ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অজয় দাশগুপ্ত

কোন্টা ভাঙছে, বিএনপি না কি ঐক্যফ্রন্ট?

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ২১ জানুয়ারি ২০১৯

 কোন্টা ভাঙছে, বিএনপি না কি ঐক্যফ্রন্ট?

কোনটা ভাঙছে? বিএনপি নাকি ঐক্যফ্রন্ট? ঐক্যফ্রণ্টের স্টিয়ারিং কমিটির সভা না হবার কারণে সবাই মনে করছেন ঐক্যফ্রন্ট এখন ভাঙার পথে। এই অনুমান অমূলক নয়। ড. কামাল হোসেন, আসম রব, কাদের সিদ্দিকী বা মান্নারা সুখের পায়রা। বিএনপির রাজনীতির মূলধারা বা আদর্শের সঙ্গে তাদের কোন যোগাযোগ নেই। নির্বাচনের আগে একটা জগাখিচুড়ি ঐক্য মানে এই না যেÑ তা আজীবন টিকবে। আমি এটা হলপ করে বলতে পারি এই ঐক্য হয়েছিল ভাঙার জন্য। প্রধানমন্ত্রী সোজাসাপটা বলেন বলে অনেকে তাঁকে পছন্দ করেন না। কিন্তু এখন যদি আপনি পেছন ফিরে তাকান আর তাঁর কথাগুলো আবার পড়েন দেখবেন তিনি যা বলতেন তাই আসলে সত্য। এই ঐক্য ছিল গদিলোভী আর ব্যক্তিহিংসা চরিতার্থ করার প্ল্যাটফর্ম। জনগণ সেটা জানে বলেই ভোটের বিষয়ে তারা সবকিছু দেখে শুনে বুঝেও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি। তাদের বোকা ভাবা ভুল। কোন কারণে কোন দুঃখে তারা আপদ মাথায় নিবে? রাজনীতিতে ঘাপলা বা ঘাপটি মেরে থাকলে এক দুবার সুবিধা পাওয়া যায়। কিন্তু সেটা চিরকালীন না। যারা ঢালাও আওয়ামী বিরোধিতা করেন তারাও স্বীকার করেন এই একমাত্র দল যাদের আসলে ভিত্তি মজবুত। তারা এও মানেন, এই দলের নেতা ত্যাগী কর্মী টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া সব জায়গায় আছে। তারা নিজেদের উৎসর্গ করতেও প্রস্তুত। যারা বাংলাদেশকে শুধু গদির জন্য ভালবাসে বা দেশ শাসনের অধিকারী মনে করে রাজনীতি করে তাদের দাপট বেশিদিন থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। বিশেষ পরিবেশে জেনারেল জিয়ার দল গঠন ও পাকিস্তান ভাঙার বদলা নেয়ার মুসলিম লীগ জাতীয় রাজনীতি এখন অচল। তাদের নেতার কাটা খালের সবচেয়ে বড় কুমির তার বড় পুত্র। এই গুণধর পুত্র সবার ওপর টাকা সত্য তাহার ওপরে নাই নীতিতে বিশ্বাসী। আয়েশী জীবন অথচ কাম নাই কাজ নাই, এমন মানুষের টাকা যোগানের জন্য তো চোরাপথ ধরতেই হয়। এবারের নির্বাচনে টাকা কামানোর নমিনেশন বিএনপিকে যে দ্বন্দ্ব আর সংঘাতে ফেলেছে তার মুক্তি ভাঙ্গন ছাড়া আর কোথায় হবে? প্রশ্ন হচ্ছে তাদের দল কি আদৌ ভাঙছে? খবরে যা দেখি তার সিকিভাগ সত্য হলেও মানতে হবে আর যাই থাক বিশ্বাস বলে আর কিছু নেই তাদের। আবদুর রহমান বিশ্বাস নামে তাদের যে রাষ্ট্রপতি ছিলেন তিনি নিজেই বিশ্বাসের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে গিয়েছিলেন। মরার আগে ভদ্রলোক বলেছিলেন, যে যাই বলুক বঙ্গবন্ধুই এদেশের মালিক। বুঝুন এবার। আপনি আওয়ামী লীগের চরম দুশমন তাদের দলের দ্রোহী বিদ্রোহী কোন নেতাকেও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে কটুকথা বলতে শুনেছেন? এমনকি মীরজাফর ঘাতক মোশতাকও মরার আগে খালি বলতেন আমার হাতে রক্তের দাগ নেই। এই হলো মৌল তফাৎ। বিএনপি বহুকাল থেকে এই সত্য না মেনে কেক কেটে বা জন্মদিন পালন করে যে পাপ জমিয়েছে এখন তার মূল্য চুকাচ্ছে তারা। ঐক্যফ্রন্টও মূলত বিশ্বাসঘাতকদের একটা জোট। যারা নানা কারণে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার প্রতি রেগে আছে তারাই একত্রিত হয়েছে। তাদের ধারণা ছিল তারা মাঠে নামলেই পরিবেশ পাল্টে যাবে। মানুষ ভোট দিয়ে তাদের দল বা ফ্রন্টকে দেশ শাসনে নিয়ে আসবে। আমজনতার দোহাই পাড়া এসব নেতারা জানেন না আমজনতা সবসময় কার্যকরী হয় না। হলে