রশিদ মামুন ॥ রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রর প্রায় ৪০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। শুরুতে নানা প্রতিবন্ধকতায় থেমে থাকা বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণে এখন তিন শিফটে কাজ করা হচ্ছে। রাত দিনের ২৪ ঘণ্টা কাজ করে শুরুতে অপচয় হওয়া সময় পুষিয়ে নিতে চাচ্ছে বাংলাদেশ ভারত মৈত্রী বিদ্যুত কেন্দ্রর উদ্যোক্তারা। সরকারের দশ অগ্রাধিকার প্রকল্পর মধ্যে রামপাল একটি।
বিদ্যুত কেন্দ্রটির সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখন পর্যন্ত ৩৭ ভাগের বেশি কাজ শেষ হয়েছে। এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট ২০২০ সালের ডিসেম্বরে উৎপাদনে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিদ্যুত কেন্দ্রটিতে মোট ২০ হাজার পাইলিং করতে হচ্ছে। যার মধ্যে ১৫ হাজারের বেশি পাইলিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। বিদ্যুত কেন্দ্রটির ইউনিট-১ এর বয়লার এবং চিমনির কাজ চলছে। একই সঙ্গে কয়লা খালাস করার জন্য জেটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ইউনিট-১ এর সঙ্গে সমান্তরাল গতিতে চলছে ইউনিট-২ এর নির্মাণ কাজ। যে ইউনিটটি ২০২১ এর জুনে উৎপাদনে আসার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, শুরুতে পরিবেশবাদীদের বাধার মুখে কেন্দ্র নির্মাণে দীর্ঘ সময় নষ্ট হয়েছে। এখন সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে দিনরাত কাজ করা হচ্ছে। সুপারক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির কেন্দ্রটির অর্ধেক মালিকানা রয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) হাতে। এ ছাড়া বাকি মালিকানা রয়েছে ভারতের রাষ্ট্রীয় কোম্পানি ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (এনটিপিসি) হাতে।
কেন্দ্র নির্মাণে সুন্দরবনের ক্ষতি হবে পরিবেশবাদীদের এমন আন্দোলনের মধ্যে দীর্ঘ সমীক্ষা শেষে রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রের কাজ আবার শুরু করা হয়। শুরুতে ইউনেসকো রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রর বিষয়ে আপত্তি জানালেও পরে তা তুলে নেয়াতে কাজ শুরু করা হয়।
রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র সূত্র বলছে, বিদ্যুত কেন্দ্রের জমির মাটির মান ভাল না হাওয়াতে সেখানে পাইলিং বেশি করতে হচ্ছে। একই ক্ষমতার বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য পায়রাতে আট হাজার পাইলিং লাগলেও রামপালে প্রয়োজন হচ্ছে ২০ হাজার। এতে করে ১২ হাজার পাইলিং বেশি লাগার ফলে কেন্দ্রের নির্মাণ ব্যয় ও সময় দুটোই বাড়ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন রামপাল সরকারের ১০ অগ্রাধিকার প্রকল্পর মধ্যে একটি। ফলে কেন্দ্রটি বাস্তবায়নে সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি সেল পৃথকভাবে কাজ করছে।
২০১৮ সালের শুরুর দিকে রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এ ধরনের বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করতে তিন থেকে সাড়ে তিন বছর সময় প্রয়োজন হয়।
বিদ্যুত কেন্দ্রটি সুন্দরবন থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে নির্মাণ করা হচ্ছে। বিদ্যুত কেন্দ্রটি যাতে পরিবেশের কোন ক্ষতি না করে এজন্য সর্বাধুনিক সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। দুই বিলিয়ন বা ১৬ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে ভারতের এক্সিম ব্যাংক ঋণ সহায়তা দিচ্ছে।
এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রটির ২০১৫ সালে উৎপাদনে আসার কথা ছিল। কিন্তু দেশের পরিবেশবাদীদের আন্দোলনের মুখে তা পিছিয়ে যায়। এ সময় জাতিসংঘও বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণের বিষয়ে সরকারকে শর্ত দেয়। পরবর্তীতে আলোচনায় শর্ত সাপেক্ষে কেন্দ্রটি নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কথা জানায় সরকার। যদিও পরিবেশবাদীরা সরকারের দাবি প্রত্যাখ্যান করে। তবে নির্মাণ কাজ শুরুর পর জাতিসংঘ রামপাল নিয়ে আর কোন বিবৃতি দেয়নি। জাতিসংঘের নীরব ভূমিকার মধ্যে রামপাল নিয়ে দেশের পরিবেশবাদীরও আর তেমন সোচ্চার হয়নি।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে বিদ্যুত কেন্দ্রটি সুন্দরবনের কোন ক্ষতি করবে না। বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণে পরিবেশগত ঝুঁকি মোকাবেলায় বিশেষ উদ্যোগ নেয়ার কথাও বলছে সরকার এবং নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। বিদ্যুত কেন্দ্রটি আমদানি করা কয়লা দিয়ে চলবে।