সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির সপক্ষে দেশব্যাপী মাদকবিরোধী কঠোর অভিযান তথা ক্রসফায়ারের পরও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যে, ইয়াবার চোরাচালান ও অনুপ্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছে না মিয়ানমারের সীমান্ত পথে। চলতি জানুয়ারি মাসের ১৩ দিনে টেকনাফ ও কক্সবাজার থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উদ্ধার করেছে অন্তত ১৪ লাখ ইয়াবা বড়ি। তার মানে দাঁড়ায় যে পরিমাণ বড়ি আটক হচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি ঢুকছে চোরাই পথে। মাদকবিরোধী অভিযানে তিন শতাধিক মানুষ নিহত হলেও বাস্তবে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে, এমন বলা যাবে না। ছোট ও খুচরা মাদক ব্যবসায়ীরা ধরা পড়লেও গডফাদার তথা রাঘব-বোয়ালরা থেকে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এমতাবস্থায় সরকার তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাচালানিদের আত্মসমর্পণের সুযোগ দেয়ার কথা ভাবছে বলে পত্রিকার খবরে প্রকাশ। তালিকা প্রণয়নের কাজও শুরু হয়েছে। তবে তাতে কতটা সুফল মিলবে সন্দেহের অবকাশ আছে বৈকি। মাদক ব্যবসায়ীদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিণতি কি হবে তাও বিবেচনার দাবি রাখে। মনে রাখতে হবে, চোরা না শুনে ধর্মের কাহিনী। সে অবস্থায় মিয়ানমার সীমান্ত একেবারে ‘সিল্ড’ করে দেয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই।
বাংলাদেশ সরকার ইয়াবাসহ যে কোন ধরনের মাদকদ্রব্য আমদানি-রফতানি ও ব্যবহারের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। মাদক নির্মূলে সারাদেশে চলছে ব্যাপক সাঁড়াশি অভিযান। এক্ষেত্রে শুধু জেল-জরিমানাই নয়, ক্রসফায়ারে তিন শতাধিক মাদক ব্যবসায়ীর মৃত্যুর খবরও আছে। দুঃখজনক হলো, এরপরও মাদক আমদানি ও ব্যবহারের ব্যাপকতা কমছে না। এতে প্রতীয়মান হয় যে, বাংলাদেশকে টার্গেট করেই কোন আন্তর্জাতিক শক্তিশালী চক্র কাজটি করে যাচ্ছে, যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া। এর পেছনে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের হাত থাকাও বিচিত্র নয়। যে কোন মূল্যে এই ‘বিষচক্র’ ভাংতে হবে।
দেশের অভ্যন্তরে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক ইয়াবা ট্যাবলেট এবং এর কাঁচামাল প্রবেশ করে থাকে কক্সবাজার জেলার মাধ্যমে। আরও সঠিক অর্থে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত পথে। পার্বত্য অঞ্চল দিয়েও ইয়াবার অনুপ্রবেশ বিচিত্র নয়। সীমান্তরক্ষী বাহিনীসহ স্থানীয় পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের অভিযানে প্রায় প্রতিদিন তা ধরা পড়ে বিপুল পরিমাণে। বাস্তবতা হলো, সীমান্তে কঠোর তৎপরতা এবং গোয়েন্দা নজরদারির পরও এর প্রায় অবাধ অনুপ্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছে না। ফলে সঙ্গত কারণেই ধারণা করা যায় যে, এর পেছনে শক্তিশালী স্থানীয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেটসহ বিত্তশালী ব্যক্তিদের হাত রয়েছে। ইয়াবা পাচারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পরিবারের সম্পৃক্ততার অভিযোগে জেল-জরিমানার খবরও আছে। দুঃখজনক হলো এরপরও ইয়াবার ছোবল ঠেকানো যাচ্ছে না। সে অবস্থায় এলাকার জনগণ যদি সততা ও সদিচ্ছার মনোভাব নিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসে প্রতিরোধে তাহলে সীমান্ত পথে অবৈধভাবে ইয়াবার চোরাচালান ঠেকানো অবশ্যই সম্ভব।
একদা তরুণ সমাজ বিপুলভাবে জড়িয়ে পড়েছিল ফেনসিডিল আসক্তিতে। পরে দেশে এই পণ্যটি নিষিদ্ধ করেও সুফল মেলেনি তেমন। বরং বাংলাদেশ পরিবেষ্টিত ভারতের সীমান্তসংলগ্ন অনেক স্থানে রাতারাতি গজিয়ে উঠেছিল ফেনসিডিল কারখানা। দু’দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ে ব্যাপক আলাপ-আলোচনার পর ফেনসিডিলের বিস্তার ও আসক্তি অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে দুঃখজনক হলো এর পরিবর্তে বিপুল বিক্রমে থাবা বসিয়েছে ভয়াবহ মাদক ইয়াবা।
গণমাধ্যমের বিপুল প্রচার-প্রচারণা এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার পরও এর বিরুদ্ধে তেমন প্রতিরোধ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। সুতরাং এনপিএস, ইয়াবা, ফেনডিসিলসহ মাদকের সর্বাত্মক প্রতিরোধে সরকারকে আরও তৎপর এবং কঠোর হতে হবে। জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির মতো নিয়মিত যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে শৈথিল্য প্রদর্শনের কোন সুযোগ নেই।