ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বিশেষ এ্যাপসেই দেখা যাবে কাক্সিক্ষত রেস্তরাঁর মান কেমন

রাজধানীর হোটেল-রেস্তরাঁ কোন্্ গ্রেডের, জানা যাবে মোবাইল ফোনে

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২০ জানুয়ারি ২০১৯

রাজধানীর হোটেল-রেস্তরাঁ কোন্্ গ্রেডের, জানা যাবে মোবাইল ফোনে

আজাদ সুলায়মান ॥ কোন রেস্তরাঁর মান কেমন, কোনটা কোন গ্রেডের- তা আপনি মোবাইলফোনের বিশেষ এ্যাপসেই দেখতে পারবেন। যিনি পড়তে পারেন না, এ্যাপস ব্যবহার করতে জানেন না, তিনিও বিশেষ রং বা সাংকেতিক চিহ্ন দেখে বুঝতে পারবেন রেস্টুরেন্টের খাবার ও পরিবেশের মান কতটা উন্নত। সবুজ, নীল, হলুদ ও কমলা- চার রং ব্যবহারের মাধ্যমে এ+, এ, বি, সি এই চার ক্যাটাগরিতে তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে ঢাকা মহানগরীর সব হোটেল ও রেস্তরাঁকে। এই বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিনিখাক)। প্রাথমিকভাবে আজ (রবিবার) রাজধানীর মতিঝিল, দিলকুশা, পল্টন ও সচিবালয় এলাকায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে এই উদ্যোগ চালু করা হবে। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মাহফুজুল হক জানিয়েছেন, রাজধানীবাসীকে ভেজালের কবল থেকে রক্ষা করতে- হোটেল রেস্টুরেন্টে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের অংশ হিসেবে এ পদক্ষেপ। পর্যায়ক্রমে রাজধানীর সর্বত্র তা বাস্তবায়ন করা হবে। এ জন্য মোবাইল ফোনের বিশেষ এ্যাপস তৈরি করা হচ্ছে। জানা গেছে, গ্রেডিং সিস্টেমের আওতায় খাবারের মান, বিশুদ্ধতা, পরিবেশ, ডেকোরেশন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় শর্ত বিবেচনা করেই রেস্তরাঁগুলোতে চার ক্যাটাগরিতে চিহ্নিত করা হবে। এসব বিচারে ৯০ নাম্বারের বেশি স্কোর হলে সবুজ বর্ণের স্টিকার এ+, স্কোর ৮০’র উর্ধে হলে নীল বর্ণের স্টিকার বা এ, ৫৫ থেকে ৭৯ পর্যন্ত স্কোর হলে হলুদ বর্ণের বি এবং ৪৫ থেকে ৫৫ স্কোর হলে কমলা বর্ণের সি ক্যাটাগরি পাবে। এভাবে রেস্টুরেন্টগুলোতে শ্রেণীভুক্ত করার পর রেস্তরাঁর প্রবেশ মুখে গ্রেডসহ বিশেষ সাংকেতিক চিহ্ন ও নির্দেশিকা থাকবে। যদি কোন হোটেলে ভেজাল খাবার থাকে-সেটাও লেখা থাকবে। আপনি সেটা বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেবেন, সেখানে আপনি খাবেন কি খাবেন না। শনিবার দুপুরে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মাহফুজুল হক দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, আপাতত মতিঝিল, দিলকুশা, পল্টন, বিজয় নগর,সচিবালয় এলাকার দুই শ’ রেস্তরাঁয় এই পদ্ধতি চালু করা হবে। রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে পঞ্চাশটিকে শ্রেণীভুক্ত করে প্রবেশমুখেই টাঙ্গিয়ে দেয়া হবে এগুলো কোন ক্যাটাগরির হোটেল, রেস্টুরেন্ট। এর মধ্যে এ+ মানে উত্তম, এ ভাল, বি গড়পড়তা ভাল এবং সি গ্রেড পেন্ডিং। যারা খাবার খেতে যাবেন- তারা রেস্টুরেন্টে প্রবেশের সময়ই জেনে নিতে পারবেন, এখানকার ভেতরের পরিবেশ পরিস্থিতি কেমন, কিচেনের অভ্যন্তরের কি ধরনের দূষণ বা কতটা স্বাস্থ্যসম্মত খাবার রয়েছে। বাংলাদেশ রেস্টুরেন্ট ওনার্স এ্যাসোসিয়েশন্সের (বিআরওএ) সহযোগিতায় এই নতুন পদ্ধতি কার্যকর করা হবে। জানা গেছে, রেস্টুরেন্টগুলোকে বেশ কিছু পয়েন্টে গ্রেডিং করা হবে। প্রত্যেকটা রেস্টুরেন্টের সামনে প্রকাশ্যস্থানে গ্রেডিং চিহ্ন টানানো বাধ্যতামূলক করা হবে। যাতে খদ্দেররা সহজেই বুঝতে পারছেন- তারা কোন মানের খাবার খেতে যাচ্ছেন। সবুজ রং আর নীল নিয়ে খদ্দেরদের কোন প্রশ্ন থাকতে পারে না। এ দুটো বেশ ভাল ও মানসম্মত খাবারের নিশ্চয়তা