবি উপহার দেবেন আমাদের।
×