ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

দরিদ্রদের আইনী সহায়তা

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ২১ জানুয়ারি ২০১৯

দরিদ্রদের আইনী সহায়তা

কথায় বলে ‘জাস্টিস ডিলেইড, জাস্টিস ডিনাইড।’ বিচারের বাণী নীরবে-নিভৃতে কেঁদে মরে। বিলম্বিত বিচার না পাওয়ার শামিল। তদুপরি আইনের হাত নাকি অনেক লম্বা ও দীর্ঘতর, যার কূলকিনারা পাওয়া দুষ্কর। আমাদের দেশে বিশেষ করে দরিদ্র মানুষদের ক্ষেত্রে কথাগুলো শতভাগ প্রযোজ্য। প্রতিবছর প্রতিদিন কতশত মানুষের যে বিচারের প্রতীক্ষায় দিন গুজরান হয়, তার হদিস মেলে না। তবে আদালত প্রাঙ্গণে একটু কান পাতলেই তাদের হাহাকার, চাপা আর্তনাদ ও দীর্ঘশ্বাস শোনা যায়। পাশাপাশি এও সত্য যে, ব্রিটিশ আমলে প্রণীত এবং অদ্যাবধি অনুসৃত বিচারিক প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল ও সময়সাপেক্ষ; তদুপরি কোর্ট-কাছারি-পুলিশ, উকিল-মুহুরী, পেশকার-আর্দালি, সাক্ষীদের হাজিরা ও জিজ্ঞাসাবাদ- এ সবই নানা জট ও জটিলতায় ভারাক্রান্ত। পাশাপাশি সর্বনিম্ন স্তর থেকে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত পদে পদে ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়ম-অনাচারসহ দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ তো আছেই। এসব বহুল আলোচিত প্রেক্ষাপটে বিশেষ করে অসহায় গরিব মানুষদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অসহনীয় ভোগান্তি ও দুর্ভোগের অন্ত থাকে না। এমন অভিযোগও বিরল নয়, বিচারের আশায় আদালতে মামলা চলেছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। যে কারণে বাদী-বিবাদীর সর্বস্বান্ত হওয়া এমনকি মৃত্যুর খবরও দুর্লভ নয়। আর এর জন্যই বোধকরি গ্রামাঞ্চলে একটি কথা প্রচলিত আছে যে, তুমি যদি কাউকে চিরস্থায়ী শত্রু তথা সর্বস্বান্ত করতে চাও তবে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা ঠুুকে দাও- তা সে দেওয়ানি, ফৌজদারি যাই হোক না কেন? তবে আশার কথা এই যে, পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে ক্রমশ। আদালত প্রাঙ্গণ, বিচারিক প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা; সর্বোপরি আইন ও বিধির সংস্কার হচ্ছে আস্তে-ধীরে হলেও সময় ও চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে। কয়েকটি এনজিও তথা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আইনী সহায়তা দেয়ার জন্য কাজ করছে বিশেষ করে নারী ও শিশুদের জন্য। এতে অল্পবিস্তর কাজও হচ্ছে ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে। অপরাধীর শাস্তির পাশাপাশি ক্ষতিপূরণও পাওয়া যাচ্ছে। যার ফলে উপকৃত হচ্ছে বিচারপ্রার্থী। এর পাশাপাশি হতদরিদ্র ও অসহায়দের আইনী সেবা দিতে ২০০০ সালে গঠিত হয়েছে সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি। সাম্প্রতিক সংস্থাটি সরকারী আইন সহায়তা কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির পাশাপাশি গরিব সাধারণ মানুষের আস্থার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে ও হচ্ছে। বিশেষ করে সারাদেশের কারাগারগুলোতে যেসব অসহায় বন্দী, যাদের মধ্যে নারী-পুরুষ উভয়ই আছেন, দীর্ঘ ৫/৭/১০ বছর ধরে বিনা বিচারে কারাভোগ করছেন, তাদের জন্য দ্রুত আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মুক্তি অথবা জামিনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে সংস্থাটি। এর ফলে দীর্ঘদিন ধরে অসহায় কারাভোগী এবং তাদের পরিবার-পরিজন উপকৃত হয়েছেন। তবে এটি একটি নিয়মিত ও অব্যাহত প্রক্রিয়া, যা লিগ্যাল এইড কমিটিকে চলমান রাখতে হবে, যাতে করে গরিব-অসহায় মানুষদের সুবিচার সুনিশ্চিত করা সম্ভব হয়। কাজটি কঠিন ও সময়সাপেক্ষ সন্দেহ নেই। কেননা, মামলা জটসহ আদালত প্রাঙ্গণে বিচারক, আইনজীবী এবং পুলিশের স্বল্পতা রয়েছে। কেবল উচ্চ আদালতেই পাঁচ লক্ষাধিক মামলা বিচারাধীন। সরকার, আইন মন্ত্রণালয়, সর্বোপরি নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিও এসব সমস্যাসঙ্কট সম্পর্কে অবহিত। নতুন বিচারপতি নিয়োগসহ আইন-আদালতের সংস্কার প্রক্রিয়াও চলমান। অধুনা বিচারের পাশাপাশি পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেও সমঝোতার পথ খোঁজার চেষ্টা চলছে। এ সবই শুভ ও ইতিবাচক উদ্যোগ। দেশে সবার জন্য সুবিচার ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হোক, এটাই প্রত্যাশা।
×