ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ওটা পরাজিতের মুখে ব্যর্থতার প্রলাপ ॥ ওবায়দুল কাদের

প্রকাশিত: ০৪:৫৭, ২১ জানুয়ারি ২০১৯

 ওটা পরাজিতের মুখে ব্যর্থতার প্রলাপ ॥ ওবায়দুল কাদের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ‘বাংলাদেশের নির্বাচন পারফেক্ট হয়নি’- জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের এমন মন্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, একেবারে নিখুঁত নির্বাচন বিশ্বের কোথাও হয় না। জাতিসংঘ বলছে নির্বাচনটা পারফেক্ট ছিল না, নিখুঁত ছিল না। আমার প্রশ্ন- নিখুঁতভাবে কোন দেশে নির্বাচন হয়েছে? কে বলতে পারবে আমার নির্বাচনটা একেবারে নিখুঁত? রবিবার রাজধানী মহাখালীর সেতু ভবন মিলনায়তনে সেতু বিভাগ ও সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠান শেষে এবং সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনকালে সাংবাদিকদের একাধিক প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন প্রশ্ন ছোড়েন। জাতিসংঘ মহাসচিবের আলোচনার মাধ্যমে বিরোধী অবসানের আহ্বান জানানোই সরকার কোন সংলাপের উদ্যোগ নেবে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, সব গণতান্ত্রিক দেশেই বিভিন্ন ইস্যুতে সংলাপ হয়। সংলাপ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার একটি অংশ। সংলাপ হতে পারে, এটা কন্টিনিউ করা উচিত। তবে এখন নির্বাচন নিয়ে সংলাপের কোন আবশ্যকতা নেই। সদ্যসমাপ্ত জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জাতিসংঘ সংলাপের কথা বলেনি। তবে নির্বাচনের আগে সংলাপ হয়েছে, ভবিষ্যতে যখন প্রয়োজন হবে তখন দেখা যাবে। আওয়ামী লীগের বিজয় সমাবেশ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মন্তব্যের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির নেতারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে দেশে-বিদেশে যে অপপ্রয়াস চালিয়েছেন, কিন্তু তাতে তারা ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি (ফখরুল) নির্বাচন নিয়ে যা বলছেন, তা পরাজিতের মুখে ব্যর্থতার প্রলাপ ছাড়া আর কিছুই নয়। তিন দিন আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের অনুপস্থিত থাকা নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তিনি অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে ঐক্যফ্রন্টের মিটিংয়ে যাননি, এটা কেন? আসলে কি তিনি অসুস্থ? এটা রাজনৈতিক অসুস্থতা। ওবায়দুল কাদের প্রশ্ন রেখে বলেন, নির্বাচন নিরপেক্ষ না হলে তিনি (ফখরুল) জিতলেন কিভাবে? তাকে আগে তার দল সামলাতে হবে, ঘরেই তো তিনি বিপদে রয়েছেন। সরকারকে তিনি বার বার আক্রমণ করছেন কেন? কারণ বিএনপি থেকে তাকে সরকারের দালাল বলা হচ্ছে। নির্বাচনে ভরাডুবির পর দলের মধ্যেও প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে পড়ে সরকারকে আক্রমণ করে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন বিএনপির মহাসচিব। মাঝে মাঝে আমাকেও। এই আক্রমণ কেন করছেন সেটা আমরা বুঝি। সরকারের দালাল অপবাদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বেশি বেশি করে সরকারবিরোধী বক্তব্য উনি দেবেন, এটাই স্বাভাবিক। ওবায়দুল কাদের মেগা প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়নের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো মেগা প্রজেক্টগুলোকে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা। এ বিষয়ে কারও কোন ধরনের গাফিলতি সহ্য করা হবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী দুর্নীতিকে আমরা প্রশ্রয় দেব না। দুর্নীতির বিষয়ে জিরো টলারেন্স দেখানো হবে। এ বিষয়ে কোন শৈথল্যে বা দুর্বলতা সহ্য করা হবে না। