ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এবারের আসরের প্রথম সেঞ্চুরি

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ২২ জানুয়ারি ২০১৯

এবারের আসরের প্রথম সেঞ্চুরি

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ষষ্ঠ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি২০ আসরে একঝাঁক মহাতারকা। সারাবিশ্বে টি২০ ক্রিকেটে যারা ব্যাট হাতে বোলারদের জন্য সাক্ষাত যম, সেই তালিকায় ছিলেন ক্রিস গেইল, রাইলি রুশো, শহীদ আফ্রিদি, এভিন লুইস, এ্যালেক্স হেলস ও কাইরন পোলার্ডদের মতো ব্যাটসম্যানরা শুরু থেকেই খেলছেন। অনেকগুলো বড় ইনিংস তাদের কাছ থেকে আসলেও সেঞ্চুরির দেখা পাওয়া যায়নি। এমনকি আগে বিপিএলে সেঞ্চুরি হাঁকানোর অভিজ্ঞতা থাকা শাহরিয়ার নাফীস, মোহাম্মদ আশরাফুল ও সাব্বির রহমানরা খেলেছেন। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে চলতি আসরের প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকালেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান লরি ইভান্স। রাজশাহী কিংসের এ ৩১ বছর বয়সী ডানহাতি বিপিএলের ইতিহাসে নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে ১৩তম সেঞ্চুরিটি হাঁকিয়েছেন। আর পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই যে কোন পর্যায়ের টি২০ ক্রিকেটে প্রথম শতক এটি তার। সোমবার ঢাকায় বিপিএলের ফিরতি পর্বে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচেই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে ইভান্স করেন ৬২ বলে ৯ চার, ৬ ছক্কায় অপরাজিত ১০৪ রান। বিপিএলের শুরুর দিকে রান করতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছেন ব্যাটসম্যানরা। টি২০ ক্রিকেট যেন হয়ে উঠেছিল বোলারদের খেলা। ধীরে ধীরে ব্যাটসম্যানরা নিজেদের ফিরে পেতে শুরু করেন। এমনকি যারা রান পাচ্ছিলেন না তারাও ফর্মে ফিরতে শুরু করেন। দু’দিন আগে সিলেট সিক্সার্সের হয়ে সাব্বির ৫১ বলে ৮৫ রানের যে ঝড়ো ইনিংস রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে খেলেছেন সেটিই ছিল চলতি আসরে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। সেটি সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। সোমবার নতুন করে বিপিএল ফিরেছে ঢাকায়। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে সবগুলো দলই ৪/৫টি করে ম্যাচ খেলে যাওয়াতে উইকেটের সম্যক ধারণা পেয়ে গেছেন ক্রিকেটাররা। তবু দিনের প্রথম ম্যাচে রাজশাহী আগে ব্যাট করতে নেমে দলীয় ২৮ রানেই হারিয়ে ফেলেছিল ৩ উইকেট। বাজে শুরুর পর স্বাভাবিকভাবেই মনে হচ্ছিল রাজশাহীর দুর্বল ব্যাটিং লাইনআপ আর দাঁড়াতে পারবে না। কিন্তু সবার চিন্তাধারা পাল্টে দিলেন ইভান্স। আগের ৫ ম্যাচেই ব্যাট হাতে ব্যর্থ ছিলেন। প্রথম চার ম্যাচে ঢাকাপর্বে ১০, ১*, ০ ও ২ রান করেছিলেন মিডলঅর্ডারে (৪, ৫ কিংবা ৬ নম্বর পজিশনে) নেমে। তবে সিলেটপর্বে একমাত্র ম্যাচ খুলনা টাইটান্সের বিপক্ষে খেলে ওপেনিং করেছিলেন তিনি। ব্যাটিং পজিশন পরিবর্তনও কাজে আসেনি, কোন রান না করেই সাজঘরে ফেরেন। এ কারণেই ইভান্স বলেছেন, ‘সত্যি বলতে কি