ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আইন মন্ত্রণালয়ের যুগান্তকারী পদক্ষেপ

মামলাজট কমাতে ই-জুডিসিয়ারি প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২০ জানুয়ারি ২০১৯

মামলাজট কমাতে ই-জুডিসিয়ারি প্রকল্প

বিকাশ দত্ত ॥ দক্ষ ও স্বচ্ছ বিচার প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য ডিজিটাল ব্যবস্থা প্রবর্তন করা, বিচার ব্যবস্থার জন্য প্রশাসনিক এবং বিচার কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয় করা, ই-আদালত কক্ষ প্রতিষ্ঠা এবং আইসিটি বিষয়ের জ্ঞান ও দক্ষতা দ্বারা বিচারক, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও আইনজীবীদের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৬৬০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার ২১০ কোটি টাকার ই-জুডিসিয়ারি প্রকল্প গ্রহণ করেছে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এই প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে এবং তা এখন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ৬৪ জেলায় ১৪শ’ আদালত কক্ষ ই-আদালতে রূপান্তরিত হয়ে যাবে। বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি অনেকাংশে কমে যাবে। ফলে বদলে যাবে বিচার বিভাগ। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ই-জুডিশিয়ারি বাস্তবায়িত হলে দেশের আদালতের বিচার প্রক্রিয়া আরও সহজ, স্বচ্ছ ও গতিশীল হবে। পাহাড়সম মামলার সংখ্যা অনেকাংশেই কমে যাবে। একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মন্ত্রণালয়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। দ্বিতীয় দফায় মন্ত্রী হওয়ার পর তিনি মন্ত্রণালয়ে অসমাপ্ত কাজ শেষ করবেন বলে জানা গেছে। মন্ত্রী দায়িত্ব নেয়ার পর পরই বলেছিলেন, এই মেয়াদে আমাদের চ্যালেঞ্জ হবে সুবিচার ও সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা। অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করা। তবে আমাদের কিছু কিছু সমস্যা আছে সেগুলো নির্ধারণ করে সমাধানের চেষ্টা করব। গত মেয়াদে আমাদের অনেকগুলো পদক্ষেপ ছিল। সেগুলো আরও জোরদার ও সুদৃঢ় করা হবে উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি একটি কথা বলতে চাই, গতবার আমাদের মন্ত্রণালয়ের দুটো বিভাগই আমাকে সহযোগিতা করেছে। ফলে অনেক কাজই করা সম্ভব হয়েছে। গতবারের অভিজ্ঞতার আলোকে বাকি কাজগুলো এগিয়ে নিতে চাই। ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মামলার সংখ্যা অনেকাংশে কমে যাবে। উল্লেখ্য দেশের আদালতসমূহে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা প্রায় ৩৪ লাখ। ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্পটির মূল কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে, বিচার ব্যবস্থার জন্য এন্টারপ্রাইজ আর্কিটেকচার উন্নয়ন, এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং (ইআরপি) সফটওয়্যার উন্নয়ন, বিচার ব্যবস্থাধীন সকল অফিসের জন্য ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) স্থাপন, আইন ও বিচার বিভাগের ডাটা-সেন্টার আপগ্রেডেশন এবং নেটওয়ার্ক অপারেশন সেন্টার স্থাপন, সুপ্রীমকোর্টের ডাটা-সেন্টার আপগ্রেডেশন এবং নেটওয়ার্ক অপারেশন সেন্টার স্থাপন, ৬৪ জেলায় মোট ১৪শ’ আদালত কক্ষকে ই-আদালত কক্ষে রূপান্তর, ঢাকা জেলা ছাড়া ৬৩ জেলায় ৬৩ মাইক্রো ডাটা-সেন্টার স্থাপন, আইন ও বিচার বিভাগ এবং সুপ্রীমকোর্টের কেন্দ্রীয় ডাটা সেন্টারের সঙ্গে আন্তঃসংযোগ স্থাপন, বিচারকদের জন্য ২০০০ ট্যাব/ল্যাপটপ কম্পিউটার সরবরাহ, রেকর্ডরুম স্বয়ংক্রিয়করণ এবং পুরাতন রেকর্ডরুমসমূহ ডিজিটাইজড করা, আগের মামলার রেকর্ড এবং সংশ্লিষ্ট রায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ, ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেমের মাধ্যমে সাক্ষ্য গ্রহণ এবং ডিজিটাল এভিডেন্স রেকর্ডিং, বায়োমেট্রিক এ্যাটেনডেন্স সিস্টেম স্থাপন, ই-কোর্ট রুম বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট নতুন আইন প্রণয়ন ও প্রচলিত আইনসমূহের প্রয়োজনীয় সংশোধনের প্রস্তাব, বিচার ব্যবস্থার কর্মকর্তাদের ডেস্কটপ কম্পিউটার সরবরাহ এবং বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ১৭০ জনবল নিয়োগ করা হবে। বর্তমান সরকার আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি সেবার সঙ্গে বিচারক ও বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের সমান তালে এগিয়ে নিতে চায় এবং সরকারী আইনী সেবার মানোন্নয়নের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে এমন একটি রাষ্ট্র গড়ে তুলতে চায় যেখানে সকল মানুষ তার আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রীয় সেবাসমূহ সহজেই গ্রহণ করতে পারবেন। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে সরকার জনগণকে অল্প সময়ে, অল্প খরচে ও সহজে বিচারিক সেবা প্রদানের উদ্দেশে সকল আদালত ও ট্রাইব্যুনালে ইন্টারনেট সংযোগসহ কম্পিউটর/ল্যাপটপ সরবরাহ করেছে। বিচারিক প্রক্রিয়ায় কাক্সিক্ষত স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সাক্ষ্যগ্রহণের দীর্ঘসূত্রতা থেকে বিচারক ও বিচারপ্রার্থীদের নিষ্কৃতি দেয়ার লক্ষ্যে সিলেটে সাক্ষ্য গ্রহণের কম্পিউটারাইজড পদ্ধতি ব্যবহারের কাজ শুরু করেছে এবং বিচারপ্রার্থী জনগণের সুবিধার্থে সুপ্রীমকোর্টসহ ১৩ জেলায় ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ডের মাধ্যমে আদালতের দৈনিক কার্যতালিকা প্রদর্শনের কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে আইন ও বিচার বিভাগ। সহায়তায় রয়েছে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিবি)। এ বছরের জুলাই শুরু হয়ে শেষ হবে ’২১ সালের জুনে। দেশের ৬৪ জেলায় এই প্রকল্প রয়েছে। প্রকল্পটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো, দক্ষ ও স্বচ্ছ, বিচার প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য ডিজিটাল ব্যবস্থা প্রবর্তন। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার গত ’১৬ সাল থেকে আবারও জোরেশোরে দেশের আইন-আদালত অঙ্গনে ডিজিটাল প্রযুক্তি সম্পৃক্ত করার নীতিগত কাজটি শুরু করেছে। সরকার ’১৬ সালে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে দেশের ১০ জেলায় শুরু করে। এর সফলতা অভূতপূর্ব।
×