ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বরিশালে সেচ সঙ্কটে ৩৭ বোরো ব্লকের জমি

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ২১ জানুয়ারি ২০১৯

 বরিশালে সেচ সঙ্কটে ৩৭ বোরো ব্লকের জমি

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ জনগুরুত্বপূর্ণ দুটি খালের মাত্র আট কিলোমিটার অংশ খনন না করায় পানির অভাবে বিগত তিন বছর ধরে অনাবাদি অবস্থায় পড়ে রয়েছে অর্ধশতাধিক বোরো ব্লকের প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমি। এতে বোরো চাষের ওপর নির্ভরশীল এসব ব্লকের আওতাধীন কয়েক হাজার চাষী পরিবার চরম খাদ্য সঙ্কটে পড়েছেন। জরুরী ভিত্তিতে ওই খাল দুটি খননের জন্য ভুক্তভোগী চাষীরা উর্ধতন কর্মকর্তা ও প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। ঘটনাটি জেলার গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর, কমলাপুর, বাঘমারা ও ব্রাহ্মণগাঁও গ্রামের। সরেজমিনে ওইসব এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, কমলাপুর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পালরদী নদীর শাখা আমানতগঞ্জ নদীতে পাকিস্তান আমলে জাহাজ ও স্টিমার চলাচল করত। নদীকে ঘিরেই ওই এলাকায় গড়ে উঠেছিল সুবিশাল আমানতগঞ্জ বাজার। ওই নদীর প্রশাখায় রয়েছে একাধিক খাল। কালের বির্বতনে প্রবীণ ব্যক্তিদের কাছে সেসব আজ কেবলই স্মৃতি। সূত্রমতে, একসময়ের ভয়ঙ্কর পালরদী নদীতে পানির প্রবাহমান কমে আসার সঙ্গে সঙ্গেই তার শাখা আমানতগঞ্জ নদীটি এবং ওই নদীর প্রশাখা খালগুলো বিলীন হতে থাকে। বর্তমানে এটি যে কোন দিন নদী ছিল কিংবা এ নদী দিয়ে জাহাজ ও স্টিমার চলাচল করছে তার কোন অস্তিত্ব নেই। দেখলেই মনে হয় এটি কোন ডাঙ্গা। উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের কমলাপুর, বাঘমারা, ব্রাহ্মণগাঁও ও খাঞ্জাপুর গ্রামের সত্তোরর্ধ একাধিক প্রবীণ ব্যক্তি বলেন, বোরো চাষের ওপর নির্ভরশীল তাদের ইউনিয়নের চাষীরা দীর্ঘদিন থেকে পালরদী নদীর শাখা আমানতগঞ্জ নদীর প্রশাখা বাঘমারা-কমলাপুর ও ইল্লা খালের পানি দিয়ে ওইসব গ্রামের প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে বোরো মৌসুমে চাষাবাদ করে আসছিলেন। দীর্ঘদিনেও খাল খনন না করায় পলি জমে নদীর চেয়ে খালের উচ্চতা বেড়ে গেছে। এতে করে খালে পানি না থাকায় চাষাবাদ ব্যাহত হয়। কমলাপুর গ্রামের ব্লক ম্যানেজার এমদাদ হাওলাদার, শাহজাহান মুন্সী, মাহাবুব হাওলাদার ও হালান তালুকদার জানান, খালে পানি থাকার সুবাদে পার্শ্ববর্তী কালকিনি উপজেলার জুরগাঁও এলাকায় শাহজাহান মুন্সী নদীতে সেচ পাম্প বসিয়ে খালের মুখে বাঁধ দিয়ে বাঘমারা-কমলাপুর ও ইল্লার খালে পানি ফেলে তা স্থানীয় ব্লক ম্যানেজারদের কাছে বিক্রি করত। তার (শাহজাহান) কাছ থেকেই ব্লকের পরিধি অনুযায়ী প্রতি মৌসুমে ৭০ থেকে এক লাখ টাকা চুক্তিতে স্থানীয় ব্লক ম্যানেজাররা পানি ক্রয় করে খালে সেচ পাম্প বসিয়ে চাষীদের জমিতে পানি সরবরাহ করে আসছিল। ব্লক ম্যানেজার এমদাদ হাওলাদার বলেন, জুরগাঁও এলাকা থেকে পানি ক্রয়ের পর পুনরায় খালে সেচ পাম্প বসিয়ে জমিতে পানি সরবরাহ করে প্রতিবছর তাদের চরম লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে। তাই গত তিন বছর ধরে তারা বোরো ব্লক ছেড়ে দিয়েছেন। স্থানীয় চাষী বিএম নান্নু বলেন, বাঘমারা, কমলাপুর, ব্রাহ্মণগাঁও এলাকায় একমাত্র পানির অভাবে অনাবাদি থাকা ৩৭টি ব্লকের প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদ করতে হলে জরুরী ভিত্তিতে পালরদী নদীর শাখা আমানতগঞ্জ নদীর ভূরঘাটা পানের হাট থেকে বাঘমারা বেইলি ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার ও কমলাপুর-ইল্লা খালের বাঘমারা বড়দুলালী থেকে তুলাতলা বাজার পর্যন্ত তিন কিলোমিটার খাল খনন করার কোন বিকল্প নেই। স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য ও ব্লক ম্যানেজার সেলিম আহম্মেদ বলেন, দারিদ্র্য পীড়িত বাঘমারা, কমলাপুর, ব্রাহ্মণগাঁও এলাকার বাসিন্দারা বোরো চাষের ওপর নির্ভরশীল। গত তিনবছর পর্যন্ত এসব এলাকার ৩৭টি বোরো ব্লকের প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি থাকায় এসব এলাকার কয়েক হাজার চাষী পরিবারে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। জরুরী ভিত্তিতে জনগুরুত্বপূর্ণ খাল দুটি খননের জন্য তিনিসহ ভুক্তভোগী চাষীরা সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তা ও প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সেচ সঙ্কটে ৩৭টি বোরো ব্লকের আড়াই হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি থাকার সত্যতা স্বীকার করে গৌরনদী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মামুনুর রহমান বলেন, খালে পানি সঙ্কট রয়েছে। এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে খাল খননের কোন বিকল্প নেই। তিনি আরও বলেন, কৃষি বাঁচলে বাঁচবে দেশ। তাই বোরো চাষের প্রধান সমস্যা সেচ সঙ্কটের সমাধান করার জন্য খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের উল্লেখিত দুটিসহ উপজেলার জনগুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি এলাকার খাল খননের জন্য উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় আলোচনা করে উর্ধতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করে সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, মূলত কৃষকের দাবি, খালগুলো খনন করা। তারাও উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে এক্ষেত্রে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তবে সেচ সঙ্কটরোধে বিএডিসির খাল খনন কার্যক্রম আরও বৃদ্ধি করা উচিত বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
×