ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা প্রত্যর্পণে ‘মিয়ানমারের ধীর গতিতে’ হতাশ জাতিসংঘ মহাসচিব

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ২০ জানুয়ারি ২০১৯

রোহিঙ্গা প্রত্যর্পণে ‘মিয়ানমারের ধীর গতিতে’ হতাশ জাতিসংঘ মহাসচিব

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ রাখাইন থেকে সামরিক অভিযানের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার ক্ষেত্রে মিয়ানমারের ভূমিকা অত্যন্ত ধীরগতির বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। যতটুকু অগ্রগতি হওয়ার কথা ছিল তা না হওয়ার কারণে হতাশা ব্যক্ত করেছেন তিনি। শুক্রবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছেন মহাসচিব। খবর ওয়েবসাইটের। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরাল করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সন্ত্রাসবিরোধী শুদ্ধি অভিযানের নামে শুরু হয় নিধনযজ্ঞ। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হতে থাকে ধারাবাহিকভাবে। এমন বাস্তবতায় জাতিগত নিধনযজ্ঞের বলি হয়ে রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা। এদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের একটি সমঝোতা হয়েছে। পরে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার সঙ্গেও রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার বিষয়ে সহযোগিতার জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে মিয়ানমার। কিন্তু এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়া হয়নি। সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়ে এক ব্রিটিশ সাংবাদিক মহাসচিবের কাছে জানতে চান, সঙ্কট শুরুর দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও উল্লেখযোগ্য শরণার্থী রাখাইনে ফেরত যায়নি। নিরাপত্তা পরিষদ পরিস্থিতি মোকাবেলার বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে। মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেত্রী আউন সান সু চি’র সঙ্গে এ বিষয়ে সর্বশেষ কবে কথা হয়েছে? সু চিকে কী বলেছেন তিনি? সাংবাদিকের প্রশ্নের সরাসরি জবাব দিয়েছেন মহাসচিব। তিনি বলেন, সর্বশেষ কথা বলার পর বেশ কিছুটা সময় পেরিয়ে গেছে। আমার কথা সব সময়ই এক। আস্থা ও বিশ্বাসের পরিবেশ সৃষ্টির গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। এটা যে শুধু ‘ফিজিক্যাল’ পুনর্গঠনের বিষয় তা-ই নয়, সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে পুনর্জাগরণের বিষয়। সরকারের শক্তিশালী প্রতিশ্রুতির বিষয়, যেটা হলো সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে যতটা সম্ভব পুনরেকত্রীকরণ ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিরাপত্তা দেয়া। মহাসচিব হতাশা প্রকাশ করে বলেন, কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য হলো, পরিস্থিতি যেমন হওয়ার কথা ছিল এখনও তেমন হয়নি। সব কিছু চলছে খুবই ধীরগতিতে। যদি এই সমস্যার মূল কারণ সমাধান করতে ব্যর্থতা আসে তাহলে সহিংসতা ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। এমনটা আমরা মিয়ানমারে সম্প্রতি দেখেছি। তাই আমি মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্কের অগ্রগতিতে ঘাতটির বিষয়ে এবং এসব মানুষের দুর্ভোগের বিষয়ে ভীষণ রকম হতাশাগ্রস্ত। বিশেষ করে চরম, অত্যন্ত চরম অবস্থার মধ্যে এখন বাংলাদেশে বসবাস করছেন এ সম্প্রদায়ের বিপুল মানুষ। আমি তাদের ভুলে যেতে পারি না। রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় প্রত্যর্পণের বিষয়ে গুরুত্ব তুলে ধরে আস্তোনিও গুতেরেস বলেন, আমরা চাই এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে যাতে তারা স্বেচ্ছায় ফিরে যান। এক্ষেত্রে প্রথম যে পদক্ষেপটা হওয়া উচিত অবশ্যই তা হলো অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের সমস্যা সমাধান। এসব মানুষের সমস্যার বিশ্বাসযোগ্য সমাধান দেয়ার ফলেই ভবিষ্যত পত্যর্পণের পথ সুগম হবে। এদিকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে ইতিবাচক ফলাফলের জন্য অর্থপূর্ণ রাজনৈতিক সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে এই মন্তব্য করেছেন সংস্থাটির মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফানে দুজারিক। এ সময় মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস উপস্থিত ছিলেন। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন নিয়ে মহাসচিবের পর্যালোচনা জানতে চেয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র বলেন, অভিযোগ তদন্ত করার এখতিয়ার আমাদের নেই, যদিনা আমাদের সেই দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু সবার আগে আমি বলতে চাই, রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুতে জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হলো বাংলাদেশ। উন্নয়ন নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সঙ্কট ও সমস্যার মধ্যে থাকার পরও এত বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় দেয়ায় দেশটির মহানুভবতার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলকে যত সম্ভব ইতিবাচক রাখার ক্ষেত্রে স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে অর্থপূর্ণ সংলাপে বসার জন্য আমরা উৎসাহিত করছি।
×