ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শীতলের গোলে উষ্ণতা পেল চ্যাম্পিয়ন ঢাকা আবাহনী!

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৯ জানুয়ারি ২০১৯

 শীতলের গোলে উষ্ণতা পেল চ্যাম্পিয়ন ঢাকা আবাহনী!

রুমেল খান ॥ নোয়াখালী-ফেনী-লক্ষ্মীপুর ... এই তিনে মিলে নোফেল। মানে নোফেল স্পের্টিং ক্লাব। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে নবাগত এই ক্লাবটি শুক্রবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে খেলতে নেমেছিল অঘটন ঘটানোর দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে। দলটির কোচ কামাল বাবু বলেই এই আশঙ্কাটা জেঁকে বসেছিল গত লীগের চ্যাম্পিয়ন ঢাকা আবাহনী লিমিটেডের সমর্থকদের। তাদের এই শঙ্কা প্রায় সত্যিই হতে যাচ্ছিল। কারণ ম্যাচের ৮৭ মিনিট পর্যন্ত আবাহনীকে ঠেকিয়েই রেখেছিল নোফেল। তখন মজা করে প্রেসবক্সে উপস্থিত এক রসিক সাংবাদিক বলছিলেন ‘নোফেল আজ আবাহনীর পয়েন্ট কেড়ে নিয়ে প্রমাণ করবে তারা আসলে নো-ফেল, মানে ফেল করেনি!’ তবে এই মন্তব্যকে ভুল প্রমাণ করে আবাহনীর বদলি ফরোয়ার্ড ফয়সাল আহমেদ শীতল গোল করে নাটকীয় জয় এনে দেন নিজ দলকে। শীতল মাসে গোল করলেন শীতল। শীতলের গোলেই যেন উষ্ণতা পেলো আবাহনী! বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের উদ্বোধনী ম্যাচে নোফেলকে ২-১ গোলে হারিয়ে শুভসূচনা করল আবাহনী। ম্যাচের তখন বাকি ৯ মিনিট। ম্যাচের স্কোরলাইন ১-১। তখনই মামুনুল ইসলামকে উঠিয়ে শীতলকে নামান কোচ মারিয়ো গুয়েরেইরো লেমোস। বদলি এই ফরোয়ার্ডই পাল্টে দেন ম্যাচের চেহারা। তার হেডেই পার পায় প্রিমিয়ার লীগের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। জিতলেও আবাহনীর খেলা খুশি করতে পারেনি তাদের সমর্থকদের। সেক্ষেত্রে দারুণ খেলেছে নোফেল। যদিও ম্যাচ শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই গোল করে লিড নেয় আবাহনী। ৮ মিনিটে সতীর্থের থ্রো থেকে বক্সের ভেতরে জটলার মধ্যে বল পান সোহেল রানা। তিনি পাস দেন রুবেল মিয়াকে। নোফেল গোলরক্ষক আপেল মাহমুদকে পরাস্ত করে বল জালে পাঠান এ ফরোয়ার্ড (১-০)। গোল খেয়ে যেন জেগে ওঠে নোফেল। আক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় তারা। প্রথমার্ধের ইনজুরি সময়ে (৪৫+২ মিনিটে) গোল পরিশোধও করে। ডানপ্রান্ত থেকে লম্বা থ্রো করেন নোফেলের এক খেলোয়াড়। কিন্তু আবাহনীর ডিফেন্ডাররা বল ঠিকমতো বিপদমুক্ত করতে পারেননি। গোলরক্ষক সুলতান আহমেদ শাকিল লাফিয়ে ওঠলেও ফ্লাইট মিস করেন। জটলার মধ্যে বল পান কামরুল ইসলাম। তার নেয়া বাঁ পায়ের শটে বল খুঁজে নেয় আবাহনীর জাল (১-১)। বিরতির পরও সমান তেজে খেলতে থাকে নোফেল। আবাহনীর খেলা ছিল নিষ্প্রভ। মাঝে মাঝে অবশ্য তারা আক্রমণ শাণায়। কিন্তু সেগুলোর সবই দারুণ দক্ষতার সঙ্গে রুখে দেন নোফেলের গোলরক্ষক আপেল মাহমুদ। তিনি যেন দাঁড়িয়ে ছিলেন চীনের প্রাচীর হয়ে। জেতার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে ১১ বারের লীগ চ্যাম্পিয়ন আবাহনী। অবশেষে ৮৭ মিনিটে সফলকাম হয় তারা। ছাড়ে স্বস্তির নিঃশ^াস। ৮৭ মিনিটে ম্যাচে আবাহনীর ত্রাতা বদলি ফরোয়ার্ড শীতল। রুবেল মিয়ার ক্রসে লাফিয়ে ওঠে শীতল যে হেড নেন তা নোফেল গোলরক্ষক আপেল ধরলেও বল নিয়ে তিনি গোললাইনের ভেতরে ঢুকে যান। বল ধরে সামনে পেলেন আপেল। নিশ্চিত হওয়ার জন্য ফিরতি শটে বল জালে পাঠান সানডে। তবে গোলটা শীতলের নামেই লেখা হয়। কারণ তার হেড নোফেল গোলরক্ষকের হাতে যাওয়ার পরই সহকারী রেফারি প্রধান রেফারিকে জানিয়ে দেন আগেই গোল হয়েছে (২-১)। ম্যাচ শেষে শীতল বলেন, ‘বদলি হিসেবে নেমে নিজেকে প্রমাণ করেছি। ভাল লাগছে কোচের আস্থার প্রতিদান দিতে পেরেছি বলে।’ বেশিরভাগ সময়ই বদলি হিসেবে নামেন তিনি। শীতলের ইচ্ছা শুরুর একাদশে খেলা, ‘সব খেলোয়াড়ই ইচ্ছা থাকে নিয়মিত একাদশে থাকতে। আমারও তাই ইচ্ছা। আমার জায়গা থেকে চেষ্টা চালিয়ে যাব, কোচের যদি মনে হয়, আমাকে শুরুতে নামাবেন, তাতেও আমি প্রস্তুত।’ লীগে প্রথম ম্যাচে প্রথম গোল শীতলের। এই মৌসুমে ফেডারেশন কাপে দুই গোল করেছিলেন বিকেএসপি, ফেনী সকার, উত্তর বারিধারা ক্লাবে খেলা এ ফরোয়ার্ড। অ-১৬ দলে খেলার অভিজ্ঞতাও আছে তার। সেই অভিজ্ঞতাটাই এদিন প্রয়োগ করেন ২২ বছর বয়সী শীতল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ২-১ গোলের ঘাম ঝরানো ও স্বস্তির জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
×