ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সমৃদ্ধির অঙ্গীকার ও জনপ্রত্যাশা

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ২০ জানুয়ারি ২০১৯

সমৃদ্ধির অঙ্গীকার ও জনপ্রত্যাশা

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হলে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় ‘২১টি বিশেষ অঙ্গীকার’ বাস্তবায়ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। ইশতেহারে তরুণ সমাজকে উৎপাদনমুখী করে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দেশের প্রতিটি গ্রামকে শহরে উন্নীত করার কথা বলা হয়েছিল। এবারের ইশতেহারের মূল বিষয় ছিল তারুণ্য এবং গ্রামের উন্নয়ন। ইশতেহারে আওয়ামী লীগ যে ২১টি বিশেষ অঙ্গীকার করেছিল, এর প্রথমেই ছিল প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা দেয়া। এরপরই ছিল যুব সমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা। এ ছাড়া সংসদকে আরও কার্যকর করার উদ্যোগ, জবাবদিহিমূলক প্রশাসন নিশ্চিতকরণ, জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গড়ে তোলা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলদারি বন্ধে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার প্রতিশ্রুতি, প্রতিটি গ্রামকে শহরে উন্নীত করার কর্মসূচী গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, পাঁচ বছরে এক কোটি ২৮ লাখ কর্মসৃজনের পরিকল্পনা গ্রহণ, মেগা প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন, ঢাকা ও বিভাগীয় শহরের মধ্যে বুলেট ট্রেন চালু, উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে যমুনার তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণের প্রতিশ্রুতি ছিল। গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুদৃঢ় করা, দারিদ্র্য নির্মূল, সর্বস্তরে শিক্ষার মান বৃদ্ধি, সরকারী ও বেসরকারী বিনিয়োগ বৃদ্ধি, সবার জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা, সার্বিক উন্নয়নে ডিজিটাল প্রযুক্তির অধিকতর ব্যবহার এবং ‘ফাইভ-জি’ চালু, বিদ্যুত ও জ্বালানি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা এবং আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা সম্প্রসারণের অঙ্গীকার ছিল। এছাড়া রয়েছে নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তা, ব্লু-ইকোনমি এবং সমুদ্র উন্নয়ন করার অঙ্গীকার। যে আদর্শ নিয়ে জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করেছিলেন, সেই আদর্শ বাস্তবায়ন করে ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী সাড়ম্বরে পালনের অঙ্গীকার ছিল ইশতেহারে। বিগত এক দশকে জননেত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে নানাবিধ সামাজিক সূচকসহ অর্থনৈতিক আকাশচুম্বী উন্নয়ন হয়েছে যার কারণে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ, বিশ্বের ৪১তম অর্থনীতি, ২০৩২ সালে ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতি হবে। শেখ হাসিনা এখন বিশ্ব নেতা ও মাদার অব হিউম্যানিটি। বাংলাদেশের মানুষ এই উন্নয়ন কর্মকা-ে লাভবান হয়েছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে, স্বস্তিতে আছে মানুষ। মঙ্গায় পীড়িত হচ্ছে না, অনাহারে থাকছে না। আরও অনেক দূর এগোতে হবে। আশায় বুক বাঁধছে মানুষ। গত দশ বছরের উন্নয়ন মানুষকে আশাবাদী করেছে। আশাবাদী হওয়ার কারণ শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব। তাই তিনি বাংলাদেশের মানুষের অন্তরে জায়গা করে নিয়েছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনার ওপর আস্থা রেখেই বাংলাদেশের জনগণ ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটকে একচ্ছত্র বিজয় অর্জনে সমর্থন জানায়। বিরামহীন উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে রাজি ছিল না মানুষ। বিদেশীরাও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার পক্ষে। জনগণের বিশাল ম্যান্ডেট নিয়ে যাত্রা করা আওয়ামী লীগ আগামীর বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য মন্ত্রিসভায় নতুনদের সুযোগ করে দিয়েছে। নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করায় বর্তমান সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশাও অনেক। মানুষের আশা ভঙ্গ হোক শেখ হাসিনা কিছুতেই তা চাইবেন না। তাছাড়া বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার দায়িত্ব তার ওপর বর্তেছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কে উন্নীত করা, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, সব মানুষের জন্য পুষ্টিসম্পন্ন খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, উন্নয়নের সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া, অর্থনৈতিক বৈষম্য কমিয়ে আনা, দারিদ্র্য দূরীকরণ, ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ব্যাংকিং খাতের বিশৃঙ্খলা দূরীকরণ, মানবসম্পদ সৃষ্টির লক্ষ্যে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার মধ্যে সমন্বয় সৃষ্টি, শিক্ষা ও গবেষণার মান উন্নয়ন, ঘরে ঘরে তথ্য-প্রযুক্তির সুবিধা প্রদান, সামাজিক অরাজকতার অবসান, মাদক ও দুর্নীতির বিস্তার রোধ, নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, গ্রামে অর্থনৈতিক কর্মকা-ের সুযোগ সৃষ্টি করে গ্রাম থেকে শহরে মাইগ্রেশনের হার কমানো, কৃষিকে যুগোপযোগী করা, গ্রামে শহুরে সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি, সারাদেশে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান ও বিদ্যুত সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি, রফতানি খাত ও বাজার সম্প্রসারণ করে রফতানি আয় বৃদ্ধি, শিল্পখাত সম্প্রসারণ, মেগা প্রজেক্টগুলো সফলভাবে সময়মতো সম্পন্নকরণ, সারাদেশে আধুনিক রেলসার্ভিস গড়ে তোলা, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানসহ বহুবিধ কর্মকা- সফলতা ও গতিশীলতার সঙ্গে পরিচালনা করতে হবে আগামী ৫ বছর। এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে উন্নত প্রযুক্তি ও নিবিড় প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এবং এগিয়ে যেতেই হয়ত প্রধানমন্ত্রী পরিচ্ছন্ন ইমেজ সম্পন্ন তুলনামূলক তরুণ কিন্তু মেধাবী, উদ্যমী, কর্মতৎপর, সৎ ও নিষ্ঠাবান মনে করে বর্তমান মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর মতো বাংলাদেশের মানুষেরও বর্তমান মন্ত্রিপরিষদের কাছে প্রত্যাশা অনেক। মানুষ আশা করে বর্তমান মন্ত্রিসভার প্রতিটি সদস্য চিন্তা-চেতনায় সৎ, পরিচ্ছন্ন ও মার্জিত হবে, জনবিচ্ছিন্ন না হয়ে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবে, জনগণের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করবে, জনগণের কল্যাণে ও বাংলাদেশকে উন্নত দেশে রূপান্তরিত করার বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার লক্ষ্য বাস্তবায়নে নিজেদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখবে! তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে একটি সুচিন্তিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে জাতীয় যুবনীতি বাস্তবায়ন করতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক হলেও এ ক্ষেত্রে ক্ষতও কম সৃষ্টি হয়নি। এসব ক্ষত সারাতে হবে শিক্ষাক্ষেত্রে যে বিভাজন রয়েছে, এর নিরসন চাই। স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষাকে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যুগোপযোগী করতে কারিগরি শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অধিকতর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সকল স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সরকারীকরণ করা জরুরী। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র বিস্তৃত করতে হবে। শিক্ষিত কর্মহীনের সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ তরুণ। এ হিসাবে দেশে তরুণের সংখ্যা প্রায় পাঁচ কোটি ৩০ লাখ। এই বিশাল কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে কারিগরি শিক্ষার প্রসার, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোসহ তৃণমূল পর্যায়ে যুবশক্তিকে দক্ষ করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি তরুণদের নিয়ে নতুন কর্মপরিকল্পনা দরকার। তরুণদের ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচী দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে হবে। দক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। বেকারত্বের হার শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে। দুর্নীতি যেন সমাজে নীতি না হয়ে দাঁড়ায়- এ ব্যাপারে গভীর দৃষ্টি দিতে হবে। অতীতে বিশ্বে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে আমাদের অবস্থান শীর্ষে চলে গিয়েছিল। সে পরিস্থিতি থেকে আমাদের উত্তরণ ঘটলেও সকল ক্ষেত্রে দুর্নীতি নির্মূল করা এখনও সম্ভব হয়নি। দুর্নীতি দমন কমিশনকে দুর্নীতির ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে আরও সক্ষমতা দেখাতে হবে। অশুভ শক্তির ছোবলে যাদের প্রাণহানি ঘটেছে, তাদের হত্যাকা-ের বিচার দ্রুত নিষ্পন্ন করতে হবে। সন্ত্রাসী জঙ্গীবাদের শিকড় উৎপাটনে আরও দৃঢ় হতে হবে। এছাড়া ও ইশতেহারে চলমান পদ্মা সেতু প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র, মেট্রোরেল, রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র, মাতারবাড়ি বিদ্যুত কেন্দ্র, পায়রা সমুদ্র বন্দর, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, এলএনজি টার্মিনাল, ঘুনধুমে ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প, ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, কর্ণফুলী টানেল ও চায়না শিল্পাঞ্চল, হাইটেক পার্ক, এলএনজি টার্মিনালসহ অন্য মেগাপ্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার বিশেষ পরিকল্পনা ছিল। গত দশ বছরে সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক সকল ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। এই উন্নয়ন সারা পৃথিবীতে নন্দিত হয়েছে, বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নয়ন সারা বিশ্বের কাছে বিস্ময়। গত ১০ বছরে উন্নয়নের যে ভিত্তি রচিত হয়েছে সেই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ আগামীর পথে এগিয়ে যাবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সে পথেই এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। যার ফলে সরকারের আশা ২০৩০ সালের মধ্যেই দেশ ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত হবে। শেখ হাসিনার প্রতি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের আস্থার বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের রিপোর্টে। ইতোমধ্যে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের সরকারপ্রধান নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। বিশ্ব নেতৃবৃন্দের আশা! শেখ হাসিনার হাত ধরে অচিরেই বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে। লেখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক
×