স্টাফ রিপোর্টার ॥ বদরুদ্দোজা শ্রাবণ। এই সময়ের তরুণ নির্মাতা ও উদ্যোক্তা। শৈশব থেকেই টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের প্রতি ভীষণ আগ্রহ থাকায় অন্যকিছু টানেনি তাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি সাহিত্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, দূরদর্শন চলচ্চিত্র এবং আলোকচিত্র বিষয়ে অধ্যয়ন করেছেন। অধ্যয়ন শেষে বন্ধুদের সঙ্গে টিভি নাটক নির্মাণ করেন। নাটক বিপণনে সাড়া না পেলেও এ বিষয়ে বেশ দক্ষতা অর্জন করেন। একটি বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেলে কাজের অভিজ্ঞতায় রয়েছে। বিভিন্ন অভিজ্ঞতার আলোকে ২০১৩ সালে তৈরি করেন দেশের প্রথম অনলাইন টেলিভিশন চ্যানেল ‘কেটিভি বাংলাদেশ’। বর্তমানে চ্যানেলটির সাবস্ক্রাইবার এক লাখ ৬০ হাজারের বেশি।
বদরুদ্দোজা শ্রাবণ ২০০২ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বেশ কিছু নাটক নির্মাণ করেন। তার রচিত ও পরিচালিত নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘নয় ছয় ভূতের গলি’, ‘শাটল ট্রেন’, ‘সাত নং চানখার পুল লেন’, ‘একের ক’, ‘সিস্টেম লস’ প্রভৃতি। ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত নির্মিত বিজ্ঞাপনচিত্রের মধ্যে ‘গ্লোরিয়াস ল্যান্ডস এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড’, ‘সী পালেস’ ও ‘কৃষিবিদ ওয়েস্ট ভিউ’ অন্যতম। ইউটিউবের জন্য নির্মিত অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘চিত্র বিচিত্র ও বৈচিত্র্যে বাংলাদেশ’। সাধারণ মানুষের অসাধারণ দক্ষতা, সফলতা, মজার কর্মকাণ্ড নিয়ে তৈরি হয়েছে অনুষ্ঠান। এসব অনুষ্ঠানের মধ্যে দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে ‘কাকের কথা বলা’, ‘মটর সাইকেল কসরত’, ‘পোষ মানানো টিয়া পাখি’, ‘সাপের খামার’, ‘জীবন্ত শিং মাছ খাওয়া’, ‘ছাই থেকে স্বর্ণ’ প্রভৃতি। সেলিব্রেটিদের উপস্থিতিতে সাধারণ মানুষের অবাক করা শারীরিক কসরত নিয়ে তৈরি করেন ‘সাবাস বাংলাদেশ’ নামের অনুষ্ঠান। দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে ‘কাঁচ খাওয়া’, ‘গরম তেলে হাত ডুবিয়ে পিয়াজি ভাজা’, ‘আগুন খাওয়া’, ‘চোখ দিয়ে ভার উত্তোলন করা’ ইত্যাদি। বাংলাদেশের কৃষি প্রযুক্তি, কৌশল ও সমস্যা সম্ভাবনা নিয়ে নির্মাণ করেন ‘খেত খামার ও সুফলা বাংলাদেশ’।
শ্রাবণের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার হওয়া বিভিন্ন কনটেন্টের বিষয়বস্তু প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সাফল্য। এ প্রসঙ্গে শ্রাবণ বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সাফল্য নিয়ে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। কারণ আমি মনে করি সমাজের ওপরের স্তরের যে মানুষের সফলতা প্রচারের ক্ষেত্রে মাধ্যমের অভাব হয় না। কিন্তু অনেকেই প্রান্তিক গোষ্ঠীর মানুষের কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। আমি উঁচুস্তরে প্রবেশাধিকার রাখি না তাই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর যাপিত জীবনই আমার নির্মাণের বিষয়বস্তু। এই স্তর মূলত মানুষের ক্রয় ক্ষমতার তারতম্য বিবেচনায় নির্ধারিত। তিনি বলেন, ইউটিউব আরও কিছুদিন রাজত্ব করবে। কিন্তু আমাদের দেশে কিছু অসাধু ব্যক্তির রাতারাতি খ্যাতি এবং অর্থের লোভে কুরুচিপূর্ণ অনুষ্ঠান নির্মাণ করছে। দুঃখের বিষয় কেউ কেউ সমালোচনার নামে সেসব বিষয়ে আরও প্রচার করছে। সেই সঙ্গে অন্যের ভিডিও চুরি করে নিজের চ্যানেলে বা ফেসবুক পেইজে চালানো এ প্লাটফর্মের অকাল বার্ধক্য টেনে আনবে। অনলাইন টেলিভিশন প্রসঙ্গে শ্রাবণ বলেন, সরকারী অনুমোদন প্রাপ্তির দীর্ঘসূত্রতার কারণে অর্থ লগ্নিকারীদের মধ্যে অনাগ্রহ তৈরি হয়েছে সেই সঙ্গে প্রচলিত স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো অনলাইন ভার্সনে প্যারালাল অবস্থান নেয়ায় নতুন কোন চ্যানেল শুধু অনলাইন ভার্সনে এসে টিকে থাকা কষ্টসাধ্য হবে। তবে কোন ভারজেঞ্জ মিডিয়া হিসেবে টেলিভিশন কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, কোন পথে হাঁটে সেটাও দেখার বিষয়। প্রযুক্তির পরিবর্তন ও সহজলোভ্যতা টেলিভিশনের রূপ প্রকৃতি বদলাবে, আর আমরা বর্তমানে কনভারজিং পিরিওড পার করছি। আশাকরি আমরা নতুন সূর্যের দেখা পাব।