ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নৌকার সম্ভাব্য প্রার্থীরা ছুটছেন এমপিদের দরবারে

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ২১ জানুয়ারি ২০১৯

নৌকার সম্ভাব্য প্রার্থীরা ছুটছেন  এমপিদের দরবারে

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহীতে আওয়ামী লীগে এবার লেগেছে উপজেলা নির্বাচনের হাওয়া। বিএনপির কোন নেতা এখনও মাঠে না নামলেও মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। উপজেলা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে রাজশাহীর আওয়ামী লীগ নেতারা এবার সংসদ সদস্যদের মন জয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্যরা না চাইলে নৌকা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই এমন বিশ্বাস থেকেই মনোনয়ন প্রত্যাশীরা সংসদ সদস্যদের খুশি করতে তাদের কাছেই ধর্ণা দিচ্ছেন। গত সংসদ নির্বাচনের আগে রাজশাহীর বিভিন্ন আসনে এমপিদের সঙ্গে যাদের দূরত্ব ছিল তারাও এখন এমপির কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করছেন। তাদের খুশি করতে সময় ব্যয় করছেন। আর যারা আগে থেকেই এমপির গা ঘেঁষা হিসেবে পরিচিত, এখনও তারা সেই ধারা অব্যাহত রাখতে চেষ্টা করছেন। সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহীর ৬টি আসনের মধ্যে চারটিতেই পুরাতন এমপিরা আবারও নির্বাচিত হয়েছেন। একটিতে এসেছেন নতুন মুখ। এই ৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে একটি রাজশাহী সদর আসন। শহরের এই আসনটিতে কোন উপজেলা নেই। বাকি ৫টি আসনে রয়েছে ৯টি উপজেলা। এই নয় উপজেলা নিয়ে এখন তৎপর আওয়ামী লীগ নেতারা। বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেয়া না নেয়া নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত না হওয়ায় নেতাদের উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কোন কর্মকা- নেই। তাছাড়া, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর হতাশ বিএনপি নেতারা উপজেলা নির্বাচনে আগ্রহও হারিয়েছে। কিন্তু স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা প্রতিটি উপজেলাতেই এখন ব্যস্ত মনোনয়ন নিয়ে। প্রতিটি উপজেলাতেই প্রত্যাশীরা দৌড়াচ্ছেন মনোনয়নের আশায়। আওয়ামী লীগ ছাড়াও অঙ্গ সংগঠনের নেতারাও এই দৌড়ে সমান গতি রেখেছেন। প্রতি উপজেলা একটি চেয়ারম্যান ও দুজন ভাইস চেয়ারম্যান পদের জন্য মনোনয়ন দৌড় শুরু করেছেন কমপক্ষে দুই থেকে দেড় ডজন নেতা। সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিতরাও রয়েছেন এবার উপজেলা চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দৌড়ের কাতারে। উপর মহলে যার যেখানে পরিচিতি আছে সেদিকে তো যোগাযোগ রাখছেনই, সেই সঙ্গে স্থানীয় এমপিও যাতে বিপক্ষে না যায় সেই চেষ্টাও অব্যাহত রেখেছেন। অতীতের উপজেলা নির্বাচনগুলোর বিশ্লেষণে দেখা যায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্থানীয় এমপিদের পছন্দের লোকজনই দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন। সেই ধারা এবারও থাকতে পারে এমন ভাবনা থেকে সম্ভব্য প্রার্থীরা রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নেমেছেন এমপিদের খুশি করতে। উপজেলায় এরই মধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাশীর অনেকেই পোস্টার-ফেস্টুনে ছেয়ে দিয়েছেন। এসব পোস্টার- ফেস্টুনে জায়গা পেয়েছে স্থানীয় এমপিদের ছবিও। অনেকেই এমপিকে অভিনন্দন জানিয়েও পোস্টারিং করেছেন। চলছে ফেসবুকেও প্রচার। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই রাজশাহীর সব আসনেই স্থানীয় অনেক নেতার দূরত্ব তৈরি হয় এমপিদের সঙ্গে। গোদাগাড়ী, তানোর, মোহনপুর, পবা, বাগমারা, দুর্গাপুর, পুঠিয়া, বাঘা, চারঘাট উপজেলার প্রভাবশালী নেতার অনেকেই এমপিদের বিপক্ষে অবস্থান নেন। অনেক উপজেলায় এমপিদের সঙ্গে নেতাদের দূরত্ব প্রকাশ্যেই দেখা যায়। যদিও সংসদ নির্বাচনের আগে সবখানেই নৌকার পক্ষেই মাঠে নামেন নাখোশ নেতারাও। তবে সূত্র বলছে, পূর্বের বিরোধের জের রয়েছে অনেকেরই মনে মনে। এদিকে, বিগত সময়েও যারা এমপির পাশে থেকেছেন তারা এবারে আশাবাদী হয়েছেন মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে। পুরনো আস্থার সূত্র ধরেই উপজেলা নির্বাচনে এমপির সমর্থন পাবেন এমন আশায় বুক বেধেছেন অনেকেই। তবে, এক্ষেত্রেও রয়েছে প্রতিযোগিতা। কারণ সব উপজেলাতেই এমপির কাছের মানুষ হিসেবে পরিচিত একাধিক নেতা এবার মনোনয়ন প্রত্যাশী। অবশ্য রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান চঞ্চল বলেন, কে কার কাছের মানুষ বা দূরের মানুষ সেটি নয়, বরং তৃণমূলে কার অবস্থান ভাল সেটিই বড় বিষয়। তিনিই উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে দলীয় সমর্থন পাবেন। চঞ্চল বলেন, বড় দল হিসেবে সবখানেই আমাদের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকবে একথা সত্য। তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে থাকবে সবাই। আর উপজেলার এই মনোনয়নের ক্ষেত্রে উপজেলা কমিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। মূলত, উপজেলা থেকে আসা তালিকার ওপর ভিত্তি করেই জেলা কমিটি মতামত দেবে। তার পর আছে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিষয়। কাজেই প্রার্থী মনোনয়নে তৃণমূলের মতামতই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে জানান এই নেতা।
×