ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দ্বীপ নিয়ে মস্কো-টোকিও বৈরী সম্পর্ক

প্রকাশিত: ০৪:১০, ২০ জানুয়ারি ২০১৯

দ্বীপ নিয়ে মস্কো-টোকিও বৈরী সম্পর্ক

জাপান ও রাশিয়ার নেতারা মঙ্গলবার দুই দেশের মধ্যে শীর্ষ বৈঠক নিয়ে আলোচনায় মিলিত হয়েছেন। দুদেশের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে অকূটনৈতিকসুলভ বাগযুদ্ধের মধ্যে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হলো। খবর এএফপির। দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে মস্কো ও টোকিওর মধ্যে চরম উত্তেজনা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বৃদ্ধি পেয়েছে। জাপান শীর্ষ বৈঠককে সামনে রেখে দ্রুত উত্তেজনা বৃদ্ধি করছে বলে রাশিয়া ক্ষোভের সঙ্গে অভিযোগ করেছে এবং বলেছে, দেশটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরাজয় মেনে নিতে পারেনি। পুতিনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ বৈঠকের মেজাজ উপলব্ধি করে স্বীকার করেছিলেন, আলোচনা সহজ হবে না। রাশিয়ার সেনাবাহিনী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরিসমাপ্তির দিনগুলোতে চারটি দ্বীপ তাদের বলে দাবি করেছে এবং দ্বীপগুলোর সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিরোধের কারণে দুদেশের মধ্যে কোন শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি। দুদেশ নবেম্বরে এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। জাপানের প্রত্যন্ত উত্তরাঞ্চলে হোক্কাইডো দ্বীপের উত্তর উপকূলের অদূরে দ্বীপগুলো রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় কুরিলস ও জাপানে উত্তরাঞ্চলীয় ভূখ- বলে পরিচিত। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের নববর্ষের ভাষণ মস্কোতে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তিনি ভাষণে বলেন, বিরোধপূর্ণ দ্বীপগুলোর ওপর মালিকানার সার্বভৌমত্ব পরিবর্তন বিষয়টি মেনে নেয়ার এবং তা উপলব্ধি করার প্রয়োজন রয়েছে রুশ নাগরিকদের। তিনি এ বিষয়ে রুশ নাগরিকদের সহযোগিতার জন্যও আহ্বান জানান। ক্ষুব্ধ রাশিয়া অভিযোগের জন্য জাপানী রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠান। অভিযোগে বলা হয়। আবের বিবৃতি সম্ভাব্য শান্তিচুক্তির বিষয়ে পরিবেশ অস্বাভাবিকভাবে ঘোলা করার চেষ্টা। মস্কো ক্ষোভ প্রকাশ করে এ কথাও বলে যে, জাপান জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে এবং জাপানী নেতার বিবৃতি নবেম্বরে সিঙ্গাপুরে পুতিন ও আবে যে চুক্তিতে পৌঁছেছিলেন তার মৌলিক শর্তাবলীর এক ব্যাপক লঙ্ঘন। দুই নেতা ওই সময় শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ ত্বরান্বিত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন। সোমবার দুদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক কয়েক ঘণ্টা চললেও তাতে পরিস্থিতির অগ্রগতি হয়নি। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারা কোনো ও তার রুশ প্রতিপক্ষ সের্গেই লাভরভ এমনকি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে একত্রিত হননি। লাভরভ তার নববর্ষের সংবাদ সম্মেলনে টোকিওর তীব্র সমালোচনা করে প্রশ্ন রাখেন। বিশ্বে একমাত্র দেশ জাপান কেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফল মেনে নিতে পারছে না? তিনি পাশ্চাত্যপন্থী পক্ষপাতিত্বের জন্যও এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সহযোগী দেশ জাপানের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, জাপান জাতিসংঘে রুশ স্বার্থসংশ্লিষ্ট সকল প্রস্তাবে আমাদের পক্ষে কখনও ভোট দেয়নি। কিন্তু বিরোধিতা করেছে। পুতিনের সহযোগী উশাকভ স্পষ্ট বলেছে, দ্বীপগুলোর সার্বভৌমত্ব আলোচনার বিষয় নয়। রাশিয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফল অনুসারে বৈধভাবে এ দ্বীপগুলোর স্বত্বাধিকারী এবং টোকিওর কাছে হস্তান্তরের কোন পরিকল্পনা মস্কোর নেই। এটি আমাদের ভূখ- এবং কেউই এ দ্বীপগুলো কাউকে হস্তান্তর করতে যাচ্ছে না। রাশিয়া ডিসেম্বরে বলেছে, সামরিক ও সামাজিক অবকাঠামো হিসেবে দ্বীগুলোতে মস্কো ৪টি নতুন সামরিক ব্যারাক তৈরি করেছে। মস্কো এর মধ্যেই দ্বীপগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েন করেছে। এতে জাপান তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। টোকিওতে টেম্পল বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপান-রাশিয়া সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ জেমস ব্রাউন ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, লাভরভের চেয়ে পুতিন কিছুটা নরম থাকবেন।
×