ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দেড় শতাধিক সবজি মিলবে এবারের মেলায়

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ২২ জানুয়ারি ২০১৯

দেড় শতাধিক সবজি মিলবে এবারের মেলায়

ওয়াজেদ হীরা ॥ ‘নিরাপদ সবজি করব চাষ, পুষ্টি মিলবে বার মাস’ প্রতিপাদ্যে আগামী ২৪ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানীতে শুরু হচ্ছে চতুর্থ বারের মতো জাতীয় সবজিমেলা। কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর আয়োজিত তিন দিনব্যাপী এই মেলায় দেশের নানা প্রান্তের দেড় শতাধিক প্রজাতির সবজি প্রদর্শন করা হবে। মেলায় নতুন ধরনের সবজি চেনা জানার পাশাপাশি দর্শনার্থীরা নিরাপদ সবজি কিনতেও পারবেন। রাজধানীর খামারবাড়ির কেআইবি চত্বরে অনুষ্ঠিতব্য এই মেলা শেষ হবে ২৬ জানুয়ারি শনিবার। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, উন্নত প্রযুক্তি আর বিভিন্ন জাত আবিষ্কারের ফলে দেশে সবজি উৎপাদন অনেক বেড়েছে। সরেজমিন উইংয়ের তথ্য মতে, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ১১ লাখ ৬৯ হাজার ৩২৬ হেক্টর জমিতে ২ কোটি ৬২ লাখ ৩০ হাজার ৯২৭ মেট্রিক টন সবজি উৎপাদন হয়। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ১১ লাখ ২৮ হাজার ৫৪২ হেক্টর জমিতে ২ কোটি ৩৫ লাখ ৪৩ হাজার ১৪১ মেট্রিক টন সবজি উৎপাদন হয়। ২০১৫-১৬ বছরে মোট সবজি উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৫২ লাখ ৬৪ হাজার মেট্রিক টন। দেশের দেড় শতাধিকেরও বেশি ধরনের সবজি চাষ হলেও ৩৫টি প্রধান সবজি বলা হয়ে থাকে। আর অপ্রধান সবজি হিসেবে ৪০টি চিহ্নিত করা হয়েছে। বাকিগুলো অভিহিত করা হচ্ছে স্বল্প পরিচিত সবজি হিসেবে। নতুন নতুন সবজি সাধারণ মানুষের মধ্যে পরিচিতি এবং সবজি উৎপাদনে খাওয়ার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি করতে ২০১৬ সাল থেকে জাতীয় সবজিমেলা করা হচ্ছে। জানা গেছে, এবার মেলায় ৬৯টি স্টল থাকছে। এর মধ্যে পাঁচটি প্যাভিলিয়ন থাকবে। একটি সরকারী প্যাভিলিয়ন হিসেবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের আর বাকি চারটি বেসরকারী প্যাভিলিয়ন থাকছে মেলায়। গত বছরের সবজি মেলায় ৮২টি স্টল অংশগ্রহণ করে। এর আগের বছর ২০১৭ সালে ৭৭টি স্টল অংশ নিয়েছিল। স্টলের সংখ্যা কেন কমে গেল সে প্রশ্নের জবাবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ঢাকা অঞ্চলের উপ-পরিচালক মোঃ রফিকুল ইসলাম ভূইয়া জনকণ্ঠকে বলেন, গতবছর আমরা আ. ক. ম. গিয়াস উদ্দিন মিলকি অডিটরিয়াম চত্বরে করেছিলাম এবার কেআইবিতে করছি। কেআইবিতে এর বেশি স্টল দিলে হাঁটার জায়গা থাকবে না। মেলায় নতুনত্বও থাকছে এবার জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা এ বছর একটি নিরাপদ সবজি স্টল করতে চাচ্ছি। যেখান থেকে দর্শনার্থীরা সবজি কিনতে পারবেন এবং সে নিশ্চিত থাকবে যে সবজিটি সম্পূর্ণ নিরাপদ। সবজি রফতানি এ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে এটি করা হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা। এছাড়াও এবারের সবজি মেলায় জাতভিত্তিক প্রদর্শন করা হবে। কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা নানা ধরনের সবজি খাই। একটির অনেক জাতের হয় হয়ত জানি না। বেগুন, আলু নানা ধরনের জাত রয়েছে। আমরা সব জাতই প্রদর্শন করতে চাই। দেড় শতাধিকের বেশি সবজি প্রদর্শিত হবে বলেও আশা করছেন তিনি। এদিকে, মেলাস্থল ঘুরে দেখা গেছে স্টল তৈরির কাজ চলছে পুরোদমে। কাঠ কিংবা পেরেক লাগানো। টুংটাং শব্দ পুরো কেআইবি চত্বর জুড়ে। সবজি মেলার গেটও তৈরি করা হচ্ছে নান্দনিকভাবে। কৃষি তথ্য সার্ভিসের ফার্ম ব্রডকাস্টিং অফিসার মোহাম্মদ গোলাম মাওলা জনকণ্ঠকে জানান, প্রতিবছরই সবজিমেলা মানুষের কাছে একটি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। এসব মেলায় সন্তানদের এমনকি নিজেরাও নতুন সবজির সঙ্গে পরিচিত হয়। ভাল মানের সবজি কেনাকাটা হয়। সবজির বীজ কিংবা পরিচর্যা বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করে মানুষ। এবারও মেলা আরও ভাল হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন এই কর্মকর্তা। জাতীয় সবজিমেলা উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকালে র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবে। পরে এক আলোচনা ও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক। এছাড়াও ভারপ্রাপ্ত কৃষি সচিব মোঃ নাসিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্শি, কৃষিবিদ আব্দুল মান্নান এমপি বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। সবজি মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কৃষি তথ্য সার্ভিস সবজির ওপর একটি প্রামাণ্য চিত্র দেখাবেন। একই সঙ্গে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. গোলাম মোর্শেদ আব্দুল হালিম। এছাড়াও সমাপনী অনুষ্ঠানের দিন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মোঃ আশরাফ আলী খসরু প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন বলেও জানা গেছে। এক প্রবন্ধে বলা হয়েছে, উন্নত দেশে মাথাপিছু প্রতিদিন সবজি গ্রহণে পরিমাণ দেশভেদে ৪ থেকে ৫ গুণ বেশি। ভিটামিনের পর্যাপ্ত প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণে বিভিন্ন প্রকার সবজি গ্রহণের কোন বিকল্প নেই। বিগত বছরগুলোতে সবজি চাষের আওতায় জমির পরিমাণ খুব বৃদ্ধি না পেলেও মোট উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। জানা গেছে, গত এক যুগে দেশের কৃষি জমির পরিমাণ না বাড়লেও সবজির জমির পরিমাণ বাড়াচ্ছেন কৃষকরা। দেশের কৃষক পরিবারগুলোর প্রায় সবাই কমবেশি সবজি চাষ করে। জমির পাশের উঁচু স্থান, আইল, বাড়ির উঠান, এমনকি টিনের চালাতেও এ দেশের কৃষকরা সবজির চাষ করছেন। এমনও দেখা গেছে, ফলবাগান ও বাড়ির রাস্তার পাশের উঁচু গাছের মধ্যেও মাচা করে সবজির চাষ করছেন অনেক কৃষক।
×