ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সম্ভাবনাময় নির্মাতা জায়েদ সিদ্দিকী

প্রকাশিত: ০৭:০৩, ২২ জানুয়ারি ২০১৯

সম্ভাবনাময় নির্মাতা জায়েদ সিদ্দিকী

তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা জায়েদ সিদ্দিকী। যুদ্ধ, সন্ত্রাস আর জঙ্গীবাদবিরোধী বার্তা নিয়ে তার নির্মিত ‘পূর্ণগ্রাসের কাল’ বলে দেয় এ তরুণ স্রোতে গা ভাসাবার নন। দেশকে ভালবেসে, উন্নত বিশ্বের ঝা চকচকে জীবনের মোহ কাটিয়ে দেশে ফেরা জায়েদ সিদ্দিকীর স্বপ্ন, চলচ্চিত্র ভাবনার কথা জানাচ্ছেন- পপি দেবী থাপা ডিপ্রজন্ম : জন্ম, বেড়ে ওঠা, পরিবার, শিক্ষা... জায়েদ : জন্ম সিলেটের মৌলভিবাজার জেলার বড়লেখায়, মা আর ছোট দুই ভাই নিয়ে পরিবার, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন নিয়ে স্নাতোকোত্তর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং দেশ ও দেশের বাইরে চলচ্চিত্র এপ্রিসিয়েশন কোর্সের মাধ্যমে চলচ্চিত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ততা। ডিপ্রজন্ম : পরিচালক হওয়ার ইচ্ছাটা যেভাবে এল... জায়েদ : চলচ্চিত্র এমন একটা শক্তিশালী মাধ্যম, যা সর্বস্তরের মানুষের কাছে কোন বাধা ছাড়াই পৌঁছতে পারে। চলচ্চিত্রের এই শক্তিটাই বেশি টানে। তাছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় চলচ্চিত্র এপ্রিসিয়েশন ও লিস্টারশায়ার কাউন্টির লাখবরা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ ফ্লিক্স ও বাংলাদেশ স্বাধীন চলচ্চিত্র আন্দোলনের কর্মী হওয়ার মাধ্যমে ওয়ার্ল্ড সিনেমার সঙ্গে পরিচিতি ঘটে। সেখান থেকেই চলচ্চিত্র নির্মাণের ইচ্ছা তৈরি হয়। ছোট বেলা থেকে মায়ের অনুপ্রেরণায় আঁকা-আঁকির প্রতি বেশি মনোযোগ তৈরি হয়। তখন থেকেই সৃজনশীল মাধ্যমে কাজের চিন্তা মাথায় আসে। ডিপ্রজন্ম : ইংল্যান্ডে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও দেশে কাজ করার কারণ জায়েদ : যে কোন অভিবাসী কমিউনিটির জন্য অন্য দেশে কাজ করা অনেক চ্যালেঞ্জিং। সেটা চলচ্চিত্রের মতো ব্যয়বহুল শিল্প মাধ্যমের ক্ষেত্রে আরও বেশি প্রযোজ্য। বিশেষ করে সুযোগ-সুবিধা এবং চলচ্চিত্রের বিভিন্ন অনুষঙ্গের বেলায়ও। সুতরাং নিজের দেশে স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাণ অনেক স্ট্রাগলিং হলেও অনেক সুবিধার ও আনন্দের। বিদেশ থেকে কেবল জ্ঞান আর দক্ষতা অর্জন করা অপেক্ষাকৃত সহজ। ডিপ্রজন্ম : বর্তমান বাংলা চলচ্চিত্রের অবস্থা... জায়েদ : বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় বাণিজ্যিক এবং স্বাধীন এই দুই ধরনের চলচ্চিত্র নির্মাণ অনেক বাধার সম্মুখীন। সেই বাধাগুলো বহুমুখী। এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ভাল ছবির লগ্নিকারক ও ভাল ছবির দর্শকের অভাব রয়েছে। এই দুটো তৈরির জন্য সবচেয়ে জরুরী হচ্ছে সাংস্কৃতিক পুনর্বিন্যাস। তার পরে অবকাঠামোর সঙ্কট তো রয়েছেই। তাছাড়া ভাল কন্টেন্টের একটা অভাব রয়েছে। প্রায় সব ক্ষেত্রেই নির্মাতাকে অনেক বেশি আপোস করতে হয় ছবি নির্মাণের ক্ষেত্রে। ডিপ্রজন্ম : পরিস্থিতি উত্তরণের উপায়... জায়েদ : গত দুই দশকে বেহাল অবস্থা থেকে আমাদের চলচ্চিত্র অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এখন অসংখ্য তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। আমাদের অগ্রজদের চলচ্চিত্র নির্মাণ এবং চলচ্চিত্র আন্দোলনের ফলে স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাণের বিষয়বস্তুতে মৌলিকত্ব ও বৈচিত্র্য আসছে। তাছাড়া ঢাকা, জগন্নাথ ও ত্রিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চলচ্চিত্র পড়ানো হচ্ছে এবং সরকারী চলচ্চিত্র নির্মাণ ইনস্টিটিউট দেরিতে হলেও তৈরি হওয়ার ফলে বেসরকারী উদ্যোগের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের চলচ্চিত্র