ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সম্ভাবনাময় খাত ক্যাটারিং

প্রকাশিত: ০৭:১০, ২০ জানুয়ারি ২০১৯

সম্ভাবনাময় খাত ক্যাটারিং

সুমন কাজ করছেন একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে। নগর জীবনে চাকরির বেতন দিয়ে জীবনযাত্রার ব্যয় বহন বড়ই দায়। সুমন ভাবছিলেন, কী করে আয় বাড়ানো যায়। চাকরি বদলাবেন নাকি পাশাপাশি কিছু করবেন। নাকি চাকরি ছেড়ে দিয়ে শুধু ব্যবসা করবেন। কিন্তু ব্যবসায় তো ঝুঁকি আছে। তাই বন্ধু রকিবের সঙ্গে কথা বলেন এ বিষয় নিয়ে। সিদ্ধান্ত নিলেন, চাকরির পাশাপাশি ভিন্ন কিছু করার। দুই বন্ধুর সঙ্গে বিষয়টি শেয়ার করলেন। অবশেষে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলেন ক্ষুদ্র পরিসরে ক্যাটারিং ব্যবসা (খাবার প্রস্তুত ও সরবরাহ) শুরু করবেন। গড়ে তুললেন ‘ক্যাটারিং’ নামের প্রতিষ্ঠান। আস্তে আস্তে সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করলেন তারা। শুরুতে ১০ জনের খাবার, এখন শতাধিক মানুষের দুপুরের খাবার সরবরাহ করছেন সুমন ও তার বন্ধুরা। রাজধানীতে সুমনের মতো অনেকেরই এখন বাড়তি আয়ের উৎস ক্যাটারিং সার্ভিস। ফলে এ ব্যবসা এখন খুবই জনপ্রিয়। অনেকে আবার এটিকে একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে নিয়েছেন। নিজেরা স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানও হচ্ছে অনেকের। দেশের অর্থনীতিতে সংযোজিত হয়েছে ব্যবসায়িক ধারণা ‘ক্যাটারিং ব্যবসা’। স্বাস্থ্যসম্মত ও ঘরোয়া পরিবেশে রান্না করা খাবার অফিস কিংবা পার্টিতে সর্বোপরি আপনার দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়ে অনেকেই ভাল আয় করছেন। সম্ভাবনাময় এ খাতে শুধু নতুন উদ্যোক্তা নন, অনেক বড় প্রতিষ্ঠানও ঝুঁকছে আধুনিক ব্যবস্থায়। এমনকি অনেক গ্রুপ অব কোম্পানিও নিজ কর্মীদের খাবার সরবরাহ করছে। স্বল্প পুঁজিতে শুরু“করা যায় ক্যাটারিং বা খাদ্য সরবরাহের ব্যবসা। এমনকি নিজ বাড়িতে রান্না করে তা সরবরাহ করা সম্ভব। আবার বড় আয়োজনের মাধ্যমে কয়েক হাজার লোকের খাবার সরবরাহও করা যায়। এছাড়া মানুষের জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এবং ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সুবিধা থাকায় এ খাতের প্রসার দিন দিন বাড়ছে। আগামীতে ক্যাটারিং সার্ভিসকে একটি সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। ক্যাটারিং ব্যবসা বলতে মূলত খাবার প্রস্তুত ও সরবরাহের ব্যবস্থাকে বোঝায়। বিভিন্ন অফিস, আদালতে চুক্তির ভিত্তিতে প্রতিদিনের খাবার সরবরাহ করেন খাদ্য সরবরাহকারীরা। আবার বিয়েসহ বিভিন্ন বড় আয়োজনেও ক্যাটারিং সার্ভিস সেন্টারগুলো খাবার সরবরাহ করে। এ ব্যবসার মাধ্যমে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ অনেক বেশি। কারণ, বাড়িতে বসে এই ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব। তবে শহরাঞ্চলে বিশেষ করে উপজেলা, জেলা বা বিভাগীয় শহরে এই ব্যবসার সম্ভাবনা বেশি। এ ব্যবসা শুরু“করতে ঝুঁকির বালাই নেই। ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা হলে ব্যবসাটি শুরু করা সম্ভব। ব্যবসা শুরুর জন্য বেশি জিনিসপত্র কেনারও প্রয়োজন হয় না। ব্যবহার করতে পারেন বাসার রান্নার সামগ্রী, হাঁড়ি-কড়াই দিয়ে। তাই ক্রমাগতভাবে ক্যাটারিং ব্যবসার প্রসার ঘটছে। তবে ফাস্টফুড আইটেম তৈরি করতে চাইলে একটি ওভেন, ব্লেন্ডার, ডাইস ইত্যাদির প্রয়োজন হয়। এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য) বাস্তবায়নে ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে একটি হচ্ছে কর্মসংস্থান বাড়ানো। ক্যাটারিং সার্ভিসকে পেশা হিসেবে নিতে তরুণ প্রজন্ম বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছে। বর্তমানে ক্যাটারিংয়ের সঙ্গে জড়িত লোকের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটকের সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়ে গেছে। পাশাপাশি মানুষের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন হয়েছে এবং ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। তাই একটু বেশি খরচ করে হলেও মানুষ হাইজেনিক ফুড খেতে চায়। ফলে ক্যাটারিং সার্ভিসের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।
×