দেয়। কিন্তু হলুদ স্টিকারধারী রেস্টুরেন্টকে আপাতত ৩ মাসের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হবে তা উন্নীত করার জন্য। একইভাবে কমলা বর্ণের রেস্টুরেন্টকে গ্রেডিং বাড়ানোর জন্য এক মাস সময় বেঁধে দেয়া হবে। এ সময়ের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করা না হলে, হোটেল রেস্টুরেন্টের লাইসেন্স বাতিল করা হবে। জানা গেছে, রাজধানীতে এই মুহূর্তে ঠিক দশ হাজার লাইসেন্সধারী হোটেল-রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এগুলোর কোনটা কোন মানের সেটা সার্ভে করা হয়েছে ইতোমধ্যে। আল কিউমারস নামের একটি ভারতীয় কোম্পানি সম্প্রতি হোটেল- রেস্টুরেন্টগুলোর ওপর দীর্ঘ সময় ধরে সার্ভে চালিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করেছে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ীই হোটেল রেস্টুরেন্টগুলোকে চার ক্যাটাগরিতে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলোকে গ্রেডিং করার সিস্টেম সম্পর্কে জানতে চাইলে বানিখাক চেয়ারম্যান মাহফুজুল হক জনকণ্ঠকে বলেন- এরই মধ্যে বানিখাক ৩৫টি প্রশ্নের একটি চেক লিস্ট তৈরি করেছে-যা অনুসরণ বাধ্যতামূলক। যেমন হোটেল রেস্টুরেন্টগুলোর ভেতরের পরিবেশ কতটা স্বাস্থ্যসম্মত, সেখানকার স্টাফরা কতটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, তাদের পোশাক, হাতের নখ, চুল কি রকম, তারা কত স্বাস্থ্য সচেতন, কিচেনের রান্না প্রক্রিয়া পদ্ধতি, খাবার তৈরি, সংরক্ষণ, ফ্রিজিং সিস্টেম, কত তাপমাত্রায় খাবার রাখা হয়, কতটা পচাবাসি, টয়লেট থেকে কিচেনের দূরত্ব, পয়ঃনিষ্কাশনের পদ্ধতি, খদ্দের বসার চেয়ারটেবিল নোংরা নাকি পরিষ্কার, কিচেনের পোকামাকড় ও পেস্ট কন্ট্রোলিং সিস্টেম, এমনকি কি ধরনের তোয়ালে দিয়ে প্লেট মোছা হয়-এ ধরনের ৩৫টি প্রশ্নের চেক লিস্ট অনুযায়ী যারা সর্বোচ্চ ৯০-এর বেশি স্কোর পাবে, তারাই পাবে সবুজ বর্ণের স্টিকার বা এ+, স্কোর ৮০’র উর্ধে হলে নীল বর্ণের স্টিকার বা এ, ৫৫ থেকে ৭৯ পর্যন্ত স্কোর হলে হলুদ বর্ণের বি এবং ৪৫ থেকে ৫৫ স্কোর হলে কমলা বর্ণের সি ক্যাটাগরি পাবে। সি ক্যাটাগরির রেস্তরাঁগুলোতে লেখা থাকবে- গ্রেড পেন্ডিং। হলুদ ও কমলা বর্ণের রেস্টুরেন্টগুলোকে এক থেকে তিন মাস সময় বেঁধে দেয়া হবে যাতে তারা মান উন্নীত করতে পারে। যদি না করে- তাহলে সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে। জানা গেছে, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের এ পদক্ষেপে নড়েচড়ে বসেছে রাজধানীর হোটেল রেস্টুরেন্টগুলো। অনেকেই তাদের খাবারের মান ও কিচেনের পরিবেশ উন্নীত করার কাজ শুরু করে দিয়েছে। কয়েকটি হোটেলে গিয়ে দেখা যায়, তারা সরাসরি দর্শকদের জন্য বিশেষ কায়দায় গ্লাস প্রটেকশন লাগিয়েছে যাতে তারা নির্দিষ্ট জায়গায় দাঁড়িয়ে পেছনে কিচেনের সার্বিক চিত্র দেখতে পারে। আল কিউমারসের সার্ভেতে দেখা যায়, রাজধানীর বেশিরভাগ হোটেল রেস্তরাঁর সামনে ও বাইরে চাকচিক্যময় পরিবেশ থাকলেও কিচেনে কতটা দূরবস্থা। জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা পরিষদের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, উদ্যোগটি মহৎ ও সময়োপযোগী। যুক্তরাজ্য যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই এ ধরনের নিরাপদ খাদ্য তদারকি বা সেফ ফুড কন্ট্রোলিং সিস্টেম কার্যকর রয়েছে। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যাতে এ উদ্যোগ ভেস্তে না যায় বা ক্ষমতার অপব্যবহার না ঘটে। এ জন্য নিয়মিত তদারকি করতে হবে। পর্যাপ্ত জনবল ও যানবাহনের অভাব অজুহাত দেখিয়ে এক্ষেত্রে গাফিলতি করা যাবে না।
×