এম শাহজাহান ॥ দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমার সীমান্তের ঘুনধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দশ প্রকল্পের অন্যতম এই প্রকল্প। সরকারী ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির প্রথম বৈঠকেই প্রকল্পটি দ্রুত শেষ করার লক্ষ্যে পরামর্শক নিয়োগের বিষয়টি অনুমোদন পাচ্ছে। আগামীকাল বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে প্রথমবারের মতো সরকারী ক্রয় ও অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির প্রথম বৈঠক হবে। জিওবি ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে প্রকল্পটি আগামী (তিন বছর) ’২২ সালের মধ্যে শেষ করে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার দেশ পরিচালনার সুযোগ পাওয়ায় অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে দোহাজারী হয়ে রামু-কক্সবাজার ও রামু হয়ে ঘুনধুম পর্যন্ত রেললাইন প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়িত হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দশ মেগা প্রকল্পের এই প্রকল্প দুই ধাপে বাস্তবায়িত হবে। প্রথম ধাপে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় ধাপে কক্সবাজারের রামু থেকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুনধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ করা হবে। এটি নির্মাণে প্রায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে কক্সবাজারবাসীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণ হবে। ডুয়েলগেজের এ লাইনটি স্থাপনের মধ্য দিয়ে পাল্টে যাবে এখানকার অর্থনৈতিক চিত্র। আমূল পরিবর্তন ঘটবে যোগাযোগ ব্যবস্থার। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে দেশী-বিদেশী পর্যটকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। রেললাইনটি নির্মাণ হলে যাতায়াতের সুবিধা, বনজ ও কৃষি পণ্যসামগ্রী পরিবহনের সুযোগ তৈরি হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে পর্যটন শহর কক্সবাজার রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে। শুধু তাই নয়, সৈকত নগরীর পর্যটন শিল্পের যেমন বিকাশ ঘটবে, তেমনি বিস্তৃত হবে সেখানকার ব্যবসা-বাণিজ্যও।
এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকতা জনকণ্ঠকে জানান, দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে ঘুনধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশ রয়েছে। দশ মেগা প্রকল্পের অন্যতম প্রকল্পটি। তিনি বলেন, এডিবির অর্থায়নে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আগামী ’২২ সালের মধ্যে শেষ করা সম্ভব। আর এ কারণে নতুন গঠিত ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির প্রথম বৈঠকেই প্রকল্পটি রাখা হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আশা করা হচ্ছে পরামর্শক নিয়োগের বিষয়টি অনুমোদন দেয়া হবে আশা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমার সীমান্ত সন্নিকটে ঘুনধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের ডিপিপি একনেকে অনুমোদন পায় গত ২০১০ সালের ৬ জুলাই। ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারবাসীর স্বপ্নের রেলপথের এই মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিলেন। গত বছর ১৬ সেপ্টেম্বর দেশী-বিদেশী ৩টি কোম্পানির সঙ্গে রেলপথ নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষর করে রেলওয়ে। এ প্রকল্পের জন্য প্রায় দেড় হাজার একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। প্রকল্পটি চালু হলে অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে কক্সবাজারবাসীর সামনে।
জানা গেছে, দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার এবং রামু থেকে ঘুনধুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটারসহ মোট ১২৮ কিলোমিটার নতুন ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ করা হবে। দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিমি রামু থেকে কক্সবাজার ১২ কিমি এবং রামু থেকে ঘুনধুম পর্যন্ত ২৮ কিমি রেলপথ নির্মাণের কথা রয়েছে। আর ১২৮ কিমি রেলপথে স্টেশনের সংখ্যা থাকছে ৯টি। এগুলো হলো সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়ার সাহারবিলের রামপুর, ডুলাহাজারা, ঈদগাঁও, রামু, কক্সবাজার, উখিয়া ও ঘুনধুম। এতে কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলক সিগন্যাল সিস্টেম ৯ ও ডিজিটাল টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম থাকবে ৯। এছাড়া সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ৪৩ মাইনর সেতু, ২০১ কালভার্ট, সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া এলাকায় একটি ফ্লাইওভার, ১৪৪ লেভেল ক্রসিং এবং রামু ও কক্সবাজার এলাকায় দুটি হাইওয়ে ক্রসিং নির্মাণের উল্লেখ রয়েছে প্রস্তাবিত প্রকল্পে।
জানা গেছে, প্রথমে মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণ করার এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৮৫২ কোটি ৩৪ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। কিন্তু পরে রেললাইনের নক্সায় (মিটারগেজ ও ব্রডগেজ দুটিই থাকবে) পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে একনেকের এক সভায় আগে প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ২৫৮ কোটি ৯০ লাখ ৩০ হাজার টাকা। তবে গত বছরের এপ্রিলে প্রকল্প ব্যয় আরও বেড়ে গেলে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা ঠিক করা হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আগামী ৩ বছরের মধ্যে প্রকল্পের ব্যয় শেষ করা না হলে ভবিষ্যতে ব্যয় আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণে প্রকল্পটি দ্রুত শেষ করে আনার তাগিদ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।