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮ বাস্তবায়নের জন্য সার্বিক নির্দেশনা প্রদান করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের বিশাল বিজয়ে দায়িত্ব পালনের চ্যালেঞ্জও বেড়ে গেছে। নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের জন্য টিম স্পিরিটের ভিত্তিতে টিমওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, ‘এ মন্ত্রণালয়ে কোন পারসেন্টেজ নয়, স্বচ্ছতার ভিত্তিতে সব কাজ করেছি। আপনারও স্বচ্ছতা ও সততার সঙ্গে কাজ করবেন। যাতে সরকারের কোন দুর্নাম না হয়, সরকারের সততার যে সুনাম রয়েছে তা যেন অব্যাহত থাকে। কারণ বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হলে স্বচ্ছ থাকতে হবে।’ এ সময় তিনি পদ্মা সেতুসহ মন্ত্রণালয়ের মেগা প্রজেক্টগুলোর কাজের অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি শতকরা ৬৩ ভাগ। এ মাসের শেষ সপ্তাহে জাজিরা প্রান্তে আরও একটি স্প্যান স্থাপন করা হবে। আর আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ে ট্যানেল বোরিং মেশিনের (টিএমবি) মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে কর্ণফুলী টানেলের খনন কাজ শুরু করা হবে। তিনি জানান, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের মূল সেতুর অগ্রগতি শতকরা ৭৩ ভাগ, নদী শাসন কাজের অগ্রগতি শতকরা ৫০ ভাগ ও মোট ২৬১টি পাইলের মধ্যে ১৯১টি পাইলের কাজ সম্পাদিত এবং আরও ১৫টি পাইলের আংশিক কাজ শেষ হয়েছে। মোট পিলার ৪২টি, এরমধ্যে ১৬টির কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে। ১৫টি পিলারের কাজ চলমান রয়েছে। মোট স্প্যান ৪১টি, ইতোমধ্যে ৬টি স্প্যান স্থাপন করা হয়েছে। ফলে এখন ৯০০ মিটার দৃশ্যমান হয়েছে। এছাড়া ১৭টি স্প্যান প্রস্তুত রয়েছে। আরও ১৮টি স্প্যানের প্রস্তুতি কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তিনি বলেন, ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেন বিশিষ্ট কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ট্যানেল নির্মাণে ব্যয় হবে ৯ হাজার ৮৮০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। খনন কাজের জন্য চীন থেকে সংগৃহীত ট্যানেল বোরিং মেশিনটির পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। আগামী মাসের মাঝামাঝিতে আনুষ্ঠানিকভাবে কর্ণফুলী ট্যানেলের খনন কাজ শুরু হবে। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত সার্বিক অগ্রগতি শতকরা ৩০ ভাগ। ২০২২ সালে ট্যানেলটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলেও তিনি জানান। মন্ত্রী জানান, যমুনা নদীর তলদেশে ট্যানেল নির্মাণ প্রকল্পের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে। আগামী ২৪ জানুয়ারি এ বিষয়ে পিইসি আহ্বান করা হয়েছে। এছাড়া ৮ হাজার ৯৪০ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্পের ভৌত কাজ এ পর্যন্ত ১ হাজার ২৮৯টি পাইল, ২৭০টি পাইল ক্যাপ, ৫৬টি ক্রস-বিম, কলাম ১৫৭ (সম্পূর্ণ) ও ৮২টি (আংশিক), ১৮৬টি আই গার্ডার নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। প্রথম ধাপের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়েছে এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের ক্ষতিপূরণ প্রদান চলমান রয়েছে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্পের বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইতালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড। র‌্যামসহ এর সর্বমোট দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। এর মধ্যে মেইন লাইন ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। এক্সপ্রেসওয়েটি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর-কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালীতে মিলিত হবে। প্রকল্পটি ৩টি ধাপে সম্পন্ন হবে। প্রথম ধাপ- শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বনানী, দ্বিতীয় ধাপ বনানী থেকে বড় মগবাজার, তৃতীয় ধাপ- বড় মগবাজার থেকে কুতুবখালী। সভায় অন্যদের মধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ও পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলামসহ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×