ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রিজার্ভ চুরি- জানুয়ারির মধ্যেই মামলা করা হবে ॥ অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৪:৫৭, ২১ জানুয়ারি ২০১৯

  রিজার্ভ চুরি- জানুয়ারির মধ্যেই মামলা করা হবে ॥ অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত আনতে এ মাসের মধ্যেই মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত আনতে কার বিরুদ্ধে মামলা হবে তা এখনও ঠিক করা হয়নি। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই মামলা করা হবে। রবিবার সচিবালয়ের বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত আনতে করণীয় বিষয়ক সভাশেষে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, মামলার জন্য আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় আছে। এজন্য আমাদের একজন আইনজীবী আর একজন মার্কিন আইনজীবী আছেন। তারা যৌথভাবে বসে মামলার সময় ঠিক করবেন। তিনি বলেন, রিজার্ভ চুরির ঘটনা ঘটেছে নিউইয়র্কে। তাই মামলা সেখানেই করতে হবে। আমাদের আইনজীবীরা এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন। তবে কার বিরুদ্ধে কে মামলা করবে তার সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। এছাড়া কয়জনকে আসামি, কয়জনকে বাদী ও কয়জনকে সাক্ষী করা হবে তা পরবর্তী ধাপে দুই আইনজীবী বসে ঠিক করবেন। রিজার্ভ চুরি সংক্রান্ত ফরাসউদ্দিনের তদন্ত রিপোর্ট আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করা হবে কি না এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের প্রয়োজন হলে করব, না হলে করব না। এছাড়া তদন্তে নেগেটিভ বা পজিটিভ কি আছে আমি কিছু জানি না। ঢাকায় বসে কে কি কমিটি করল, কে কি রিপোর্ট দিল, তা নিয়ে আলোচনার জন্য এখন সঠিক সময় নয়। অপর এক প্রশ্নের জবাবে মুস্তফা কামাল বলেন, মার্কিন আইনজীবীরা যে আমাদের পক্ষে লড়বে তাদের কমিশন অনেক বেশি। প্রতি আইনজীবীর একটি নির্দিষ্ট কমিশন থাকে। তবে এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এর আগে গত ডিসেম্বরে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছিলেন, রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত আনতে দুই প্রতিষ্ঠানকে আসামি করে মামলা করা হবে। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো ফিলিপিন্সের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন (আরসিবিসি) ও যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক। মূল আসামি আরসিবিসি হলেও এ ঘটনার সঙ্গে অনেক দেশ জড়িত। ’১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে সুইফট কোডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরি করে নেয় দুর্বৃত্তরা। এর মধ্যে ২ কোটি ডলার চলে যায় শ্রীলঙ্কা ও ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চলে যায় ফিলিপিন্সের জুয়ার আসরে। এ ঘটনার প্রায় একমাস পর ফিলিপিন্সের একটি পত্রিকার সংবাদের মাধ্যমে বিষয়টি বাংলাদেশ জানতে পারে। এ ঘটনায় পদত্যাগ করেন তৎকালীন গবর্নর ড. আতিউর রহমান। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন কর্মকর্তাকেই এখন পর্যন্ত শাস্তির আওতায় আনা যায়নি। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক জোবায়ের বিন হুদা মানি লন্ডারিং আইনে ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরির অভিযোগ এনে ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় সিআইডিকে। তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর সিআইডি এ পর্যন্ত ২০ বার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আদালতের কাছ থেকে সময় চেয়ে নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় সরকার গঠিত ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট এখনও প্রকাশ করা হয়নি। একইভাবে রিজার্ভ চুরির ঘটনা নিয়ে রিজাল ব্যাংকের ওপর করা তদন্ত রিপোর্টও প্রকাশ করেনি ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিএসপি (ব্যাংককো সেন্ট্রাল এনজি ফিলিপিন্স)। ফলে বিশ্বব্যাপী আলোচিত এ ঘটনার ভেতরের অনেক তথ্যই প্রকাশিত হচ্ছে না। এদিকে চুরি যাওয়া অর্থের মধ্যে এখন পর্যন্ত ফেরত এসেছে ১ কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার ডলার। বাকি ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার ফেরত পাওয়া যায়নি।
×