সাক্ষরতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রতিনিয়ত শক্তিশালী হচ্ছে। এটাকে শুধুমাত্র রাজধানী ঢাকায় সীমাবদ্ধ না রেখে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। এছাড়া চলচ্চিত্রে সরকারী ও বেসরকারী পৃষ্ঠপোষকতা জরুরী। প্রতিটি শপিংমল নির্মাণের সময় ছোট করে হলেও যেন একটা সিনেমা হল থাকে সে বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তাহলে চলচ্চিত্রের সঙ্গে মানুষের সম্পৃক্ততা তৈরি হবে এবং চলচ্চিত্র নির্মাণ অনেক সহজ হবে। ডিপ্রজন্ম : আপনার স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘পূর্ণগ্রাসের কাল’- এর ভাবনা যেভাবে এল। জায়েদ : বিশ্বব্যাপী জঙ্গীবাদ, যুদ্ধ এবং সন্ত্রাসী আক্রমণ আমাকে আতঙ্কিত করত। নিজেকে নিরাপত্তাহীন মনে হতো। এই বাস্তবতার বাইরে আমাদের দেশ, শহরও নয়। আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক হেলাল মহিউদ্দীনের সঙ্গে আলোচনা এবং অভিনেতা জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় ভাবনার শুরু। ডিপ্রজন্ম : সিনেমাটি দেশ এবং দেশের বাইরে যেখানে যেখানে প্রদর্শিত হলো। জায়েদ : গত অক্টোবরে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে শিল্পকলা একাডেমির সার্বিক সহযোগিতায় ছবিটির উদ্বোধনী প্রদর্শনীর পরে এখন পর্যন্ত ১৭ তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, ৬ষ্ঠ শিলিগুড়ি আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য ও প্রামাণ্য চলচ্চিত্র উৎসব, ও নাইজেরিয়ার লাগোস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে। তা ছাড়া আগামী ২৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলচ্চিত্র বিভাগের বাৎসরিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হওয়ার কথা রয়েছে। ডিপ্রজন্ম : সমাজ পরিবর্তনে সিনেমার ভূমিকা... জায়েদ : যেহেতু চলচ্চিত্র খুবই শক্তিশালী মাধ্যম এবং মানুষের চিন্তা এবং মনোজগতে এর প্রভাব অনেক বেশি, সুতরাং সমাজ পরিবর্তনে সিনেমার ভূমিকা বহুমুখী। মৌলিক গল্পের সিনেমা, সমাজ বাস্তবতার সিনেমা একটি সমাজের মানসিক স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখতে খুবই জরুরী। ডিপ্রজন্ম : সিনেমায় প্রযুক্তির ব্যবহারে আন্তর্জাতিক পরিম-লে আমাদের অবস্থান... জায়েদ : আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রের সঙ্গে প্রযুক্তিতে আমাদের প্রতিযোগিতার সুযোগ কম, কেননা প্রযুক্তিতে আমরা বরাবরই পিছিয়ে। আমাদের টিকে থাকতে হবে ভাল কন্টেন্ট দিয়ে এটা প্রমাণ করে গেছেন সত্যজিত রায়, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটক, তারেক মাসুদরা। বর্তমানে এর বড় উদাহরণ অসমের রিমা দাস। এই জায়গার বিবেচনায় আমাদের বেশ কিছু মেধাবী চলচ্চিত্র নির্মাতা তৈরি হয়েছে, যারা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রের সঙ্গে পাল্লা দেয়ার সামর্থ্য রাখে বলে আমি বিশ্বাস করি। ডিপ্রজন্ম : একজন তরুণ নির্মাতার সিনেমা নির্মাণে সমস্যাগুলো কী কী? জায়েদ : মোটা দাগে সমস্যা বলতে চারটা এই মুহূর্তে আমার চোখে এসেছে। এক, ভাল কন্টেন্টের অভাব রয়েছে কেননা চলচ্চিত্রের জন্য ভাল কন্টেন্ট তৈরিতে চিন্তা ভাবনার ঘাটতি রয়েছে। দুই, ভাল টেকনিশিয়ানের অভাব, যার ফলে চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রক্রিয়া অনেক ব্যাহত হয়। তিন, অভাব রয়েছে ভাল পৃষ্ঠপোষকতার আর চার হচ্ছে, ছবি প্রদর্শনের সুযোগ খুবই কম। ভাল ছবি প্রদর্শন গুটিকয়েক বিশ্ববিদ্যালয় আর কয়েকটা বড় শহরে ব্যক্তি উদ্যোগে স্ক্রিনিংয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। ডিপ্রজন্ম : কেমন বাংলাদেশ দেখতে চান... জায়েদ : সুন্দর বাংলাদেশ, যেখানে স্বাধীনভাবে সবাই হাসবে, যা চিন্তা করতে চায় তা পারবে, মুক্তভাবে চলতে পারবে।
×