এখানে খুবই কঠিন সময় কাটিয়েছি। মনে রাখার মতো কোন ম্যাচ খেলতে পারিনি। কিন্তু আমি কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে গেছি। যখন এক কম রান করবেন এটাই একমাত্র করার থাকে। আমার পাশে কিছু ভাল লোক ছিল। আমি কোচদের কাছে গিয়ে বলেছি মাঝে ব্যাট করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছি, একটু ওপরের দিকে যেতে চাই। আমাকে সুযোগ দেয়া হয়েছে এবং এটার আমি উপযুক্ত নই। কারণ এখানে আসলে খেলার সুযোগ পাব এটাই কখনও আশা করিনি।’ তিনি আশা না করলেও, রাজশাহীর বিদেশী ক্রিকেটার কোটায় কোন বিকল্প না থাকায় ইভান্সের ওপর আরেকবার ভরসা রেখেছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। হয়তো এটাই তার শেষ পরীক্ষা ছিল। এবারও ওপেনিংয়ে নেমে তিনজন ব্যাটসম্যানকে ৬.১ ওভারের মধ্যেই বিদায় নিতে দেখেছেন। কিন্তু চতুর্থ উইকেটে হল্যান্ডের রায়ান টেন ডয়েশ্চেটকে সঙ্গী হিসেবে পেয়ে অন্য এক ইভান্স আবির্ভূত হলেন। খেললেন অসাধারণ একটি ইনিংস। চলতি বিপিএলের সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে আকর্ষণীয় ইনিংস উপহার দিলেন। এ বছর আফগানিস্তান প্রিমিয়ার লীগ (এপিএল) টি২০ এবং শারজায় টি১০ লীগ খেলে পরিচিতি পেয়েছিলেন ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে গ-িবদ্ধ ইভান্স। বিপিএলেও নিজেকে ভাল কোন ক্রিকেটার হিসেবে প্রমাণ দিতে পারছিলেন না। মূলত রাগবি খেলোয়াড় ছিলেন তিনি, কাঁধের ইনজুরির কারণে সেটি ছেড়ে ক্রিকেটে এসেছিলেন। তাই হয়তো কিছুটা সমস্যায় পড়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু একটি মাত্র ইনিংস খেলে সবার ধারণাই পাল্টে দিয়েছেন। আগের ৫ ইনিংসে যেখানে চারটিতেই তার ব্যাট থেকে দুই অঙ্কের রান আসেনি এবং আরেকটি ম্যাচে দশের বেশি করতে পারেননি, সেই ইভান্স এবার তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছুলেন। চতুর্থ উইকেটে ডয়েশ্চেটের সঙ্গে মাত্র ৮৩ বলে তার অবিচ্ছিন্ন ১৪৮ রানের জুটি রাজশাহীকে চলতি আসরে সর্বোচ্চ দলীয় ইনিংস পাইয়ে দিয়েছেন। এই জুটি বিপিএলের ইতিহাসে চতুর্থ উইকেটের সেরা। চলতি আসরের প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকান ইভান্স ৬১ বলে। পরে আরেকটি বলে চার হাঁকিয়ে তার ইনিংস শেষ হয় ৬২ বলে ৯ চার, ৬ ছক্কায় ১০৪ রানে অপরাজিত থেকে। এটি বিপিএলের ইতিহাসে ১৩তম সেঞ্চুরি। শুধু গেইলের ব্যাট থেকেই এসেছে ৫টি শতক। আর কোন ব্যাটসম্যান একাধিক সেঞ্চুরি হাঁকাতে পারেননি। বাকি ৮ সেঞ্চুরি এসেছে ডোয়াইন স্মিথ, আহমেদ শেহজাদ, শাহরিয়ার নাফীস, মোহাম্মদ আশরাফুল, এভিন লুইস, সাব্বির রহমান, জনসন চার্লস ও ইভান্সের ব্যাট থেকে। অর্থাৎ সবমিলিয়ে ৯ ব্যাটসম্যান করেছেন এ ১৩টি সেঞ্চুরি। ২০১২ সালে প্রথম বিপিএল আসরেই হয়েছে চারটি সেঞ্চুরি, ২০১৩ সালের দ্বিতীয় আসরে হয় ৩টি, ২০১৫ সালের তৃতীয় আসরে ১টি, ২০১৬ সালের চতুর্থ আসরে ১টি এবং সর্বশেষ পঞ্চম আসরে হয়েছে ৩টি সেঞ্চুরি। এবার ইভান্স করলেন প্রথম। আর উস্কে দিলেন গেইল, লুইস, রুশোসহ নতুন যোগ দেয়া এবি ডি ভিলিয়ার্সদের। হয়তো বিপিএল আরও কয়েকটি সেঞ্চুরি দেখার আশা করতেই পারে।
×