ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আসন্ন মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষা

২৭ জানুয়ারি থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি সব কোচিং সেন্টার বন্ধ

প্রকাশিত: ০৫:০০, ২১ জানুয়ারি ২০১৯

 ২৭ জানুয়ারি থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি সব কোচিং সেন্টার বন্ধ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আসন্ন এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরুর সাত দিন আগ থেকে শেষ পর্যন্ত (এক মাস) দেশের সকল কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখা হবে। রবিবার পরীক্ষার প্রস্তুতি উপলক্ষে সচিবালয়ে জাতীয় মনিটরিং ও আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির বৈঠক শেষে এ তথ্য জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলেছেন, এবার ২৭ জানুয়ারি থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হচ্ছে পরীক্ষা। পরীক্ষায় অংশ নেবে ২৫ লাখ ৭৩ হাজার ৮৫১ পরীক্ষার্থী। সভায় অন্যদের মধ্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ আলমগীর ছাড়াও জাতীয় মনিটরিং এবং আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির সদস্যরা সভায় উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে প্রশ্ন ফাঁস রোধে এ্যালুমিনিয়াম ফয়েল কাগজে বাঁধিয়ে প্রশ্নপত্র পাঠানোসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী। মন্ত্রী জানান, ‘এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে মোট ২১ লাখ ৩৭ হাজার ৩৬০ পরীক্ষার্থী। মাদ্রাসার দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে তিন লাখ দশ হাজার ১৭২ জন এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অংশ নিচ্ছে এক লাখ ২৬ হাজার ৩৭২ পরীক্ষার্থী।’ এবার যারা এসএসসি ও সমপর্যায়ের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে তারা ২০১৬ সালে জেএসসি (জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট) ও জেডিসি (জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। ওই বছর জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ২৪ লাখ ১২ হাজার ৭৭৫ জন। গত কয়েক বছর পাবলিক পরীক্ষায় কিছু বিষয়ের প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠলে সরকারের নানা পদক্ষেপে গত এক বছরে অনুষ্ঠিত কোন পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠেনি। গত বছর এসএসসির তিন দিন আগ থেকে পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর ফলে গত বছর এসএসসি, এইচএসসি, পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠেনি। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হচ্ছে এসএসসি ও সমপর্যায়ের পরীক্ষা। এর মধ্যে ২৫ ফেব্রুয়ারি হবে তত্ত্বীয় পরীক্ষা। আর ২৬ ফেব্রুয়ারি সঙ্গীত বিষয়ের এবং ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১২ মার্চের মধ্যে অন্য বিষয়ের ব্যবহারিক পরীক্ষা হবে। এবারও বহু নির্বাচনী (এমসিকিউ) অংশের উত্তর আগে দিতে হবে। পরে নেয়া হবে সৃজনশীল/রচনামূলক অংশের পরীক্ষা। বিগত বছরের ন্যায় এবারও পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই পরীক্ষা কক্ষে নির্ধারিত আসনে বসতে হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, যদি বিশেষ কোন কারণে কারও দেরি হয় সেই ক্ষেত্রে দেরির কারণ ও পরীক্ষার্থীর নাম ঠিকানা লিখে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। তবে এবার প্রত্যেকটি কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে প্রশ্নপত্র বক্সের এ্যালুমিনিয়ামের সিলগালা করা হবে। কে সেটি খুলে নেয় এটি নিশ্চিত করতেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দীপু মনি বলেন, পরীক্ষা কেন্দ্রের আশপাশে জারি থাকবে ১৪৪ ধারা। প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে গুজব রটনাকারী শনাক্ত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এবারও পরীক্ষার কেন্দ্রে কেউ মোবাইল ফোন নিতে পারবেন না। শুধু কেন্দ্র সচিব সাধারণ মানের একটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেই, এমন কেউ মোবাইল ফোন নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে আসন্ন পরীক্ষা থেকেই এ্যালুমিনিয়াম ফয়েল কাগজে বাঁধিয়ে প্রশ্নপত্র পাঠানো, উপকেন্দ্র বা ভেন্যু কেন্দ্র কমিয়ে দেয়াসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে পুরনো সিদ্ধান্তগুলোর পাশাপাশি এবার এ্যালুমিনিয়াম ফয়েল কাগজে বাঁধিয়ে প্রশ্নপত্র পাঠানো ও নিরাপত্তা স্টিকারযুক্ত খাম ব্যবহার করা হবে। ট্রেজারির বাইরে কোথাও প্রশ্নপত্র না রাখার (আগে ভোল্টেও রাখা হতো) সিদ্ধান্ত হয়েছে। বোর্ড কর্মকর্তারা বলছেন, এবার বিজি প্রেস থেকে ছাপানো প্রশ্নপত্র পাঠানোর সময় বাদামি রঙের প্যাকেটের বদলে এ্যালুমিনিয়াম ফয়েল পেপারে বাঁধিয়ে পাঠানো হবে। এবার নিরাপত্তা খামের পাশাপাশি নতুন ওই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগে বিজি প্রেস থেকে সিলগালা করে ট্রেজারিতে পাঠানো বাদামি রঙের প্যাকেটটি পরীক্ষার কেন্দ্রে পাঠানোর সময় অসাধু চক্র ব্লেড দিয়ে কেটে প্রশ্নপত্র বের করে ছবি তুলে নিত। এরপর পুনরায় সেটি সিলগালা করে দিত। কিন্তু এ্যালুমিনিয়াম ফয়েল পেপার একবার কেটে ফেললে পুনরায় জোড়া লাগানো যাবে না। ইতোমধ্যে এ্যালুমিনিয়াম ফয়েল পেপারও কেনা হয়েছে। উইলসের ৩০ শিক্ষককে দুদকের শোকজ ॥ সরকারী নীতিমালা ভঙ্গ করে কোচিংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এ্যান্ড কলেজের ৩০ শিক্ষককে কারণ দর্শাতে বলেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটির হটলাইন ১০৬ এ অভিযোগ পাওয়ার পর রবিবার এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুদকের সহকারী পরিচালক মোঃ জাভেদ হাবীব ও উপসহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়ার সমন্বয়ে গঠিত একটি দল অভিযান চালিয়ে অভিযোগের সত্যতা পায়। উল্লেখ্য, অভিযুক্ত ৩০ শিক্ষক ২০১৭ সালে কোচিং করাবেন না বলে অঙ্গীকার করেছিলেন। কিন্তু এবারও নীতিমালা ভঙ্গ করে শিক্ষার্থীদের কোচিং করতে বাধ্য করছেন। এ অনিয়মের সঙ্গে জড়িত এসব শিক্ষকের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করা হয়। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি নবম শ্রেণীর কয়েকজন শিক্ষার্থী বার্ষিক পরীক্ষায় একাধিক বিষয়ে ফেল করলেও একজন শিক্ষক তাদের দশম শ্রেণীতে ভর্তি করার উদ্যোগ নিয়েছেন বলে অভিযোগ পেয়ে দুদক দলের উপস্থিতিতে বিষয়টি তদন্তে এক কমিটি করা হয়।
×