ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ষষ্ঠ দিনে পাওয়া গেল দুটি লাশ, ট্রলার মালিক গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৪:৫৭, ২১ জানুয়ারি ২০১৯

 ষষ্ঠ দিনে পাওয়া  গেল দুটি লাশ, ট্রলার মালিক গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ মুন্সীগঞ্জের মেঘনা নদীতে ট্রলার ডুবির ছয় দিনের মাথায় দুই লাশ ভেসে উঠেছে। এদিকে ডুবে যাওয়া ট্রলারের মালিক জাকির দেওয়ানকে রবিবার দুপুরে গ্রেফতার করা হয়েছে। রবিবার সকালে দুর্ঘটনাস্থলের তিন কি.মি. উত্তরে গজারিয়া লঞ্চ ঘাটের কাছে এক পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়। দুপুরে দুর্ঘটনা স্থলের আধা কিলোমিটার দক্ষিণে মেঘনা নদীর চাঁদপুরের ষাটনলের কাছে অপর পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়। দুটি লাশই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার করে। লাশ দু’টি ফুলে ফেঁপে যাওয়ায় এগুলো শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে গজারিয়া লঞ্চ ঘাটের কাছে উদ্ধার হওয়া লাশটির মুখ বাঁধা ছিল এবং শরীরেও কাটাছেঁড়ার চিহ্ন রয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করে নৌ পুলিশের এসপি হুমায়ূন কবির জানান, সকালে একটি লাশ গজারিয়া লঞ্চ ঘাট এলাকায় ও অপরটি চাঁদপুরে যাটনল থেকে উদ্ধার করা হয়। তবে শনিবার রাতে স্বজনরা বাড়ি ফিরে যাওয়ায় লাশ দু’টি এখনও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। স্বজনদের খবর দেয়া হয়েছে। তারা পৌঁছানোর পর লাশ দু’টি এই সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। তবে একটি লাশ ট্রলারডুবির শ্রমিকের এটি প্রায় নিশ্চিত বলে পুলিশ মনে করছে। এদিকে মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর-গজারিয়া) খন্দকার আশফাকুজ্জামান জানিয়েছেন, ট্রলারের মালিক জাকির দেওয়ানকে নারায়ণগঞ্জের পঞ্চবটি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে মুন্সীগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আরফাতুল রাকিবের আদালতে (আমলী আদালত-৫) মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়। পুলিশ তার সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে। আদালত সোমবার রিমান্ড শুনানি দিন ধার্য করা হয়েছে। এর আগে গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বেঁচে যাওয়া শ্রমিক শাহ আলম গজারিয়া থানায় এ মামলা করেন। মামলার প্রধান আসামি মাদারীপুর জেলার শিবচর থানার হাজী শুকুর হাওলাদার কান্দি এলাকার মৃত করিম বেপারির ছেলে ট্রলারের সারেং মোঃ হাবিব (৫৫)। সে এখনও পলাতক। মামলার অপর আসামি তেলবাহী ট্যাঙ্কারের অজ্ঞাতনামা চালক। বেপরোয়াভাবে নৌযান চালিয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে প্রাণহানির অপরাধে ২৮০/৩০৪ এর (ক) ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও জানায়, গতকাল ৫ম দিনের মতো উদ্ধার অভিযান চালানো হলেও ট্রলারটির কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। চাঁদপুরের যাটনলের কাছে মেঘনায় নৌবাহিনী, বিআইডব্লিউটিএ, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ট্রলারটির সন্ধান চালায়। ফারার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) মেজর একেএম শাকিল নেওয়াজ ঘটনাস্থলে জানিয়েছেন, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দুটি লাশ উদ্ধার করেছে। তবে সকালে গজারিয়া লঞ্চ ঘাটের কাছে যে লাশটি উদ্ধার হয়েছে সেটির মুখ বাঁধা ছিল। তাছাড়া শরীরও ছিল কাটাছেঁড়া। এ লাশটি ডুবে যাওয়া ট্রলার শ্রমিকের বলে মনে হয় না। বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর মোজাম্মেল হক জানান, রবিবার চাঁদপুরের মেঘনা নদীর যাটনলের কাছে উদ্ধার অভিযান চালানো হয়েছে। তবে ট্রলারটির কোন সন্ধান কাল পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা জানিয়েছেন, শনিবার সন্ধ্যায় নিখোঁজদের স্বজন ও বেঁচে যাওয়া শ্রমিকরা বাড়ি ফিরে গিয়েছিল। তাদের স্থানীয়ভাবে ৫০ হাজার টাকার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। তবে লাশ উদ্ধারের খবরে তাদের কেউ কেউ আবার দুর্ঘটনাস্থলে ফিরে আসছে। জেলা প্রশাসকের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় লাশ দুটি তাদের গ্রামের বাড়ি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া সরকারী অনুদান হিসাবে প্রত্যেককে পাবনা জেলা অথবা সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক ২৫ হাজার টাকা প্রদান করা হবে। তবে আমরা স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ বা মালিক পক্ষের নিকট থেকে তাদের কিছু অর্থিক সহযোগিতার ব্যবস্থা করছি। এদিকে গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসাদ সাদী জানান, স্বজনদের খবর পাঠানো হয়েছে তারা ফিরে লাশগুলো শনাক্ত করতে পারলে যথাযথ নিয়ম মেনে সেগুলো হস্তান্তর করা হবে। আপাতত লাশগুলো মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখার ব্যবস্থা হচ্ছে। উল্লেখ্য গত সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ৪টার দিকে মুন্সীগঞ্জের মেঘনা নদীতে তেলের ট্যাঙ্কার ধাক্কায় ট্রলারটি মেঘনায় ডুবে যায়। এ সময় ট্রলারটিতে ৩৪ জন শ্রমিক ছিল। ১৪ জন সাঁতার কেটে তীরে উঠতে সক্ষম হলেও নিখোঁজ হয় ২০ শ্রমিক।
×