ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

নৃত্যাচার্য বুলবুল চৌধুরীর জন্ম শতবর্ষে বছরব্যাপী আয়োজন

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ২২ জানুয়ারি ২০১৯

নৃত্যাচার্য বুলবুল চৌধুরীর জন্ম শতবর্ষে বছরব্যাপী আয়োজন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নেমে আসে শীতের সন্ধ্যা। বাজে নূপুরের নিক্বণ। শুরু হয় অতিথি বরণে একঝাঁক নৃত্যশিল্পীর পরিবেশনা। নাচের তালে ভেসে বেড়ায় গানের সুর ‘ওই উজ্জ্বল দিন ডাকে স্বপ্ন রঙিন’। মুখরিত হয় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা প্রাঙ্গণ। খোলা বারান্দার নাচ শেষে অতিথিরা প্রবেশ করেন নাট্যশালার লবিতে। সবাই মিলে উপস্থিত হন গোলাপ আর গাঁদা ফুলের পাপড়ির মাঝে বেষ্টিত নৃত্যাচার্য বুলবুল চৌধুরীর প্রতিকৃতির সম্মুখে। এরপর নৃত্যাচার্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রতিকৃতির প্রদীপ প্রজ্বালন করেন অতিথিসহ সকলে। এই পর্ব শেষে মিলনায়তনে শুরু হয় কিংবদন্তি এই নৃত্যশিল্পীকে নিবেদিত আলোচনা। কথন শেষে দর্শকের নয়নে মুগ্ধতা ছড়িয়ে পরিবেশিত হয় এক ঘণ্টা ১০ মিনিটের নৃত্য পরিবেশনা। এভাবেই আনন্দ আয়োজনে সোমবার থেকে সূচনা হয় উপমহাদেশের বরেণ্য নৃত্য পরিচালক ও নৃত্যশিল্পী বুলবুল চৌধুরীর জন্মশতবর্ষ উদ্্যাপনের বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। যৌথ আয়োজনে উপমহাদেশের প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী বুলবুল চৌধুরীর জন্মশতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। প্রধান অতিথি হিসেবে বুলবুল চৌধুরীর জন্মশতবর্ষ উদযাপনে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী, প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী লায়লা হাসান ও মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন নৃত্যশিল্পী সংস্থার সভাপতি মিনু হক। অনুষ্ঠানে বক্তারা রাজধানীর ওয়াইজঘাটে অবস্থিত বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টস ভবনকে (বাফা) সংস্কার করার দাবি জানান। এ বিষয়ে খালিদ মাহ্্মুদ চৌধুরী বলেন, তিনি নৃত্যশিল্পীদের এ দাবির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করবেন। তিনি বলেন, বুলবুল চৌধুরী অবমূল্যায়ন ও অবহেলার শিকার হয়েছিলেন। কিন্তু প্রতিভাকে কখনও ধামাচাপা দেয়া যায় না, তার প্রমাণ বুলবুল চৌধুরী নিজেই। তাকে নতুন প্রজন্ম নতুন করে জানবে বলে তিনি আশা করেন। কামাল লোহানী বলেন, বাফার ভবনটির অবস্থা যেমন ভাল নয়, তেমনি এটাকে অনেকেই ব্যবহার করে নিত্যনতুন নাম দিয়ে ব্যবসা করছে। এ অবস্থার নিরসন হওয়া উচিত। লিয়াকত আলী লাকী বলেন, মাত্র ৩৫ বছরের জীবন ছিল তার। এর মধ্যে তিনি তার বড় মাপের ভাবনা, নিরীক্ষাধর্মী কাজ করে নৃত্যশিল্পকে সমৃদ্ধ করেছেন। মিনু হক বছরব্যাপী অনুষ্ঠানের বিবরণ দিয়ে বলেন, বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ, আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবসে নৃত্য উৎসব আয়োজন, নৃত্যনাট্য উৎসব, দেশব্যাপী নৃত্য প্রতিযোগিতা, ‘বুলবুল চৌধুরী’র নৃত্যধারা’ বিষয়ক সেমিনার, গুণী শিল্পীদে সম্মাননা প্রদান করা হবে। উদ্বোধনী আলোচনা শেষে ছিল নয়নজুড়ানো নৃত্য পরিবেশনা। মিনু হকের পরিচালনায় প্রথম পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসে পল্লবী ডান্স সেন্টারের শিল্পীরা। মুদ্রার সঙ্গে অভিব্যক্তির সম্মিলনে ‘তুমি নির্মল করো, মঙ্গল করো’ গানের নাচ করে একঝাঁক শিল্পী। সমবেত নৃত্যের আশ্রয়ে সজ্জিত ছিল পুরো পরিবেশনা পর্ব। কবিরুল ইসলাম রতনের পরিচালনায় দ্বিতীয় পরিবেশনাটি উপস্থাপন করেন নৃত্যালোক। ‘আকাশভরা সূর্য তারা’ গানের সুরে পরিবেশনা উপস্থাপন শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যশিল্পীরা। সাজু আহমেদেরে পরিচালনায় কত্থক নাচ করেছে কত্থক নৃত্য সম্প্রদায়ের শিল্পী। ওয়ার্দা রিহাবের পরিচালনায় ‘জাগো নারী জাগো’ গানের সুরে পরিবেশনা উপস্থাপন করে ধৃতি নর্ত্তনালয়ের শিল্পী। ফারহানা চৌধুরী বেবীর পরিচালনায় শাস্ত্রীয় আঙ্গিকের নাচের নান্দনিকতা ছড়িয়েছে বাংলাদেশ একাডেমি অফ ফাইন আর্টসের শিল্পীবৃন্দ। এম. আর ওয়াসেকের নৃত্য পরিচালনায় ‘বারো মাসে তের পার্বণ’ গানের সুরে পরিবেশনা উপস্থাপন করে নন্দন কলা কেন্দ্র। দীপা খন্দকারের পরিচালনায় ‘বসন্ত বাতাসে সই গো’ গানের তালে নাচ করেছে দিব্য সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীরা।
×