ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ধোনির পুনর্জন্ম ভারতের ইতিহাস

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৯ জানুয়ারি ২০১৯

  ধোনির পুনর্জন্ম ভারতের ইতিহাস

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্টের পর ওয়ানডে সিরিজ জিতে নতুন ইতিহাস গড়ল ভারত। মেলবোর্নে শুক্রবার তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে স্বাগতিকদের ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে ২-১ এ সিরিজ জিতল বিরাট কোহলির দল। সফরকারীদের সাঁড়াশি বোলিংয়ের মুখে ৪৮.৪ ওভারে ২৩০ রানে অলআউট হয় এ্যারন ফিঞ্চের অস্ট্রেলিয়া। জবাবে ৪ বল বাকি থাকতে ৩ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ভারত। ৬/৪২Ñ ক্যারিয়ারসেরা বোলিং উপহার দিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন সফরে প্রথম সুযোগ পাওয়া লেগস্পিনার যুবেন্দ্র চাহাল। তবে বিশ্বকাপের আগে ‘ফিনিশার’ ধোনির পুনর্জন্ম ভারতীয়দের জন্য আরও বড় পাওয়া। ৫১, অপরাজিত ৫৫ ও ৮৭ রানের চমৎকার তিন ইনিংসে সিরিজসেরা সাবেক অধিনায়ক। নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে এই প্রথম অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট এবং ওয়ানডে সিরিজ জিতল ভারত। ৪৪তম ওভারের প্রথম পাঁচ বল ডট! শেষ বলে তড়িঘড়ি ১ রান নিয়ে মেডেন ঠেকালেন ধোনি। ৪২ বলে ৫৩ রানের লক্ষ্যটা তখন ৩৬ বলে ৫২। ধোনির দিকে সমালোচনার তীর ছোড়ার জন্য হাত নিশপিশ করছিল সবার। পরের ওভারে এক চারে ৮ রান এলো। ৫ ওভারে ৪৪ রান, হাতে ৭ উইকেট। ভারতের জয়ই তখন অবশ্যম্ভাবী। হার বা জয়, যাই হোক না কেন, শিরোনামে ধোনির থাকা নিশ্চিত। ২৩০ তাড়া করতে নেমে ধোনিই তো ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেলেন। ৭ উইকেটের জয়ে সিরিজ জিতে গড়লেন ইতিহাস। পিটার সিডলের করা ৪৬তম ওভার ম্যাচটা ভারতের দিকে ঝুলিয়ে দেয়। প্রথম দুই বলে দুই ওয়াইড আর এক চারে আসে ৮ রান। ওই ওভারের ১১ রানে সমীকরণ দাঁড়ায় ৪ ওভারে ৩৩ রান। ঝাই রিচার্ডসনের ওভারটি কাটিয়ে দেয় ভারত। অস্ট্রেলিয়ার সেরা বোলারের ওভার শেষ হওয়ার পরও সফরকারীরা বিপদে পড়তে যাচ্ছিল। মার্কাস স্টয়নিসের প্রথম বলে ক্যাচ দিয়েছিলেন ধোনি, প্রতিপক্ষ অধিনায়ক এ্যারন ফিঞ্চ সেটা ফেলে দেন! ৭৪ রানে দ্বিতীয়বার জীবন পান ধোনি। ম্যাচটাও যেন ওখানেই শেষ। ৫৯ রানে ২ উইকেট হারানো ভারতের ইনিংস তখন ধুঁকছিল। শূন্য রানে থাকা ধোনি ক্যাচ দিয়েছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের কাছে। অস্ট্রেলিয়া দলের সেরা ফিল্ডার সে ক্যাচটিও ফেলে দেন। মাত্র ২৩০ রানের লক্ষ্য নিয়ে নামা এক দল যখন ধোনির ক্যাচই দুবার ফেলে, তখন আর তাদের পক্ষে জয় পাওয়া সম্ভব নয়। ভারতের কাছে প্রথমবারের মতো ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজ হারাটাও নিশ্চিত হয়ে যায়। ৭ উইকেট হাতে নিয়ে শেষ ২ ওভারে ১৪ রান নিতে পারবে না ভারত, এত একটা অসম্ভব চিন্তা। ধোনি আর ঝামেলা বাড়াননি, কেদার যাদবের সঙ্গে চতুর্থ উইকেট জুটিটা ১২১ পর্যন্ত টেনে নিয়ে ম্যাচ শেষ করে আসেন ৪ বল আগে। জয় এনে দেয়া শটটি ৬১ রান করা যাদবের হলেও জয়টা এনে দিয়েছেন ধোনিই। ১১৪ বলে ৮৭ রান করে অপরাজিত সিরিজ জয়ের নায়ক। ৪৯তম ওভারে ১৩ রান দিয়ে পিটার সিডল প্রমাণ করেছেন, তাকে ৮ বছর পর দলে টেনে নির্বাচকেরা যে জুয়া খেলতে চেয়েছেন সেটা বোকামিই ছিল। বাকি তিন পেসারের তুলনায় একেবারেই নবিশ বোলিং করেছেন অভিজ্ঞতম পেসার। টানা দুই ম্যাচে বিপদে থাকা দলের ইনিংসে প্রথমে থিতু হয়ে পড়ে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ম্যাচ শেষ করেছেন ধোনি। ২০১৯ বিশ্বকাপের আগে তার দলে জায়গা নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথমবারের মতো সিরিজ জিতিয়ে সব প্রশ্ন ধামাচাপা দিলেন ভারতের দু-দুটি বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক। এর আগে চাহালের স্পিনের কোন জবাবই দিতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। সর্বোচ্চ ৫৮ রান আসে পিটার হ্যান্ডসকম্বের ব্যাট থেকে। উসমান খাজা আউট ৩৪ রানে, শন মার্শ ৩৯। তার আগে অধিনায়ক ফিঞ্চ ফেরেন ১৪ রান করে। ম্যাচে চাহালের বোলিং বিশ্লেষণ ১০-০-৪২-৬! ভারতের ওয়ানডে ইতিহাসে সেরার তালিকায় যেটি ষষ্ঠ স্থানে। দুই পেসার ভুবনেশ্বর কুমার ও মোহাম্মদ শামি নিয়েছেন দুটি করে উইকেট। স্কোর ॥ অস্ট্রেলিয়া- ২৩০/১০ (৪৮.৪ ওভার; ক্যারি ৫, ফিঞ্চ ১৪, খাজা ৩৪, শন মার্শ ৩৯, হ্যান্ডসকম্ব ৫৮, স্টয়নিস ১০, ম্যাক্সওয়েল ২৬, রিচার্ডসন ১৬, জাম্পা ৮, সিডল ১০*, স্ট্যানলেক ০; ভুবনেশ্বর ২/২৮, শামি ২/৪৭, চাহালি ৬/৪২) ভারত- ২৩৪/৩ (৪৯.২ ওভার; রোহিত ৯, ধাওয়ান ২৩, কোহলি ৪৬, ধোনি ৮৭*, যাদব ৬১*; রিচার্ডসন ১/২৭, সিডল ১/৫৬, স্টয়নিস ১/৬০) ফল ॥ ভারত ৭ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ যুবেন্দ্র চাহাল (ভারত)। সিরিজ ॥ তিন ওয়ানডে ভারত ২-১ এ জয়ী। সিরিজসেরা ॥ মহেন্দ্র সিং ধোনি (ভারত)।
×