দুনিয়ার ইতিহাস এভাবে বদলে যেতো না। তারা শক্তি বটে তারা নির্ণায়ক নয়। ফলে যে সুধি ও সুশীল সমাজ বা মধ্যবিত্তের সমর্থন দরকার সেটাতে তারা মনোযোগ দেয়নি। দিলেও পেত না। কারণ আপনি ঘাতকের সঙ্গে ঘুরবেন নীরব ঘাতক দেশের মেধা মগজ খাওয়া দুশমনদের পকেটে রাখবেন আর ভাববেন মানুষ মাথায় তুলে নাচবে এটা করতেন না। এখন শুনছি মির্জা ফখরুলের ওপর নাকি নাখোশ তারা। দলের কট্টরপন্থীদের ধারণা তিনি আপোসকামী। তার বদলে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নাম শুনছি। চৌধুরী সাহেব ভদ্রলোক হলেও ফখরুলের মতো পরিমিত নন। ফখরুল আর যাই হোক মহাসচিব হিসেবে তার দলের বা অন্য দলের যে কারও চাইতে এগিয়ে। এই আগুয়ান থাকার কারণ তাঁর পরিমিত কথা। সুন্দর করে বলা। জানতাম উগ্র বিএনপিদের এটা ভাল লাগার কথা না। কারণ তারা চায় রিজভীর মতো মুখ গোমড়া করে আবোল-তাবোল বলা কাউকে। যারা বড় বড় কথা আর অন্তসার শূন্য গর্জনে দলের বারোটা বাজাতে সময় নেবে না। মূল জায়গাটা স্বার্থের। আর সে কারণেই আসল কাজ করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। তিনি এদের মূল অপশক্তি আর উৎসে আঘাত করতে জানেন। এদের অবৈধ আয় উপার্জনসহ সুবিধা বন্ধ হবার কারণে একজন একজন করে দেশ সেবা, দলসেবা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। যেমন মওদুদ বা অন্যরা। আর যারা মনে করত ভুয়া ইমেজ কিংবা কথিত নেতাগিরির কারণে তারা অধরা তাদের সবাইকে ধরা খেতে হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার সফলতা। তাঁর দলের আবুল হোসেন হোক আর ব্যারিস্টার মওদুদ হোক কেউ ছাড় পায়নি। এ কারণে তারা শেষ বয়সে এখন ঘরে থাকতেই পছন্দ করছেন। আর বিএনপি তো কোন আদর্শের দল না। তাদের জাতীয়তবাদী মনোভাব আর হিটলারের উগ্র জাতীয়াতাবাদের তফাৎ কোথায়? এখন তা অচল মাল। দেশের যে উন্নতি অগ্রগতি তার সঙ্গে চলার নেতা প্রধানমন্ত্রী কিংবা সংসদে যাবার মানুষ আছে তাদের? থাকলে তারা কোথায়? সব মিলিয়ে হ-য-ব-র-ল এক পরিস্থিতির শিকার এই দল। যেটুকু জনপ্রিয়তা তার পেছনে কিছু অপশক্তি আর আমজনতা নামের নিরীহ মানুষ। যাদের কাছে যাহা বায়ান্ন তাহাই তিপান্ন। একদিন না একদিন তাদের ভাঙতেই হতো। বিষয়টা ড. কামাল হোসেন এসে ত্বরান্বিত করলেন মাত্র। সেদিক থেকে বলা যায় ঐক্যফ্রন্টই তাদের শেষ পেরেক ঠুঁকবে। খালেদা জিয়া কারাগারে। তাঁর জন্য সহানুভূতি জানানোর নেতাও কমে আসছে ধীরে ধীরে। তাদের বদ্ধমূল ধারণা তিনি এবং তাঁর বড় ছেলেই সর্বনাশের মূল। সঙ্গে আছে দীর্ঘকাল শাসনের বাইরে নিষ্ক্রিয় দলের ব্যর্থতা। এটা কোন রাজনৈতিক দলের জন্য শুভ হতে পারে না। দেশের কোন ইস্যুতেই তারা মানুষের কাছে যায়নি। যেতে পারেনি। মানুষ নিশ্চয়ই তা দেখেছে। বরং নাই নাই করেও বামরাই সে আলো জ্বালিয়ে রেখেছে এখনও। বিএনপি সময়ের উল্টোস্রোতে ভেসে আসা এমন এক দল যার আগাগোড়াই ছিল বা আছে স্ববিরোধিতায় পরিপূর্ণ। স্বাধীনতা মানে আবার জাতির পিতা মানে না। মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে চার নেতাকে মানে না। পতাকা ওড়ায় জাতীয় সঙ্গীত গায় কিন্তু দেশ মাটি মানে না। মানলেও তা বিতর্কিত। এমন দল নতুন প্রজন্ম নেবে না। তাই ভাঙ্গনের ভেতর দিয়ে শুদ্ধ হওয়াই তাদের ভবিষ্যত। সেটা না পারলে কি হবে তা কেবল সময়ই বলে দেবে। ঐক্যফ্রন্ট যেদিন বাজারে আসে সেদিনই মনে হয়েছিল গাছের পরিচয় ফলে। আর কামাল হোসেনের অভিব্যক্তি অধৈর্য মনোভাব কথাবার্তায় আরও নিশ্চিত ছিলাম খুব বেশিদিন তা টিকবে না। মূলত ভাঙবে বিএনপি আর ইতিহাস দেখে হাসবে মাত্র। এই বোধকরি ভবিতব্য। [email protected]
×