ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের সব হাসপাতালে জরুরী বিভাগকে বলা চলে নামসর্বস্ব

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ১৯ জানুয়ারি ২০১৯

 দেশের সব হাসপাতালে জরুরী বিভাগকে বলা চলে নামসর্বস্ব

নিখিল মানখিন ॥ দেশের সরকারী হাসপাতালের জরুরী বিভাগকে আধুনিকায়ন (পূর্ণাঙ্গ) করার উদ্যোগ থমকে গেছে। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নির্দেশে এ বিষয়ে গত বছরের শুরুতে বিশেষজ্ঞদের অভিমতের পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পূর্ণাঙ্গ জরুরী বিভাগ গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়। এরই অংশ হিসেবে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নতুন চারটি ইমার্জেন্সি অপারেশন থিয়েটার, সার্জিক্যাল এইচডিইউ ও ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের উন্নত যন্ত্রপাতি চালুকরণ উদ্বোধন করেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী। কিন্তু এক বছরে দেশের অন্য কোথাও পূর্ণাঙ্গ জরুরী বিভাগ গড়ে তোলা হয়নি। অপর্যাপ্ত অর্থ বাজেট ও জরুরী বিভাগের জন্য দক্ষ জনবলের অভাবেই এ কর্মসূচী বিলম্বিত হচ্ছে। জানা গেছে, দেশের সরকারী হাসপাতালের অপূর্ণাঙ্গ জরুরী বিভাগে চিকিৎসক স্বল্পতা, যন্ত্রপাতির অভাব ও অবকাঠামোগত সুবিধার অভাবে চিকিৎসা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ অনেক রোগীর । বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, ‘জরুরী বিভাগ’ যেকোন হাসপাতালের একটি স্পর্শকাতর জায়গা। এই বিভাগে আগত অধিকাংশ রোগীর অবস্থা সঙ্কটাপন্ন থাকে। তাদের জন্য প্রয়োজন পড়ে তাৎক্ষণিক কিছু বিশেষ চিকিৎসাসেবার। এই বিভাগের চিকিৎসাসেবায় ‘তাৎক্ষণিকতা’ ও ‘প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা’র মধ্যে সমন্বয় ঘটাতে হয়। দরকার পড়ে সর্বক্ষণিক চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীর। দেশের সব সরকারী মেডিক্যাল কলেজ, বিশেষায়িত ও জেলা হাসপাতালের জরুরী বিভাগে হাজার হাজার রোগী জরুরী চিকিৎসা নিতে যান। কিন্তু নামে জরুরী বিভাগ হলেও তারা সেখানে জরুরী চিকিৎসাসেবা পান না বলে অভিযোগ। জীবনঝুঁকিতে থাকা এসব রোগীকে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় হাসপাতালের বিভিন্ন ইনডর ওয়ার্ডে। এতে রোগীর জরুরী চিকিৎসা কার্যক্রম বিলম্বিত হওয়ার পাশাপাশি বেড়ে যায় মৃত্যুঝুঁকিও। জরুরী চিকিৎসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সময়। এজন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে হাসপাতালের জরুরী বিভাগকে মানসম্পন্নভাবে তৈরি ও আধুনিকায়ন করা হয়। দেশে প্রতিদিন যত লোক হাসপাতালে আসার কিছু সময়ের মধ্যে মারা যায়, এর বড় অংশকেই বাঁচানো সম্ভব হতো যদি উপযুক্ত জরুরী স্বাস্থ্যসেবা কার্যকর থাকত। অথচ দেশের সব হাসপাতালের জরুরী বিভাগই এক রকম নামসর্বস্ব। এগুলোয় পূর্ণাঙ্গ জরুরী চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা নেই। কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও দায়িত্ব পালন করেন না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, জরুরী চিকিৎসার জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য জনবলের পাশাপাশি যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামোগত ব্যবস্থাপনাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগসহ কিছু হাসপাতালে দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্তদের চিকিৎসাসেবা দেয়া সম্ভব হলেও অন্যান্য ক্ষেত্রে তা মিলছে না। তাই অন্যান্য জরুরী রোগীকে সামান্য কিছু চিকিৎসা দিয়ে, আবার কখনও কখনও না দিয়েই গাইনি, মেডিসিন, পেডিয়াট্রিক, হৃদরোগ বিভাগে পাঠানো হয়। এতে জরুরী রোগীকে হাসপাতালে নেয়ার পরও সঠিক চিকিৎসা পেতে আরও ২০ থেকে ২৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়। অথচ মানুষের জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময় এটা। এই সঙ্কটাপন্ন সময়ে কোন জরুরী রোগীকে সঠিক চিকিৎসা দেয়া হলে তার বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আবার অনেক সময় মরণাপন্ন রোগী জরুরী বিভাগ থেকে ইনডরে নেয়ার পথেই মারা যেতে পারেন। এসব কারণে ইমার্জেন্সি চিকিৎসাসেবা দেয়ার বিষয়ে সরকারের একটি নীতিমালা তৈরি করা দরকার।
×