ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিক্রমপুরে প্রত্নখনন, বের হয়ে আসছে বল্লাল সেনের রাজপ্রাসাদ

প্রকাশিত: ০৭:৩১, ২২ জানুয়ারি ২০১৯

বিক্রমপুরে প্রত্নখনন, বের হয়ে আসছে বল্লাল সেনের রাজপ্রাসাদ

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, রামপাল থেকে ফিরে ॥ প্রাচীন বাংলার রাজধানী বিক্রপুরের বল্লাল বাড়িতে বল্লাল সেনের রাজপ্রাসাদ বের হয়ে আসছে! সোমবার দিনভর খননের মধ্য দিয়ে মুন্সীগঞ্জ সদরের রামপালের বল্লাল বাড়ি এলাকায় এসব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের আলামত পাওয়া যাচ্ছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ইট, ইটের টুকরো, মৃৎ পাথরের টুকরো, কাঠ-কয়লা। খবর পেয়ে সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা খননস্থল পরিদর্শন করেছেন। ছুটে এসেছেন অগ্রসর বিক্রমপুরের কর্ণধার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. নূহ-উল-আলম লেনিন। চীন ও বাংলাদেশ যৌথভাবে এই খনন কাজ করছে। বাংলাদেশের ঐতিহ্য অন্বেষণের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান ও চীনের অধ্যাপক চাই হোয়াং বোর নেতৃত্বে বড় একটি দল এই খনন কাজে অংশ নিচ্ছেন। অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ধারণা করা হচ্ছে বল্লাল বাড়িতেই রাজা বল্লাল সেনের রাজপ্রাসাদ ছিল। এই খননেই সেই প্রাচীন নিদর্শন বের হয়ে এসেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগে অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, খুঁজে পাওয়া এ সব নিদর্শন নিয়ে গবেষণা শুরু হবে। সেন বংশের রাজধানী ছিল বিক্রমপুর। খননের মধ্য দিয়ে সেন বংশের ইতিহাস ও তৎকালীন বাংলার রাজধানী বিক্রমপুরের ইতিহাস বৈজ্ঞানিকভাবে বের হয়ে আসছে। যা বিক্রমপুর তথা বাংলাদেশের ইতিহাসকে আরও সমৃদ্ধ করবে। সুফি মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, সন্ধান করে জানা গেছে বল্লাল বাড়িটি একটি দুর্গ। দুর্গটি বর্গাকার। প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য ২৭২ মিটার। দুর্গের চারদিকে যে পরিখা ছিল তা প্রায় ৬০ মিটার প্রশস্ত। রামপাল কলেজের ওই খানে এখনও একটি পরিখা দৃশ্যমান। অন্যগুলো ভরাট করে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর দোকানপাট নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, সেন বংশের রাজা বল্লাল সেন। তিনি লক্ষণ সেনের বাবা। বল্লাল সেনের নামে মুন্সীগঞ্জের একটি জায়গাও প্রচলিত আছে। জায়গাটির নাম এখনও ‘বল্লাল বাড়ি’। অন্যদিকে পাল বংশ ৭০০-১২০০ সাল বাংলায় রাজত্ব করেছে। কিন্তু তাদের রাজধানীর সন্ধান পাওয়া যায়নি। বল্লাল সেনের এ বাড়িটি একটি রাজবাড়ি। কিন্তু খনন না করার কারণে এর নিদর্শন পাওয়া যায়নি। সোমবার খনন কাজ শুরু করার মাধ্যমে সেই চিহ্ন পাওয়া যাচ্ছে। মূল মাটির ২-৩ ফুট নিচে প্রাচীন ইট, ইটের টুকরো, মাটির পাত্রের টুকরো, কাঠ-কয়লা পাওয়া যায়। প্রথমে খনন কাজ শুরু করা হলে প্রাচীন প্রতœ স্থানের নিদর্শন স্বরূপ এই জিনিসগুলোই পাওয়া যায়। পরবর্তীতে বিস্তৃত আকারে খনন করলে দেয়াল বেরিয়ে আসে। যেমনটা পাশর্^বর্তী রঘুরামপুরে ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলার নাটেশ্বরে পাওয়া গেছে। খনন কাজ চালিয়ে যেতে পারলে, বল্লাল সেনের রাজ প্রাসাদ, মন্দির, রাস্তা-ঘাট সব কিছু পাওয়া যাবে। তবে প্রয়োজন সকলের সহযোগী। ড. নূহ-উল-আলম লেনিন বলেন, প্রায় ৮শ’ বছর প্রাচীন বাংলার রাজধানী ছিল এই বিক্রমপুর। তাই এখানকার ইতিহাস অনেক সমৃদ্ধ। কিন্তু আরও কখনও এই রাজধানীর রাজপ্রাসাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এই সম্ভাবনা আমাদের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করবে। মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা বলেন, এই খননে প্রাচীন নিদর্শনের যে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এতে বিক্রমপুরের ইতিহাস সমৃদ্ধ ছাড়াও প্রতœনগরী মুন্সীগঞ্জে পর্যটকদের আরও বেশি আকৃষ্ট করবে।
×