ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশে ফেরত না পাঠানোর দাবি ॥ সৌদিতে অনশনে রোহিঙ্গারা

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ১৯ জানুয়ারি ২০১৯

 বাংলাদেশে ফেরত  না পাঠানোর  দাবি ॥ সৌদিতে  অনশনে  রোহিঙ্গারা

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশে ফেরত না পাঠানোর দাবিতে সৌদি আরবের একটি বন্দীশালায় আমরণ অনশন শুরু করেছে রোহিঙ্গারা। গত চারমাসে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার অনশনে গেল তারা। -খবর মিডল ইস্ট আই ও ওয়েবসাইটের। রোহিঙ্গারা আমরণ অনশন শুরু করেছে সৌদি আরবের জেদ্দায় অবস্থিত সুমায়সি বন্দীশালায়। রোহিঙ্গারা বলছেন, ‘আমরণ অনশন করা ছাড়া আমাদের হাতে এখন আর কোন বিকল্প নেই। কেননা গত মাসে বেশ কিছু রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে সৌদি আরব।’ সুমায়সি বন্দীশালায় রোহিঙ্গাদের অনশন নিয়ে কিছু ছবি ও ভিডিও ফাঁস হয়েছে। সে সব ছবি ও ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রোহিঙ্গারা তাদের প্রতিদিনের বরাদ্দ খাবার নিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন। মেঝেতে তাদের না খাওয়া খাবারের প্যাকেট পড়ে আছে। বন্দীশালায় থাকায় কিছু রোহিঙ্গা জানায়, সুমায়সি বন্দীশালায় আটক রোহিঙ্গারা নিজেদের রক্ষা করার জন্য তাদের নাম পরিবর্তন করেছেন। জাহিদ নামের একজন বলেন, হোয়াটস এ্যাপের মাধ্যমে তারা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই আমরণ অনশন কর্মসূচী সংগঠিত করার কাজ করছেন। জাহিদ নামের এক বন্দী রোহিঙ্গা বলেন, ‘আমরা যখন আমাদের অনশন শুরু করি তখন সংখ্যাটা ছিল তিন শ’। পরে ধীরে ধীরে অনেকেই আমাদের এই অনশনে যোগ দিতে থাকেন। অনশনে অংশগ্রহণ করা একজন বৃদ্ধকে ইতোমধ্যে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জানি না আমাদের এই অনশন কতদিন চলবে। তারা আমাদের খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। দয়া করে আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’ তাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। ভারতে ধরপাকড়-বাংলাদেশে আসছে আরও রোহিঙ্গা ॥ বিডিনিউজ জানায়, ভারতে ব্যাপক ধরপাকড় চলছে জানিয়েছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোঃ আবুল কালাম বলেছেন, মিয়ানমারে তাড়িয়ে দেয়ার ভয়ে আরও রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসছে। শুক্রবার সকালে কালাম বলেন, ‘ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ধরপাকড় চলছে।’ ‘বিশেষ করে মুসলিম অধ্যুষিত জম্মুু-কাশ্মীর, হায়দারাবাদ ও নয়াদিল্লীতে ধরপাকড়ের এ মাত্রা আরও ব্যাপক। মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ভয়ে তারা সীমান্তের বিভিন্ন পথ দিয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আসছে।’ কক্সবাজারের উখিয়ায় কুতুপালং শরণার্থী শিবির সংলগ্ন ট্রানজিট ক্যাম্পে ভারত ফেরত এসব রোহিঙ্গাকে রাখা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মাস দেড়েকের মধ্যে ভারত থেকে আসা ১৩ শতাধিক রোহিঙ্গাকে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার এ ক্যাম্পে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। ‘সম্প্রতি ভারতে আশ্রয় নেয়া এক রোহিঙ্গা পরিবারকে জোর করে মিয়ানমারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এতে ভারতের অন্য রোহিঙ্গাদের মধ্যে মিয়ানমারে তাড়িয়ে দেয়ার ভীতি সৃষ্টি হয়েছে। আতঙ্কিত এসব রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে।’ বাংলাদেশের কুমিল্লা, বেনাপোল, সাতক্ষীরা ও কুড়িগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকা দিয়ে তারা বাংলাদেশে আসছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আতঙ্কিত আরও অনেক রোহিঙ্গা পালিয়ে আসার জন্য অপেক্ষা করছে। ‘পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে কেউ কেউ ক্যাম্পে স্বজনদের কাছে রয়েছে। ভারত থেকে আসা সব রোহিঙ্গাকে এক জায়গায় রাখার পরিকল্পনা চলছে। সেজন্য এখন নতুন জায়গা খোঁজা হচ্ছে।’ বিয়ষটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দফতরে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান কমিশনার আবুল কালাম। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে নতুন করে সেনা অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের অধিকাংশই আছে কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্পে। এর বাইরে গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে আসা আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করে চলেছে বাংলাদেশ।
×