ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আলিয়ঁসে গুরু-শিষ্য প্রাচ্য চিত্রকলা প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ০৬:১১, ২০ জানুয়ারি ২০১৯

আলিয়ঁসে গুরু-শিষ্য প্রাচ্য চিত্রকলা প্রদর্শনী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শিল্প সৃজনের তাগিদে এক আঙিনায় জড়ো হয়েছেন তিন শিল্পী। সেই সুবাদে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে গড়ে তুলেছেন শিল্পচর্চার প্রতিষ্ঠান ওরিয়েন্টাল পেইন্টিং স্টুডিও। সেখানেই চলে তাদের আঁকাআঁকি। চিত্রকর্ম চিত্রণের পাশাপাশি স্টুডিওতে ঘটে তাদের ভাবের আদান-প্রদান কিংবা পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া। একে অপরের সাহায্য নিয়ে ধাবিত হয় শিল্পিত পথযাত্রা। সে যাত্রায় আবার এই তিন শিল্পীর মাঝে রয়েছে গুরু-শিষ্যর সম্পর্ক। গুরু মলয় বালার দুই শিষ্য হলেন জাহাঙ্গীর আলম ও অমিত নন্দী। তাদের সেই স্টুডিওতে চিত্রিত চিত্রকর্মগুলো এখন ঝুলছে ধানম-ির আলিয়ঁস ফ্রঁসেস দো ঢাকার লা গ্যালারিতে। শিল্পীত্রয়ীর একগুচ্ছ ছবি নিয়ে এখানে চলছে প্রদর্শনী। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া যৌথ এ প্রাচ্য চিত্রকলা প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘গুরু-শিষ্য : শিষ্য-গুরু’। প্রদর্শনী প্রসঙ্গে কথা হয় চিত্রকর জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে। জনকণ্ঠকে এই শিল্পী বলেন, মূলত আমরা তিনজনই প্রাচ্য চিত্রকলানির্ভর ছবি আঁকি। সেই সূত্র ধরেই গড়ে উঠেছে আমাদের শিল্পিত সম্পর্ক। সেই সম্পর্কের মাঝে আছে গুরু-শিষ্যর পরম্পরা প্রথা। চিত্রপটে আমাদের রং-তুলির আঁচড়ে প্রস্ফুটিত হয় হাজার বছরের বাংলার প্রাচ্যকলার সমৃদ্ধ ঐতিহ্য। প্রাচ্যকলার সেই ক্যানভাস রাঙাতে একে অপরের প্রতি বাড়িয়ে দেই সহযোগিতার প্রসারিত হাত। গুরুর সঙ্গে শিষ্যর মিথস্ক্রিয়ায় গড়ে আমাদের প্রাচ্যকলানির্ভর শিল্প-ভুবন। শিল্পের সেই ভুবনে বিনিময় হয় তিনজনের চিত্রকর্ম সৃজনের অভিজ্ঞতা। আমার সুনিপুণ রঙের ব্যবহারের সঙ্গে যুক্ত হয় মলয় বাংলার দক্ষ ওয়াশ টেকনিক এবং অমিত নন্দীর নান্দনিক রেখাচিত্র। ওরিয়েন্টাল পেইন্টিং স্টুডিওতে এভাবেই বিনিময় হয় আমাদের পারস্পরিক দক্ষতার। স্টুডিনির্ভর সেই শিল্পচর্চারই ফসল ‘গুরুÑশিষ্য : শিষ্য-গুরু’ শীর্ষক এই প্রদর্শনী। শুক্রবার বিকেলে পক্ষকালব্যাপী এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন প্রখ্যাত শিল্পী মনিরুল ইসলাম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন এবং শিল্পানুরাগী মিখাইল আই. ইসলাম। চিত্রকলা পরিস্ফুটনে তিন শিল্পীই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নন্দলাল বসু, বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় ও শওকাতুজ্জামানের শিল্পমানস দ্বারা বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত। তাঁদের আদর্শকে চেতনায় ধারণ করে চিত্রকলা ও সামগ্রিক শিল্প-সংস্কৃতি চর্চায় বিকশিত করেছেন নিজেদের মনন। সেই মননপ্রসূত শিল্পচর্চারই একটি সমৃদ্ধ স্পেস হচ্ছে ওরিয়েন্টাল পেইন্টিং স্টুডিও। সেই স্টুডিওতে মলয় বালা, জাহাঙ্গীর আলম ও অমিত নন্দী গুরু-শিষ্য পরম্পরারর আদর্শ মেনে চিত্রচর্চা করেন। চিত্রচর্চার সময় গুরু কখনও শিষ্য আবার শিষ্য কখনও গুরুর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। এই প্রদর্শনীটি সেই গুরু-শিষ্য পরম্পরা ধারার প্রথম আয়োজন। প্রদর্শনীতে ধ্রুপদী ঘরানা থেকে শুরু করে সমসাময়িক প্রাচ্যচিত্রকলার নানান অনুষঙ্গ বিদ্যমান। পৌরাণিক উপাখ্যানের নানা অনুষঙ্গ উপস্থাপিত হয়েছে প্রদর্শনীতে। চিত্রিত হয়েছে শকুন্তলা সিরিজচিত্র, রাধা-কৃষ্ণের চিরন্তন প্রণয় ও মহাভারতের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট থেকে শুরু করে বাংলার নিসর্গচিত্র। সেই সঙ্গে ক্যানভাসে উদ্ভাসিত হয়েছে বাংলা সাহিত্যের জ্যোতির্ময় নক্ষত্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ বিভিন্ন মনীষীর প্রতিকৃতি। পাশাপাশি সমসাময়িক সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক চিত্রের বাস্তবানুগ, বিমূর্ত, অর্ধ-বিমূর্ত, প্রতীকী এবং আধুনিক উপস্থাপনও রয়েছে প্রদর্শনীতে। প্রদর্শনীটি চলবে আগামী পয়লা ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সোম থেকে বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং শুক্র ও শনিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা এবং বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এ প্রদর্শনী। রবিবার সাপ্তাহিক বন্ধ।
×