ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সঙ্গীত রং ছড়াল বিজয় সমাবেশে

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২০ জানুয়ারি ২০১৯

সঙ্গীত রং ছড়াল বিজয় সমাবেশে

মনোয়ার হোসেন ॥ পিচঢালা সড়কের দুই ধারে জনস্রোত। আসছে মিছিলের পর মিছিল। সকলের চোখেমুখে প্রত্যাশিত বিজয়ী বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। জয় বাংলার স্লোগানে মুখরিত চারপাশ। মানুষের প্রাণের গভীরে বয়ে যায় উচ্ছ্বাস। আনন্দঘন সেই আবহের মাঝে স্বাধীনতার সাক্ষ্যবহ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতর থেকে ভেসে আসে সুরÑ বঙ্গবন্ধুর যোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নের মহারূপকার/শেখ হাসিনার সরকার বার বার দরকার। চড়া কণ্ঠে গানটি পরিবেশন করেন শেখ কামালের গড়া ব্যান্ডদল স্পন্দনের কর্ণধার কণ্ঠশিল্পী জানে আলম। এমন করেই সঙ্গীতের সুরসুধায় শনিবার বেলা সাড়ে ১২টা থেকে আড়াইটা অবধি আলোড়িত হয়েছে আওয়ামী লীগের বিজয় সমাবেশ। একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলের নিরঙ্কুশ জয়প্রাপ্তি উপলক্ষে আয়োজন করা হয় এই বিজয় উৎসবের। বিজয় সমাবেশে রং ছড়াতে সঙ্গীতে সাজানো হয়েছিল বর্ণিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। শোভাযাত্রা আর মিছিলের শব্দধ্বনির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেজেছে সুরধ্বনি। গানে গানে উদ্দীপ্ত হয়েছে সমাবেশে সমাগত লাখো জনতার অন্তর। অনবদ্য সব পরিবেশনায় হৃদয় রাঙিয়েছেন শ্রোতানন্দিত শিল্পীরা। একক কণ্ঠের গানের সঙ্গে ছিল সমবেত সঙ্গীত পরিবেশনা। গান শুনিয়েছেন মমতাজ বেগম, ফাহমিদা নবী, রফিকুল আলম, আঁখি আলমগীরের মতো সমাদৃত শিল্পীরা। শোনা গেছে ব্যান্ডদল জলের গানের হৃদয়ছোঁয়া গান। বেলা আড়াইটার পর বিজয় সমাবেশে হাজির হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাকে স্বাগত জানাতে শিল্পী ও সংসদ সদস্য মমতাজের কণ্ঠে উঠে আসে গান। উচ্চারিত হয় নৌকায় চড়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার বারতা। অগুনতি মানুষের কলরবের মাঝে দরাজ গলায় গেয়ে শোনানÑ শুকরিয়ারে শুকরিয়া বঙ্গবন্ধুর নৌকা মার্কায় ভোট দিয়া/শেখ হাসিনার নৌকা মার্কায় ভোট দিয়া ...। এটি পরিবেশনার সঙ্গে সঙ্গে যেন আরও বেশি বর্ণিল হয়ে ওঠে বিজয় সমাবেশ। উড়তে থাকে মানুষের হাতের মুঠোয় লাল-সবুজের পতাকা। শিল্পীর গাওয়া পরের গানটির শিরোনাম ছিলÑ এগিয়ে চলো বাংলাদেশ, পাল উড়িয়ে দাও/গড়বে উন্নত দেশ, এবার শেখ হাসিনার নাও...। শিল্পী যখন শোনালেন ‘সকল নেতার চাইতে আমার শেখ হাসিনাই ভালা’ তখন করতালি দিয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ করেছেন উচ্ছ্বাস। সকলের মতো জননেত্রীর হৃদয়েও ছুঁয়ে গেছে ভাললাগার অনুভব। গানের পরে শিল্পীরা জড়ো হন এক সারিতে। অনেক কণ্ঠ এক সুরে গেয়ে যায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারে তুমুল সাড়া জাগানো সঙ্গীত ‘জয় বাংলা জিতবে এবার নৌকা’। এ গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বার বার জয় বাংলা ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়েছে বিজয় সমাবেশের বিশাল প্রান্তর। এর পর নির্বাচনে জয়যাত্রার উদ্্যাপনে একই গানকে একটু বদলে গাওয়া হয়েছে, জয় বাংলা জিতল এবার নৌকা। কালের সাক্ষী ব্যান্ডদল স্পন্দনের দলপ্রধান জানে আলম বিজয়োৎসবে পরিবেশন করেছেন তার সেই তুমুল জনপ্রিয় গানÑ একটি গন্ধমের লাগিয়া আল্লায় বানাইলো দুনিয়া/আদম খাইলো আবার হাওয়ায় খাইলো/ইবলিশ শয়তানে তার আশা পুরাইলো ...। সুরে আশ্রয়ে সমাবেশে আগতদের মাঝে ভাললাগার অনুভব ছড়িয়েছেন ফাহমিদা নবী। মোহনীয় কণ্ঠে গেয়েছেন ‘লুকোচুরি লুকোচুরি গল্প, তারপর হাতছানি অল্প/মন চায় উড়তে উড়তে/টুপটাপ বৃষ্টি চেয়ে থাকে অপলক দৃষ্টি’। তার পরিবেশিত দ্বিতীয় গানের শিরোনাম ছিল ‘ভালো লাগে ফুল কিছু কিছু ভুল/ভালো লাগে সবই’। স্বদেশের প্রতি ভালবাসার প্রকাশে শুনিয়েছেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের গান ‘ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’। উতলা সুরে আঁখি আলমগীর শুনিয়েছেন চটুল গান ‘বন্ধু আমার রসিয়া থাকবে যখন বসিয়া’। শ্রোতাকে উদ্দীপ্ত করে গেয়েছেনÑ জল পড়ে পাতা নড়ে/তোমার কথা মনে পড়ে/নিশীথে আইসো ফুলবনে/তোমার আলতাবানু দিন গোনে ...। ক্লোজআপ ওয়ান তারকাখ্যাত সালমাও গানে গানে ছড়িয়েছেন নির্মল আনন্দ। ভাসিয়ে দেয়া কণ্ঠে গেয়েছেনÑ সোনা বন্ধু তুই আমারে করলিরে দিওয়ানা/মনে তো মানে না দিলে তো বুঝে না/সোনা বন্ধুর এমনই গুণ জল দিলে নিভে না আগুন ...। এই শিল্পীর পরিবেশিত অপর গানের শিরোনাম ছিলÑ ‘তোমার বাড়ি আমার বাড়ি মধ্যে চিত্রা নদী’। লোকজ ধারার ব্যান্ডদল জলের গান শুনিয়েছেন তাদের তুমুল শ্রোতা সমাদৃত গান ‘বকুল ফুল বকুল ফুল/সোনা দিয়া হাত কেনে বান্ধায়লি/শালুক ফুলের লাজ নাই/রাইতে শালুক ফোটে লো ...। এছাড়াও বিজয় সমাবেশে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন লোকসঙ্গীত শিল্পী শাহে আলম, পথিক নবীসহ একঝাঁক নবীন-প্রবীণ শিল্পী।
×