ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

২৬ শীর্ষ ধনীর হাতে অর্ধেক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সমান সম্পদ ॥ অক্সফাম

বিশ্বে ধন বৈষম্য বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৪:২০, ২২ জানুয়ারি ২০১৯

বিশ্বে ধন বৈষম্য বাড়ছে

অক্সফামের সদ্য প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে বিশ্বে ধনী দরিদ্রের বৈষম্য বেড়েই চলেছে। এতে বলা হয়েছে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ২৬ বিলিওনিয়ারের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৩৮০ কোটি মানুষ বা মোটি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্ধেক লোকের সমান। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধনীদের ওপর ১ শতাংশ হারে কর আরোপ করলে তা দিয়ে সব স্কুলে না যাওয়া শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করা যাবে। -এএফপি। বিশ্বে ধন বৈষম্যের বিষয়টি সামনে এনেছে দাতব্য প্রতিষ্ঠান অক্সফাম। ডাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক সম্মেলন সামন রেখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে অক্সফাম জানায় বিশ্বের ৩৮০ কোটি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মোট সম্পত্তির সমান সম্পদ রয়েছে ২৬ শীর্ষ ধনীর কাছে। গত তিন বছরে মোট অর্ধেক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সম্পত্তি সমান কতজন শীর্ষ বিলিওনিয়ার সেই পরিসংখ্যানও এতে দেয়া হয়েছে। দেখা গেছে, ২০১৭ সালে সংখ্যাটি ছিল ২৬ জন, ২০১৬ সালে ছিল ৬১ জন। ২০১৮ সালের বিশ্বের ধনীরা আরও ধনী হয়েছে এবং দরিদ্ররা হয়েছে আরও দরিদ্র। সম্পত্তির এই ব্যবধানের কারণে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শীর্ষ ধনীদের আয়ের ওপর ১ শতাংশ সম্পদ কর আরোপ করলে বছরে ৪১৮ বিলিয়ন ডলারের একটি তহবিল তৈরি হবে। এই অর্থ দিয়ে স্কুলে যাচ্ছে না এমন শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা যেতে পারে এবং স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করার মাধ্যমে ৩০ লাখ মৃত্যু এড়ানো সম্ভব। অক্সফামের প্রতিবেদন অনুযায়ী গত বছর বিশ্বের ২ হাজার ২ শ’ বিলিওনিয়ারের সম্পত্তি বেড়েছে ৯ শ’ বিলিয়ন ডলার। দৈনিক বেড়েছে ২.৫ বিলিয়ন ডলার। ধনীদের সম্পত্তি বেড়েছে ১২ শতাংশ। বিপরীতে অর্ধেক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সম্পত্তি কমেছে ১১ শতাংশ। এর ফলে বিশ্বের অর্ধেক মানুষের সমান সম্পত্তি চলে গেছে বিলিওনিয়ারদের হাতে। প্রতিবেদনটিতে আরও অর্থনৈতিক মন্দার পর গত ১০ বছরে বিলিওনিয়ারের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৭ ও ২০১৮ সালের প্রতি দুদিনে একজন বিলিওনিয়ারের সংখ্যা বেড়েছে। যুক্তরাজ্যের ধনী ১০ শতাংশের তুলনায় দরিদ্রতম ১০ শতাংশ মানুষ উচ্চহারে কর দেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী আমাজনের প্রধান নির্বাহী জেফ বেজসের সম্পত্তি বেড়ে হয়েছে ১১২ বিলিয়ন ডলার। তার এই সম্পত্তির মাত্র ১ শতাংশ সাড়ে ১০ কোটি জনসংখ্যার দেশ ইথিওপিয়ার পুরো স্বাস্থ্য বাজেটের সমান। অক্সফামের প্রচার ও নীতি বিষয়ক পরিচালক ম্যাথিউ স্পেনসার বলেন, ‘চরম দারিদ্র্যে বাস করা মানুষের সংখ্যা কমে আসা গত শতকের শেষ অর্ধেকের বড় অর্জন। কিন্তু ক্রমবর্ধমান অসমতা ভবিষ্যতে এ বিষয়ে অগ্রগতিকে জটিল করে তুলছে। আমাদের অর্থনীতি যে পথে চলছে তাতে সম্পত্তি ক্রমবর্ধমানভাবে এবং অন্যায্যভাবে কয়েকজনের কাছে জমা হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, এটা এমন হওয়া উচিত নয়। সবাইকে বেঁচে থাকার সুযোগ দেয়ার পর্যাপ্ত সম্পদ রয়েছে পৃথিবীতে। সরকারগুলোর উচিত সম্পদ ও ব্যবসায়ীদের কর বাড়ানো। যাতে করে তারা জনগণের জীবন পরিবর্তনের জন্য উন্নত মানের সরকারী সেবা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখতে পারে। অনেক দেশ সরকারী সেবাখাতে বিনিয়োগ করতে ব্যর্থ হওয়ায় বৈষম্য তীব্রতর হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা না পাওয়ায় ১০ হাজার মানুষ মারা গেছে। ২৬ কোটি শিশু এখনও স্কুলে যেতে পারছে না, কারণ তাদের পিতা-মাতারা স্কুলের ফি, পোশাক ও বই কিনে দিতে পারছে না।
×